শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সারাবিশ্বে অনুকরণীয় বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

সারাবিশ্ব বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ অনুকরণীয়। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জাতিসংঘ আজ একথাই বলছে। গতকাল বুধবার চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্য তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি।
তিনি বলেন, উন্নয়ন ও জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে আমরা চীন আর ভারত ছাড়া বিশ্বের সব দেশের উপরে উঠে গেছে। বিশ্বে অর্থনৈতিক শক্তিতে ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩০-এ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গত ১০ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে আগামী পাঁচ বছরে তার চেয়ে বেশি উন্নয়ন হবে।

ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীদের দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তোমাদের এত তাড়াহুড়ো (হারি) কিসের? তোমরা নিজেদেরকেই নিঃশেষ করে দিচ্ছ। তোমরা সফল হবে না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই বিজয়ী হবেন। নিজেকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে আজকের অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, আমি যখন চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে পড়ি তখন আগ্রাবাদ থেকে পাহাড়তলী গিয়ে টিউশনি করেছি। লজিং থেকেছি। গ্রামের মানুষ আমার পড়ালেখার খরচ যুগিয়েছে। তাই আমিই বাংলাদেশ। আমি এখন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী। তাহলে তোমরা (ছাত্ররা) পারবে না কেন?

গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরের এলজিইডি মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, রাষ্ট্রদূত ও দলের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক আতাউর রহমান খান কায়সারের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় অর্থমন্ত্রী ছিলেন প্রধান অতিথি। চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এ স্মরণসভার আয়োজন করে। এতে দলের কেন্দ্রীয়, জেলা-উপজেলা ও মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ছাড়াও ব্যাপক লোকসমাগম ঘটে। এতে সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় আমরা এগিয়ে চলেছি।

আজ জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফসহ সবাই বলছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি গোটা বিশ্বের জন্য অনুসরণীয়, অনুকরণীয়। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক সাময়িকীতে স্বীকার করা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩০। আগামী ২০২৮ সালে এ অবস্থান ২৭ এবং ২০৩৩ সালে ২৪-এ উন্নীত হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যেটা হওয়ার কথা ছিল না। আমি বিশ্বাস করি, এখন যা ঘটছে তা কেটে যাবে। কোরআনের একটি আয়াত উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, মিথ্যা অসত্য অপসৃত হবে যা সত্য এবং শাশ্বত তা টিকে থাকবে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া এসব সংগঠনের নেতাকর্মীদের আচরণ হতে হবে দায়িত্বশীল। ছাত্রলীগ, যুবলীগকে নিয়ে এত বিতর্ক কেন। আমি নিজেও ছাত্রলীগ করেছি। আমাকে নিয়ে কোন বিতর্ক ছিল না। এখনো মনে করি আমি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ করি। চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ও কমার্স কলেজের ছাত্র সংসদে আমরা জিততাম। কমার্স কলেজ ছাত্রাবাসের ভিপিও নির্বাচিত হয়েছিলাম। দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার মধ্যে দেশপ্রেম নেই তিনি ভাল মুসলমানও নন।

চট্টগ্রামকে ঘিরে সরকারের ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক উন্নয়ন প্রকল্প আমরা অনুমোদন দিয়েছি। ভবিষ্যতেও চট্টগ্রামের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তবে চট্টগ্রাম এসে দুঃখ পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক উন্নয়ন প্রকল্প এখন পর্যন্ত শুরু করাও হয়নি, যা অপ্রত্যাশিত।
আতাউর রহমান খান কায়সারের সাথে দীর্ঘ সময়ের ঘনিষ্ঠতার কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, তার সাথে আমার ব্যক্তিগত অনেক স্মৃতি আছে। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ছিলেন এবং পরে সেই গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কায়সার সাহেব এ চট্টগ্রামের সন্তান। আবার এ চট্টগ্রামেই আমার বেড়ে উঠা, পড়ালেখা। ছাত্রলীগ করতাম। তখন থেকে তার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা। আতাউর রহমান খান কায়সার ছাড়াও আখতারুজ্জামান বাবু, এমএ মান্নানসহ চট্টগ্রামে অনেক রাজনৈতিক নেতৃত্বের সান্নিধ্য পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

আ হ ম মুস্তফা কামাল তিচারণ করে বলেন, কায়সার ভাইরা ক্ষণজন্মা পুরুষ। তারা মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি যখন কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত হন তখন তার সাথে আমার পাঁচবার সভা হয়েছে। দুপুরে অফিসে, রাতে উনার বাসায় খেতাম। ষাটের দশকে কোরিয়ার অবস্থা আমাদের চেয়ে খারাপ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোরিয়া ভাগ হয়। তাদের ঘরে খাবার ছিল না। স্কুল ছিল না। তাদের মায়েরা মাথার সোনালি চুল বেচে সন্তানকে স্কুলে পাঠাতেন। প্রতিবেলা সবজির স্যুপ খেয়ে জীবনধারণ করতেন। দক্ষিণ কোরিয়া ৩০ বছরের মধ্যে অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হয়েছে। কায়সার ভাই কোরিয়ার সেই উন্নয়ন থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশকে ঢেলে সাজানোর কথা বলেন। আমরা সে উন্নয়নের পথেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগকে পরিশুদ্ধ করতে শেখ হাসিনা যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সফল করতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঠে নামতে হবে। ইঞ্চি ইঞ্চি করে শেখ হাসিনার যে অর্জন কিছু নেতাকর্মী তা মাইলের পর মাইল ধ্বংস করছে। আমরা পাষাণ হয়ে যাচ্ছি। ফেসবুকে আমাদের প্রান্তিক কর্মীরা চমৎকার বলেন, নেতারা রাজনীতি করছে কামানোর জন্য, কর্মীরা খরচ করছে দল টিকিয়ে রাখার জন্য।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম বলেন, আমার মনে হয়, পৌনে ১১ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে আমি তা কল্পনাও করতে পারিনি। তবে আমরা মানুষকে কাছে টানতে পারিনি। কয়েকজনের কারণে অর্জন নষ্ট হচ্ছে। এটা আমাদের ব্যর্থতা। সঠিক মানুষকে সঠিক জায়গায় বসাতে হবে।
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নইমউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ট্রাফিক জ্যাম থেকে শুরু করে ডেঙ্গু মশা দমন- সব সমস্যার সমাধান যদি প্রধানমন্ত্রীকে করতে হয় তবে এত মন্ত্রীর দরকার কী! এখন সরকার ও দলের মধ্য দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

নিজ দলের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর প্রতি ইঙ্গিত করে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, এরশাদের সময় আওয়ামী লীগের প্রতিরোধের মুখে একতরফা নির্বাচনে যারা খাটের নিচে পালিয়ে থেকে ওয়ার্ড কমিশনার হয়েছিলেন তারা এখন আওয়ামী লীগের এমপি হয়ে সংসদে। এটি লজ্জার। এসব আবর্জনা দল থেকে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে।

আতাউর রহমান খান কায়সারের পরিবারের পক্ষে বক্তব্য দেন তার কন্যা সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী অসুস্থ। তারপরও এ স্মরণসভায় যোগ দিতে তিনি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে সড়কপথে ঢাকা থেকে সরাসরি চট্টগ্রামে সভাস্থলে এসেছেন। এজন্য তিনি অর্থমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাদের পিতা-মাতা নীতি-নৈতিকতা ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার, জনগণের উপকার করার শিক্ষাই দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চু, যুগ্ম সম্পাদক বদিউল আলম, দক্ষিণ জেলা সহ-সভাপতি মো. ইদ্রিস, উত্তর জেলা যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, আ ক ম সিরাজুল ইসলাম, শাহাজাদা মহিউদ্দিন, শামীমা হারুন লুবনা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আতাউর রহমান খান কায়সারের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মরহুমের কবর জিয়ারত ফাতেহা পাঠ, বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়া দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন