॥ শেষ ॥
সেই থেকে আজ পর্যন্ত হিজরী সনের মাস সমূহ মুসলমানদের জীবনধারার সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে।
ইসলামে হিজরি সনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য : ইসলামে হিজরী সনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। আল্লাহপাক এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে গণনা হিসেবের মাস হলো বারোটি। (মহররম, সফর, রবিউল আউয়াল, রবিউস সানী, জমাদিউল আউয়াল, জমাদিউস সানী, রজব, শাবান, রমজান, শাওয়াল, জিলকদ এবং জিলহজ) যেদিন থেকে তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এর মধ্যে চারটি মাস বিশেষ সম্মানিত। (সূরা তাওবাহ : ৩৬)। বারো মাস হলো মহররম, সফর, রবিউল আউয়াল, রবিউস সানি, জমাদিউল আউয়াল, জমাদিউস সানি, রজব, শাবান, রমজান, শাওয়াল, জুলকদ ও জুলহজ। আর হারাম বা সম্মানিত চারটি মাস হলো মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ। (তাফসিরে বাগাভি ৪র্থ খ-, পৃষ্ঠা নং :৪৪)।
আর হিজরি সনের প্রথম মাস হলো মহররম। মহররম একটি তাৎপর্যম-িত এবং বরকতময় মাস। মুসলিম ইতিহাসে এ মাসটি বিভিন্ন কারণে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। কুরআন কারীমে এ মাসটিকে ‘শাহরুল্লাহ’ তথা আল্লাহর মাস বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সূরা তাওবার ছয়ত্রিশ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘চারটি মাস রয়েছে যেগুলো সম্মানিত মাস। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো মহররম’। এ আয়াতের চারটি সম্মানিত মাসকে চিহ্নিত করতে গিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের সময় মিনা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে বলেন, তিনটি মাস হলো জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং অপরটি হলো রজব। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।
কুরআনেও আরও এরশাদ হয়েছে, লোকেরা তোমাকে নতুন চাঁদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে। বলো ‘তা মানুষ ও হজ্বের জন্য সময় নির্দেশক। (সূরা বাকারা : ১৮৯)। কুরআনে আল্লাহ আরও বলেণ-তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তাদের গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন-যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেন নি। যাতে জ্ঞানী েেলাকেরা তাঁর নিদর্শন পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে’। (সূরা ইউনুস : ৫)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,‘আল্লাহ ঊর্ধ্বদেশে আকাশম-লী কোনরূপ স্তম্ভ ছাড়াই স্থাপন করেছেন, তোমরাতা দেখতে পাও, অতপর তিনি আরশে সমাসীন হলেন, এবং সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়মাধীন করলেন। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাত সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার।’ (সূরা রাদ : ২)। মহররম মাসেই সংঘঠিত হয়েছিল ঐতিহাসিক কারবালা। এ মাসে রয়েছে ফজিলতপূর্ণ ‘আশুরা’। মানবজাতির পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই নানা ঘটনাপ্রবাহের ঐতিহ্য বহন করছে মহররম মাস। কাজেই মুসলিম উম্মাহর কাছে হিজরি সনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বিশেষ করে হিজরি সনের সম্পর্ক চাঁদের সঙ্গে থাকার কারণে এই সনের তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক। এই চাঁদের হিসাবে মুসলমানদের অনেক ইবাদত বন্দেগি, আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়ে থাকে। কাজেই হিজরি তারিখকে গুরুত্ব দেয়া একান্ত জরুরি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন