কাজিপুর থেকে ফিরে মহসিন রাজু ও টিএম কামাল : ভারতীয় ভুখন্ডে সৃষ্ট হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে প্রবেশকালে বাঁধ, স্পার ইত্যাদির মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার এবং বাংলাদেশ অংশে নদীগুলো প্রবেশের পরে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে এখন মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যেতে বসেছে উত্তরের অর্ধশতাধিক নদ নদী। সেই সাথে যেসব নদী এখনও কোনরকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে সেগুলোরও পানিপ্রবাহ কমে মরাখালে পরিণত হয়েছে। অথচ অতিতে এসব নদ নদীতেই এক সময় ঢেউয়ের তালে চলাচল করেছে অসংখ্য পালতোলা নৌকা। নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোতেও গড়ে উঠেছিল অনেক জনপদ বন্দর ও হাটবাজার। নদীকে কেন্দ্র করে গড়েওঠা এসব বন্দর জনপদসহ আশপাশের অসংখ্য মানুষ ওইসব হাটবাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছিল জীবন-জীবিকার পথ। এসব নদীর অথৈ পানি দিয়ে কৃষকরা দুই পাড়ের শত শত হেক্টর জমিতে ধান, গম, পাট ও আখসহ নানান ধরনের ফসল ফলাতেন। সে সময় প্রকৃতির অফুরন্ত রিজার্ভ পানিতে নানা ফল-ফসলে ভরে উঠেছিল মাইলের পর মাইল। বহিঃদেশীয় পর্যটকদের বর্ণনায় সেসব নয়নাভিরাম দৃশ্যের বর্ননা এখন শুধুই ইতিহাসের সাক্ষী হয়েই রয়েছে। আদিকাল থেকেই ছোট-বড় নানা প্রজাতির মাছেরও অফুরন্ত উৎস ছিল এসব উদ্ভিন্ন যৌবনা নদ নদীগুলো। কিন্তু সেসব এখন কেবইল কালের সাক্ষী। সময় গড়িয়ে চলার সাথে সাথে সেই ভরা যৌবনা নদীগুলো এখন মরাখালে পরিণত হতে চলায় নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ওইসব হাটবাজারও এখন পরিণত হয়েছে বিরাণ ভূমি , কৃষি জমিগুলো পরিণত হয়েছে ধু-ধু বালু চর প্রান্তরে, জেলে পাড়াগুলোও হয়ে গেছে বিলীন।
প্রকৃতি প্রেমী আর পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পানি আগ্রাসন ও সংস্কারের অভাবে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম নদী তিস্তা ও পদ্মার অস্তিত্ব এখন চরম হুমকীর মুখে। এছাড়া ইছামতি,
নাব্য হারিয়ে
আত্রাই, পুনর্ভরা, তুলসিগঙ্গা, মহানন্দা, ধরলা, দুধকুমার, স্বতী, ঘাঘট, নীলকুমার, বাঙ্গালী, বড়াই, মানাশ, কুমলাই, লাউতারা, ধুম, বুড়িঘোড়া, সোনাভরা, হলহলিয়া, লোহিত্য, ঘরঘরিয়া, রতœাই, পিছলা, টাঙ্গন, ত্রিমোহনী, তালমা, ফুলকুমার, ধরণী, বুড়িতিস্তা, চাড়াল কাটা, ধানজাই, সানিয়া, কাঁটাখালি, সালমারা, রাইঢাক, খারুভাজ, যমুনেশ্বরী, চিকলি ও করতোয়াসহ অর্ধশতাধিক নদী মানচিত্র থেকে হারিয়েছে যেতে বসেছে। এতে এসব নদীকে কেন্দ্র করে জেগে উঠা বিপুল সম্ভাবনার প্রাণের স্পন্দন থেমে গেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা। সম্ভাবনাময় নদীগুলো আস্তে আস্তে অস্তিত্ব সংকটে পড়লেও এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না কেউ!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন