স্টাফ রিপোর্টার : দেশজুড়ে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের পঞ্চম দিনে ২১ জঙ্গিকে গ্রেফতারের কথা বলা হলেও গতকাল সাধারণ অপরাধী গ্রেফতারের খবর জানানো হয়নি। সাঁড়াশি অভিযান শুরুর পর থেকে পুলিশের গ্রেফতার নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা শুরু হয়। প্রথম ৪ দিনের সাড়ে ১১ হাজারের বেশি লোক গ্রেফতার হয়। পঞ্চম দিনে সর্বমোট গ্রেফতারের বিষয়টি পুলিশ প্রকাশ করেনি। তবে বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া সূত্র মতে, পঞ্চম দিনেও গণ গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন প্রায় ৩ হাজারের মতো লোক।
পুলিশ জানায়, চলমান জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে মঙ্গলবার সকাল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জঙ্গি গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জন জেএমবি, একজন হিজবুত তাহরীর, ২ জন আনসারুল্লাহ বাংলাটিম (এবিটি) এবং একজন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এদের গ্রেফতার করা হয়। গতকাল পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে পুলিশ সদর দফতরের গতকালের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অন্যান্য গ্রেফতারের সংখ্যা জানানো হয়নি। এ নিয়ে সাঁড়াশি অভিযানে ১৭৬ জঙ্গিসহ ১১ হাজার ৬৪৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা রেঞ্জের নারায়ণগঞ্জ জেলা একজন হুজি, টাঙ্গাইল জেলা একজন জেএমবি, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ময়মনসিংহ জেলা একজন জেএমবি, শেরপুর জেলা একজন জেএমবি, রাজশাহী রেঞ্জের রাজশাহী জেলা একজন জেএমবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা একজন জেএমবি, নওগাঁ জেলা ২ জন জেএমবি, বগুড়া জেলা ৩ জন জেএমবি, খুলনা রেঞ্জের সাতক্ষীরা জেলা একজন জেএমবি, রংপুর রেঞ্জের রংপুর জেলা একজন জেএমবি, দিনাজপুর জেলা একজন জেএমবি, গাইবান্ধা জেলা একজন জেএমবি, পঞ্চগড় জেলা একজন জেএমবি, নীলফামারী জেলা একজন জেএমবি, ঠাকুরগাঁও জেলা একজন জেএমবি, বরিশাল রেঞ্জের বরগুনা জেলা ২ জন এবিটি এবং ডিএমপি, ঢাকা একজন হিজবুত তাহরীর সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, ৪টি ককটেল, ৫০০ গ্রাম গান পাউডার, ৫টি পেট্রোল বোমা এবং ১০টি উগ্রপন্থী বই উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্ত সপ্তাহব্যাপী (৬-১৩ জুন) বিশেষ অভিযান ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, গুপ্তহত্যা প্রতিরোধে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে দেশব্যাপী অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। গত চারদিনের অভিযানে ১১ হাজার ৬৪৭ জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশের এহেন অভিযানে অনেক নিরীহ মানুষকেও হয়রানির অভিযোগ ওঠে।
চট্টগ্রামে আরও ২৪৩ জন গ্রেফতার
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, পুলিশের জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের পঞ্চম দিনে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় ২৪৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। তাদের মধ্যে জামায়াত শিবিরের ৮ নেতাকর্মী রয়েছে। তবে পঞ্চম দিনেও চট্টগ্রামে কোন জঙ্গিকে ধরতে পারেনি পুলিশ। গত ৫ দিনে চট্টগ্রামে মোট ১৬৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনও জঙ্গি নেই। প্রায় দুই শতাধিক জামায়াত-শিবির কর্মী গ্রেফতার হয়েছে চলমান অভিযানে। অভিযানে বিএনপি নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হলেও দলের কাছে এ ব্যাপারে কোন তথ্য নেই। চট্টগ্রাম জেলায় পঞ্চম দিনে ২০০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে এদের মধ্যে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে কেউ আটক হয়নি বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। অভিযানে দুটি দেশীয় তৈরি বন্দুক ও ৪ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। নগর পুলিশের জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নগরীতে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৮২ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৩ জন বিশেষ অভিযানে আটক হয়েছেন।
রাজশাহীতে জেএমবি সদস্যসহ গ্রেফতার ৯৮
রাজশাহী ব্যুরো জানায়,রাজশাহী জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক জেএমবি সদস্যসহ ৯৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত আরএমপিসহ জেলার ১৩টি থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ও রাজপাড়া জোনের সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম এবং রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) নিসারুল আরিফ জানান।
নীলফামারীতে গ্রেফতার ১৯
নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীতে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে পুলিশের বিশেষ সাঁড়াশি অভিযানের ৬ষ্ঠ দিনে একজন নিষিদ্ধ ঘোষিত একজন জেএমবি সদস্য ও একজন জামায়াত কর্মীসহ ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলার ছয় উপজেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটককৃত জেএমবি সদস্য হলো আব্দুল হাফিজ (৩২)। সে জলঢাকা উপজেলার খারিজা গোলনা গুচ্ছ গ্রামের আব্দুল হাই মুন্সির ছেলে। নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু মারুফ হোসাইন জানান, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
রাণীনগরে জেএমবি সদস্য গ্রেফতার
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা জানান, নওগাঁ জেলার রাণীনগর থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে ২টি ককটেল ও একটি ধারালো দেশীয় অস্ত্রসহ নওগাঁ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার তালিকাভুক্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)’র সেকেন্ড-ইন কমান্ড বাংলা ভাইয়ের অন্যতম সহযোগী মোঃ খাইরুল আলম মুন্টকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার সকালে রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফ খান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ফোর্স নিয়ে উপজেলার বড়গাছা বাজারে অভিযানে চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত মুন্টু উপজেলার বড়গাছা গ্রামের মৃত শামছুর রহমানের ছেলে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন