শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিদেশি ভ্যাক্সিনের ওপর নির্ভরশীল প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর

পঞ্চায়েত হাবিব : | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

গবাদি পশু গরু-ছাগল-মহিষ উৎপাদনে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থানের উন্নতি হয়েছে। সেই তুলনায় গবাদি পশু রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন উৎপাদনে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে। প্রতিবছর চাহিদার মাত্র ১৫ শতাংশ উৎপাদন করে বাংলাদেশ। আর ৮৫ শতাংশ ভ্যাকসিন আমদানি করতে হচ্ছে বিদেশ থেকে। চাহিদার তুলনায় সরকারি ভ্যাক্সিনে উৎপাদন কম হওয়ায়, বিদেশি ভ্যাক্সিনের ওপর নির্ভর খামারীরা।

ভ্যাক্সিন উৎপাদনকারী সরকারি সংস্থা প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, দেশে মোট ক্ষুরা রোগের ভ্যক্সিনের চাহিদা বছরে সোয়া কোটির মতো। আর গেল বছর উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১৬ লাখ। বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলেন যে এই রোগটি হাজার হাজার গবাদিপশুকে হত্যা করে যা কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। বেসরকারী সংস্থাগুলিকে এর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভ্যাকসিন তৈরি ও আমদানিতে উৎসাহিত করছে।

প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিরেশ রাঙ্গন ভৌমিক ইনকিলাবকে বলেন, আমদানিকৃত ভ্যাকসিন গুলো গৃহস্থালি উৎপাদন হিসাবে ব্যবহার করতে হয়েছিল চাহিদার তুলনায় খুব কম। সে কারণে সেন্ট্রাল ডেইরি ফার্মে আরিয়াহ এফএমডি ভ্যাকসিন আমদানী করা হচ্ছে। এ ভ্যাকসিনে গবাদি পশুদের টিকা দেওয়ার ভাল ফলাফল পাওয়া গেছে। তিনি বলেন যে কিছু সংস্থা বর্তমানে দেশে এফএমডি ভ্যাকসিন আমদানি ও বিপণন করছে। ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা বলেছেন যে গবাদি পশুদের সারা বছরই টিকা দেওয়া দরকার। তারা জানান, বাংলাদেশে গরুর সংখ্যা পাঁচ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

ওয়ান ফার্মা লিমিটেডের এমডি ড.মোস্তাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, পশুকে ক্ষুরারোগ থেকে রক্ষা করতে ওয়ান ফার্মার রাশিয়ার সেন্ট্রাল ডেইরি ফার্মে আরিয়াহ ভ্যাক্সিন একটি কার্যকরী ঔষধ। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের পশু খামারিরা অনেক উপকার পেয়েছেন। এই ভ্যাকসিনটি গবাদিপশুকে একবার দিলে অনেক দিন পর্যন্ত ক্ষুরারোগ থেকে নিরাপদ থাকে। ওয়ান ফার্মা লিমিটেড ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় মানসম্পন্ন ঔষধ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ইতোমধ্যে বর্হিবিশ্বে সুনামের সাথে ওষুধ রপ্তানি করে আসছে।

জানা গেছে, গরু-ছাগলের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে স্বাভাবিকভাবে এ খাতে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থানেরও উন্নতি হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছাগলের সংখ্যা, মাংস ও দুধ উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ বৈশ্বিক সূচকে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। ভারত ও চীন এই খাতে শীর্ষে রয়েছে। বাংলাদেশ ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়। আর গরু-ছাগল-মহিষ- ভেড়া মিলিয়ে গবাদিপশু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের ১২তম। ভারত থেকে গবাদিপশু আসা বন্ধ হওয়ার পর দেশে প্রতিবছর ২৫ শতাংশ হারে গবাদিপশুর খামার বাড়ছে। ছোটবড় মিলিয়ে এখন খামারের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। আগামী বছরের মধ্যে বাংলাদেশে গরুর সংখ্যা পাঁচ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। গরু-ছাগল-মহিষ- ভেড়া মিলিয়ে ১০-১২ কোটি গবাদিপশু উৎপাদন হয়। সেই তুলনায় গবাদি পশু রোগ প্রতিরোধে জন্য ভ্যাকসিন সংকটে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। গত বছর সেন্ট্রাল ডেইরি ফার্মে আরিয়াহ এফএমডি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে গবাদি পশুদের টিকা দেওয়ার মাধ্যমে ভাল ফলাফল পাওয়ায়। এবারও রাশিয়া থেকে পা-ও মুখের রোগের ভ্যাকসিন ক্রয় করা হচ্ছে। এ জন্য একটি চুক্তি করেছে। তারা বলেছিল যে ভাইরাসটি দু› থেকে ছয় দিনের মধ্যে উচ্চ জ্বর সৃষ্টি করে, তারপরে মুখের ভিতরে এবং পায়ে ফোস্কা পড়ে যা ফেটে যেতে পারে এবং পশু হতে পারে। এই রোগটি পশুর চাষের জন্য অত্যন্ত মারাত্মক প্রভাব ফেলে কারণ এটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং সংক্রামিত প্রাণীর দ্বারা তুলনামূলকভাবে দূষিত কৃষিক্ষেত্রের সরঞ্জাম, যানবাহন, পোশাক, খাদ্য এবং গৃহপালিত ও বন্য শিকারীর দ্বারা যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িছিটিয়ে যেতে পারে। তারা বলেছে যে এর সংলগ্ন অংশটি টিকা গ্রহণ, কঠোর নজরদারি, বাণিজ্য বিধিনিষেধ, কোষারেন্টাইনস এবং মাঝে মধ্যে পশুপাখির তুলনায় যথেষ্ট প্রচেষ্টা দাবি করে।

সংবেদনশীল প্রাণীগুলির মধ্যে রয়েছে, গবাদি পশু, জলের মহিষ, ভেড়া, ছাগল, শূকর, মৃগ, হরিণ এবং বাইসকে আক্রমন করে। এ পরে মহাখালীর প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এক কোটি অ্যাম্পুলের চাহিদার বিপরীতে গত বছর এফএমডি ভ্যাকসিনের ১৫ লাখ অ্যাম্পুল উৎপাদন করেছিল।

এলআরআইয়ের পরিচালক আইনাল হক ইনকিলাবকে বলেন, পা-ও-মুখের রোগটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং প্রায়শই মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ যা ঘরোয়া এবং বন্য উভয় ক্লোভেন-খুরানো প্রাণীকে প্রভাবিত করে। এ বছর ৩০ লাখ অ্যাম্পুল ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছেন। যেমন চাহিদা বিপুল, বেসরকারী খাতও এটিকে উৎপাদন করতে পারে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, মেহেরপুরে ৫ লাখ ২২ হাজার প্রাণি থাকলেও, সরকারি ভ্যাক্সিন নিয়েছে মাত্র ৬ হাজার। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকের দাবি, সরকারের ক্ষুরা রোগের ভ্যাক্সিন এখনও কার্যকর। কিন্তু বলছে, কেন্দ্রীয় প্রজনন খামার, সাভার ডেইরি ফার্ম, মিল্কভিটাসহ বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থা ব্যবহার করছে, রাশিয়ার তৈরি আরিয়াহ ভ্যাক্সিন। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, উৎপাদনের ঘাটতি পড়লে, নিজেদের খামারেও ব্যবহার করেন বেসরকারি ভ্যাক্সিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন