বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মহাজোটে অস্থিরতা

প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫১ পিএম, ১৪ জুন, ২০১৬

স্টালিন সরকার : ক্ষমতাসীন মহাজোটে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিনা ভোটে মন্ত্রী-এমপি হওয়ায় সবাই যেমন মহাখুশি হয়েছিলেন, সেই মহাখুশির মহাজোট তথা ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে শুরু হয়ে গেছে এখন মহাগ্যানজাম। জোটের প্রধান শরীক আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষুদ্র শরীক জাসদের বিরুদ্ধে যেমন ‘হঠকারী’, ‘অতি বিপ্লবী’, ‘ভ-’ এবং ‘বঙ্গবন্ধুর খুনের ক্ষেত্র সৃষ্টির’ অভিযোগ তুলছেন, তেমনি জাসদও ১৪ দলের ঐক্য ধরে রাখার স্বার্থে নেতাদের মুখ বন্ধ করা এবং পেন্ডোরার বাক্স না খোলার দাবি জানাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি স্বল্পভাষী সৈয়দ আশরাফ জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনুকে মন্ত্রী করার ভুলের জন্য দলকে আজীবন প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে বলে আত্মোপলব্ধি প্রকাশ করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে জাসদ থেকে আহ্বান জানানো হয়Ñ‘সৈয়দ আশরাফকে থামান। না হলে ১৪ দলীয় জোটের ঐক্য পড়বে হুমকির মুখে।’
ক্ষমতাসীন দুই দলের মধ্যে যখন এমন উত্তেজনা, তখন তৃতীয় পক্ষ গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতারা আবার আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে ১৪ দলের শরীক জাসদ ’৭২-’৭৫-এ দেশের ২০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে। ঐতিহাসিক ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে এসে ১৪ দলীয় জোটের শরীকদের মধ্যকার বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এ বিরোধ পর্দার অন্তরালে হালুয়া-রুটির ভাগবাটোয়ারা নাকি অন্য কোনো কারণে তা সাদা চোখে দেখা যাচ্ছে না। তবে অস্থিতিশীল দেশকে স্থিতিশীল করতে গিয়ে মহাজোটের মধ্যে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে তা কতদূর গড়ায় কে জানে?
জাসদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক। এই দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু সরকারের তথ্যমন্ত্রী। এর আগে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জাসদের আরেক অংশের নেতা আ স ম আবদুর রবকে মন্ত্রী করেছিল। ২০১৫ সালের আগস্টে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনায় আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছিলেন, জাসদ বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্র তৈরি না করলে স্বাধীনতাবিরোধীরা কখনো বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না। ওই সময় আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ৪০ বছর আগে বাকশালী শাসনামলে জাসদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওই বিতর্ক ওঠার ১০ মাস পর আবারও এই বিতর্ক সামনে আনলেন স্বয়ং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে জাসদ নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে হাসানুল হক ইনু বলেছেন, যখন সাধারণ নাগরিকদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে তখন ১৪ দলের অভ্যন্তরে কোনো দলাদলি কাদা ছোড়াছুড়ি নয়। এই মুহূর্তে ঐক্য রক্ষা করা দরকার। ’৭২ থেকে ’৭৫-এর ঘটনা ইতিহাসের পাতায় চলে গেছে। এখন ইতিহাস চর্চার সময় না। ’৭৫ পূর্বাপর ঘটনা বিশ্লেষণ করেই জাসদ, আওয়ামী লীগ ঐক্যের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার ভিত্তিতেই ১৪ দল গড়ে উঠেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও শরীক জাসদের এই মুখোমুখির অবস্থানের সূত্রপাত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। টিএসসিতে অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের এক বর্ধিত সভায় সৈয়দ আশরাফ ১৪ দলীয় জোটের শরীক জাসদকে ‘হঠকারী’ সংগঠন আখ্যায়িত করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ক্ষেত্র তৈরি এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার জন্য দায়ী করেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নাম না নিলেও তিনি বলেন, জাসদের একজনকে মন্ত্রী করা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত। আওয়ামী লীগকে এর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে আজীবন। তিনি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলে ছাত্রলীগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জাসদ গঠন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিতর্কিত করা, বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার আগেই দেশকে ছিন্নভিন্ন করার চেষ্টা এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সমস্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য জাসদকে দায়ী করেন। এর আগে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্র তৈরির জন্য জাসদকে দায়ী করে দলটির ’৭২ থেকে ’৭৫ সালের কর্মকা- তদন্তের দাবি জানান। সে সময় এ নিয়ে সংসদে বিতর্ক হলে জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদল আত্মপক্ষ সমর্থক করে বলেন, ’৭২-’৭৫ জাসদের ভূমিকার ভুলের জন্য আমরা এখন কাফফারা দিচ্ছি। উল্লেখ ছাত্রলীগের একটি অংশ সেই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের প্রতিবাদে মুজিববাদ থেকে বের হয়ে সিরাজুল আলম খানের পৃষ্ঠপোষকতায় মেজর জলিল ও আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাসদ গঠন করেন। অতঃপর সেটা ইতিহাস।
জাসদ নিয়ে সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচারের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি অংশ দারুণ খুশি। তারা জাসদের ওপর বিক্ষুব্ধ একই কারণে যে ‘অযথাই’ দলটিকে ক্ষমতার ভাগ দেয়া হয়েছে। ক্ষমতার হালুয়া-রুটির ভাগ খেলেও ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ বিপদে পড়লে জাসদ ’৭২-’৭৫-এর ভূমিকায় যেতে পারে এমন আশঙ্কা তাদের। এ নিয়ে টিভির টকশোতে টকারুরা সরব আলোচনা করছেন। তারা যেন এতদিনে বিতর্কের মোক্ষম ইস্যু পেয়ে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ব্লগে এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক ও মতামত দেয়া হচ্ছে। সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের প্রতিবাদে গতকাল জাসদ (ইনু-শিরিন) মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আশরাফের ‘মুখের লাগাম’ টেনে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। ক্ষমতার বাইরে থাকা জাসদের (রব-মালেক) সভাপতি আ স ম আবদুর রব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বলেছেন, জাসদ নয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য আওয়ামী লীগই দায়ী। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুকে ক্রমাগত দলীয় গ-িতে আবদ্ধ করে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর আওয়ামী লীগের নেতারাই নতুন সরকার গঠন করেন।
জাসদ ইস্যুতে ১৪ দলীয় জোটে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাসদ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসনমন্ত্রীর মন্তব্য ব্যক্তিগত। এ বিষয়ে দলীয় বা সরকারি ফোরামে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জাসদ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে সমর্থন করে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ জাতীয় সংসদে কড়া ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীলকণ্ঠ, সমস্ত বিষ খেয়ে হজম করতে পারেন। উনি (শেখ হাসিনা) সমস্ত বিষ খেয়ে জাসদকে সংসদে এনেছেন। এখন যারা গুপ্তহত্যা করছে আমার মনে হয় ভব্যিষতে তাদেরও না জানি আবার সংসদে আনেন। সংসদ টেলিভিশনে আপনাকে বেশি দেখায়। সংসদ সদস্যদের মধ্যে আমরা যারা বিরোধী দলে আছি তারা সংখ্যায় ৪০ জন, আমাদের দেখায় না। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জাসদ করেন। সমস্যা হলো আমরা একসঙ্গে ছাত্রলীগ করেছি, যুদ্ধ করলাম। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু একই বিছানা থেকে উঠে উনি (ইনু) আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলেন। অস্ত্র ধরার বিনিময়ে কী হলো? আমাদের গুনে গুনে ২০ লাখ মানুষকে হত্যা করল। আজকে যে দুর্দিন-দুর্দশা, সেদিন যদি জাসদ গণবাহিনী করে নির্বিচারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বেছে বেছে হত্যা না করত তাহলে দেশে দুর্দিন আসত না। বঙ্গবন্ধুর মতো অত বড় জাতীয় নেতাকে আমরা হারাতাম না। এই যে হত্যা হলো, বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলো সেটার সুযোগ নিল কুচক্রী মহল। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যথার্থ বলেছেন যে এই ইনু সাহেবরা সংসদে ঢুকে এসব করছেন। জাতীয় সংসদে ফিরোজ রশিদের এ বক্তব্যের জবাব দেয়ার জন্য দ্বিখ-িত জাসদের একাংশের নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদল ফ্লোর চাইলে ডেপুটি স্পিকার সে সুযোগ দেননি। তবে হাসানুল হক ইনুকে মন্ত্রী করা নিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে জাসদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি সৈয়দ আনোয়ার হোসেন প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আপনি আপনার জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফকে থামান, তা না হলে ১৪ দলের ঐক্য থাকবে না। যখন জঙ্গিরা মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে, তখন সৈয়দ আশরাফ জাসদ থেকে মন্ত্রী করায় সরকারকে পস্তাতে হবে, এমন উক্তি করায় ১৪ দলের ঐক্য থাকবে কি থাকবে না সেটা দেখতে হবে। অতীতেও সরকারের মন্ত্রীরা জাসদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নিয়ে তা বন্ধ করেছেন। আশা করি তিনি এখনো সেই উদ্যোগ নেবেন। একই সমাবেশে জাসদ (ইনু-শিরিন) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বলেন, নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে জঙ্গিবাদকে মোকাবেলা করুন। তবে ১৪ দলের ঐক্য সুদৃঢ় থাকবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত দিতে হবে আওয়ামী লীগকেই। জাসদ আরেক অংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের হঠাৎ এমন বক্তব্য শুনে আমরা বিস্মিত হয়েছি। তিনি যা বলেছেন, তা সত্য নয়; বরং বিভ্রান্তিকর। তার বক্তব্যে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করা হয়েছে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাসদের মতপার্থক্য থাকতে পারে, আমাদেরও আছে। মতপার্থক্য মেনে নিয়েই জোট করা হয়েছে। যখন গুপ্তহত্যা চলছে, জঙ্গিবাদের তৎপরতা চলছে, সেই সময় ঐক্য আরও মজবুত করা দরকার। সৈয়দ আশরাফের এই সময় জাসদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট জাতীয় সংসদে জাসদের ’৭২ থেকে ’৭৫ সালের কর্মকা-ের তদন্তের দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ক্ষেত্র তৈরির জন্য জাসদ দায়ী। এর আগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে শেখ সেলিম বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা কখনও বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি এই গণবাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করত। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল রহস্য বের করতে হবে, কারা কারা জড়িত ছিল। তার বক্তব্যের সমর্থন জানিয়ে মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কয়েকজন নেতা জাসদকে তুলোধুনা করেন। এর জবাবে জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদল ১৯৭২-৭৫ সময়ে দলের ভূমিকা নিয়ে সংসদে বলেন, তারা এখন ওই সময়ের ভুলের ‘কাফফারা’ দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরোধিতার ওই অবস্থানের মূল্যায়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, চলার পথে বহু পদক্ষেপ নিতে হয়, কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক, এটা ইতিহাস বিচার করবে। তবে ১৪ দলের ঐক্যে কোনো ফাটল ধরার সম্ভাবনা নাকচ করে হাসানুল হক ইনু বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ও জাসদ নীতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ, আন্দোলন-নির্বাচন এবং সরকার পরিচালনায় আমরা একসঙ্গে আছি। আমরা মনে করি, এই লড়াইটা শেষ পর্যন্ত নেওয়ার জন্য ঐক্য দরকার। সেদিন এ বক্তব্য দিলেও সম্প্রতি কাউন্সিলে জাসদ ভেঙে গেলে হাসানুল হক ইনু ও মঈন উদ্দিন খান বাদল এখন আলাদা অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন।
ওই সময় বিএনপিও জাসদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলটির সে সময়ের মুখপত্র  ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ১৯৭২-৭৫ সালে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গণবাহিনী ও তাদের রাজনৈতিক সংগঠন জাসদ দায়ী। আর শেখ সেলিম ও বিএনপি নেতার বক্তব্যের জবাবে জাসদ প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলে, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দীর্ঘ তদন্ত, তদন্ত শেষে আদালতে দাখিলকৃত অভিযোগপত্র, সাক্ষীদের জেরা, আদালতের রায় ও পর্যবেক্ষণে কোথাও বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জাসদের সংশ্লিষ্টতার সামান্যতম বিষয় আসেনি। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যখন প্রধানমন্ত্রী ও ১৪ দল নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর খুনি গোষ্ঠী ও বঙ্গবন্ধু খুনের সুফলভোগী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করছে; তখন শেখ ফজলুল করিম সেলিমের এ বক্তব্য ঐক্যর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং শত্রুপক্ষের হাতকেই শক্তিশালী করবে।
বোঝা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটে বিরোধ শুরু হয়ে গেছে। তাদের এ বিরোধে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে গেছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এ বিরোধ বন্ধ হবে বলে মনে হয় না। তবে সময়িকভাবে স্তিমিত হলেও পাওয়া-না পাওয়া আর ভাগ-বাটোয়ারা এবং মধুর কারণে যে বিরোধ একেবারে বন্ধ হবে তা মনে হচ্ছে না। জনগণের ভোট ছাড়াই ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটে বিরোধ শেষ পর্যন্ত কতদূর গড়ায় সেটা দেখার জন্যই এখন অপেক্ষায় রয়েছে ভোটের অধিকার হারানো জনগণ।




















 


















































































































 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
shamsulhoque ১৫ জুন, ২০১৬, ১২:২৬ পিএম says : 0
we want more. thank daily inqilab.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন