প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে পূর্বাচলে ৭০ হাজার দর্শক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম হচ্ছে। এখন ঐ এলাকা শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম এলাকা হিসেবেই চেনে মানুষ। রাষ্ট্রিয়ভাবে প্রধানমন্ত্রীর নামে দেয়া এই নাম পাল্টে বার বার “নীলা মার্কেট” নামে প্রচার করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নীলা। তার এহেন ধৃষ্টতায় স্থম্ভি^ত এলাকাবাসী। কয়েক বছরে ব্র্যাক কর্মী থেকে সরকার দলের ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে নীলা এখন ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বার বার নীলা মার্কেটের সাইনবোর্ড ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। সেটা কম করে ৩০ বার হবে। ভাঙার পরদিনই নীলা মার্কেটের সাইনবোর্ড লাগিয়ে নিজের দাম্ভিকতা প্রকাশ করছেন তিনি। ফেরদৌসী আলম নীলা প্রায়ই বলেন, আমি বেঁচে থাকবোনা একদিন, কিন্তু এলাকার নামটা সারাজীবন নীলা মার্কেট হিসাবেই থেকে যাবে”।
রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পূবার্চলের তিনশ’ ফিটে এলেই সড়কে একদল যুবককে নীলা মার্কেটে আপনাদের স্বাগত বলে মাইকিং করতে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, এই নেত্রী ব্র্যাক কর্মী থেকে কয়েক বছরে রাতারাতি শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার, বৈধ অবৈধ জমির মালিকানা, রাধানীতে বহু দোকান পাট, ফ্লাট, গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছেন। অঢেল সম্পদ অর্জনের পর তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন।
শুধু তাই নয়, পুর্বাচল উপশহরে প্লট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, বালুর কমিশন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সরকারী চাকুরি প্রদান, আবাসন প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ, দখলবাজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে ফেরদৌসি আলম নীলা ও তার স্বামী শাহআলম ফটিকের বিরুদ্ধে। বেশ কয়েকজন সচিবের নাম ভাঙ্গিয়ে নীলা বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। তার দাপটে প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরাও টু-শব্দ করার সাহস পাননা। স্থানীয় প্রশাসনও তার দাপটের কাছে অসহায়। এতে করে ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মাঝেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, দেশ বিদেশে বিভিন্ন ক্যাসিনোতে নীলার যাতায়াত ছিল।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভোলানাথপুর এলাকায় পাকা-আধাপাকা কয়েকশ’ দোকানঘর নির্মাণ করে বাজার বসানো হয়েছে। এ বাজারের নাম ‘নীলা মার্কেট’। এসব দোকানঘর থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন বিদ্যুৎ, পানি ও পরিচ্ছন্নতার দোহাই দিয়ে প্রতি দোকান থেকে আকারভেদে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে চাঁদাবাজ চক্র। বর্তমানে এসবের নিয়ন্ত্রণ করছেন নীলার দেবর আনোয়ার হোসেন। দোকানের সাইনবোর্ড দিতে হলে ‘নীলা মার্কেট’ লিখে বাধ্যতামুলক ঠিকানা লিখতে হবে। বাজারকে ঘিরে ভোলানাথপুরসহ আশপাশ এলাকায় গড়ে উঠেছে মাদকের আস্তানা। এসব আস্তানায় অতি সহজেই পাওয়া যাচ্ছে মরণনেশা বিভিন্ন প্রকার মাদক। শুধু তাই নয়, নির্জন জায়গা হওয়ায় সেখানে প্রতিদিন অসংখ্য যুবক-যুবতী ঘুরতে এসে অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। বাজারের সামনেই রয়েছে একটি কবরস্থান। এর ভিতরেও মাদকের মজুদ গড়ে তুলে খুচরা কেনাবেচা চলছে। এসব টাকা আদায় করে দেয়া হচ্ছে নীলার স্বামী শাহআলম ফটিকের কাছে। প্রতিদিন রাজধানীসহ আশপাশ এলাকার লোকজন এ বাজারে ভিড় জমাচ্ছে। গড়ে তোলা বিশেষ ধরনের কয়েকটি রেস্টুরেন্টে যুবক-যুবতীদের আলাদাভাবে অবস্থানের জন্য রুম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। ঘণ্টায় ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হচ্ছে রুম। আশপাশে জুয়ার আসর বসানো হচ্ছে। এসব আসরে প্রতি রাতেই লাখ লাখ টাকার খেলা হচ্ছে। জুয়া খেলতে বেশির ভাগ লোকই আসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও নরসিংদী, রূপগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ থেকে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নীলা বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক। এলাকার মানুষ আমার নাম ব্যবহার করলে আমার কি করার আছে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকবর্তা (ওসি) মাহামুদুল হাসান বলেন, রূপগঞ্জ থানা পুলিশ উপস্থিত থেকে উচ্ছেদ করলেও ভাইস চেয়ারম্যান নীলা পুনরায় বাজার বসিয়ে দেয়। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে স্টেডিয়াম, ওই স্টেডিয়ামের জমিতে ভাইস চেয়ারম্যান নীলা নিজের নামে বাজারের নাম দেয়ার সাহস করেন কিভাবে আমি জানিনা।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, রাজউকের অধীনে থাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামের নামের পরিবর্তে ’নিলা মার্কেট’ নাম দেয়ার বিষয়টি শুনেছি। ইতিমধ্যে বিষয়টি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ ব্যপারে শীগ্রই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর অন্যান্য বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখবেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজাহান ভুইয়া বলেন, এমন কাজে কেউ জড়িত থাকলে তা নিন্দনীয়। রাজউক ও জেলা প্রশাসন বিষয়টা নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে আশা করি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন