অবশেষে ক্যাসিনোর মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ অর্থ-সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরিস্থিতি অনেকটা থিতিয়ে যাওয়ার পর ঘোষণা দিলো দুর্নীতিবিরোধী একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল সোমবার কমিশন সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত এক ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ক্যাসিনো ব্যবসা করে যারা বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাদের বিষয়ে কমিশন কাজ শুরু করেছে। বিশেষ অনুসন্ধান তদন্ত-২ এর পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মহাপরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান-তদন্ত) মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান বিষয়টি তদারক করবেন। গত শনিবার নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরো জোরদার করার ঘোষণা দেয়ার পরপরই দুদক এ সিদ্ধান্ত নিলো।
দুদক সূত্র জানায়, ছাত্রলীগ নেতা রব্বানী ও শোভনকে বহিষ্কারের পর দুর্নীতিবাজ যুবলীগ নেতাদের বিষয়েও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরপরই ১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুইয়াকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। পরপরই গ্রেফতার করা হয় ‘টেন্ডারকিং’ খ্যাত জি কে শামীমকে। সঙ্গে পৌনে ২ কোটি টাকা, পৌনে ২শ’ কোটি টাকার এফডিআর ডকুমেন্ট এবং বিদেশি মদ। শফিকুল আলম ফিরোজ, লোকমান হোসেন ভুইয়া, এনামুল হক এনু, রূপন ভুইয়াকেও গ্রেফতার করা হয়। তারা ক্যাসিনোর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করেন। তাদের বাসা-বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সিন্ধুকের ভেতর ৫ কোটি টাকা ও বিপুল স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়। দুদক ওই সময় নৈমিত্তিক অভিযান নিয়ে ব্যস্ত ছিল। সেই সঙ্গে দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব ছিল, আসলে অভিযানটি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমেই হচ্ছে কি না। আইনত স্বাধীন কমিশন অপেক্ষায় ছিল অদৃশ্য ‘গ্রিন সিগন্যাল’র। নিউইয়র্কে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান আরো জোরদার করতে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসে দুদকও। গতকাল রোববার সকালে পূর্ণাঙ্গ কমিশন জরুরি বৈঠকে বসেন। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেরাই অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশনের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দুদক সচিব ব্রিফিংয়ে বলেন, ক্যাসিনো দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। কিন্তু ক্যাসিনোর মাধ্যমে যারা অবৈধ অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন তাদের সম্পদ অনুসন্ধান করবে দুদক। তবে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিদ্দিকী নাজমুল আলমের লন্ডনে চার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের বিষয়ে দুদক কাজ করবে কি না- জানতে চাইলে দুদক সচিব বিষয়টি এড়িয়ে যান। ক্যাসিনোর পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানকারী, বেনিফিশিয়ারি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- এ প্রশ্নও পাশ কাটিয়ে যান মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন