ইসলামে ব্যভিচার হারাম ও ঘৃণিত অপরাধ। যারা এই ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট অপকর্ম করবে তারা সমাজের সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যাক্তি। ব্যভিচারকে অশ্লীল ও নিকৃষ্ট কাজ ঘোষণার পাশাপাশি এর জন্য পার্থিব ও অপার্থিব শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হাদিসের মধ্যে বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে আমৃত্যু পাথর নিক্ষেপ করার মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর কোরআনের মধ্যে অবিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে এক শত বেত্রাঘাত করার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ করে বেত্রাঘাত কর।’ (সূরা নুর : ২)। আমাদের সমাজে পরকীয়া ও ব্যাভিচার ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। পরকীয়া ও ব্যাভিচারের আগুনে জ¦লছে দেশ, জাতি ও পরিবার। শিক্ষালয়ে ও কর্মস্থলে নারী হারাচ্ছে তাদের অমূল্য সম্ভ্রম। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা এবং নগ্নতা । ব্যাভিচার নির্মূলে ইসলামের নির্দেশনা নিম্নরূপ
দৃষ্টি অবনত রাখা : নারী-পুরুষ উভয়ের দৃষ্টি সংযত রাখা। দৃষ্টিপাতের মাধ্যমেই সূত্রপাত হয় অনেক পাপাচারের। তাই পুরুষকে নির্দেশ দিয়েছে দৃষ্টি অবনত রাখতে আর নারীকে নির্দেশ দিয়েছে দৃষ্টি অবনত রাখার পাশাপাশি দেহের সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি মুমিনদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে আর তাদের যৌনাঙ্গকে হেফাজত করে। এ ব্যবস্থায় তাদের জন্য রয়েছে অধিকতর পবিত্রতা। তাদের কর্ম স¤পর্কে আল্লাহ অবশ্যই অবগত আছেন। আর মুমিন নারীদেরকে বলুন তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং হেফাজত করে স্বীয় যৌনাঙ্গের।’ (সূরা নূর : ৩০-৩১)। ইসলামের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নারী-পুরুষকে নিরাপদ ও কলংকমুক্ত রাখার জন্য।
কামল কণ্ঠে কথা না বলা : নারী-পুরুষের পর¯পরের প্রতি আল্লাহ তায়ালা জন্মগত আকর্ষণবোধ সৃষ্টি করেছেন। নারীর সুন্দর আওয়াজকে সীমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পরপুরুষের সাথে কোমল কন্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে ব্যধিগ্রস্ত মানুষের অন্তর প্রলুব্ধ হয়।’ (সূরা আহযাব : ৩২)। তাই পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলার একান্ত প্রয়োজন হলে কর্কশ কণ্ঠে কথা বলতে হবে।
সৌন্দর্য প্রকাশ না করা : ইসলাম নারী-পুরুষকে পর্দা করার নির্দেশ দিয়ে উভয়ের বিচরণ ক্ষেত্র পৃথক করেছে। নারীর মধ্যে আল্লাহ তায়ালা যে কমনীয় সৌন্দর্য দান করেছেন সুনির্দিষ্ট বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে তার প্রদর্শনী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছেন। নারী জাতিকে লক্ষ্য করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা জাহেলী যুগের ন্যায় নিজেদের প্রদর্শন করে বাহিরে বের হয়ো না।’ (সূরা আহযাব : ৩৩)। সৌন্দর্য প্রকাশের মাধ্যমে পুরুষের কামোত্তেজনা সৃষ্টি হয়। হয়তো যে নারী সৌন্দর্য প্রকাশ করেছে সে সরাসরি পুরুষের দ্বারা আক্রান্ত হয়, নতুবা তার সৌন্দর্য প্রকাশে সৃষ্ট কামোত্তেজনায় অপর কোনো নারী আক্রান্ত হয়। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে ‘হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী কন্যা ও মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরে কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।’ (সূরা আহযাব : ৫৯)। মানুষের প্রতি ইসলামের এই বিধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা যাতে পরিশুদ্ধ সমাজ ও সুখী সংসার কাঠামো গঠন করতে পারে।
নারী-পুরুষ নির্জনে মিলিত না হওয়া : ইসলামে বেগানা নর-নারীর কোন নির্জন স্থানে মিলিত হওয়া সম্পূর্ণ হারাম। কারণ তাতে ব্যাভিচার হবার আশঙ্কা তৈরী হয়। হাদীসে এসেছে, ‘যখনই কোন পুরুষ পর নারীর সাথে নির্জনে দেখা করে তখনই শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিাত হয়।’ (তিরমিজি : ২১৬৫)। আর শয়তান তাদেরকে ব্যভিচারের দিকে ধাবিত করার অপচেষ্টায় মেতে ওঠে।
ব্যভিচার থেকে দূরে থাকা : ব্যভিচার করার আগ্রহ তৈরী হতে পারে এমন কাজের ধারে-কাছে যেতেও কুরআন নিষেধ করেছে। ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সূরা ইসরা : ৩২)। ইসলামের নির্দেশনা মতে, কোনো ব্যক্তি শুধু ব্যভিচার থেকে দূরে থেকেই ক্ষান্ত হবে না, বরং এ পথে ধাবিতকারী সকল বিষয় থেকেও দূরে থাকবে। পরকীয়ার সূত্রপাত যদি অনলাইন চ্যাটিং কিংবা ফোনালাপে হয় তাহলে এই আয়াতের মাধ্যমে অনলাইন চ্যাটিং ও ফোনালাপকে হারাম করা হয়েছে। ইসলাম বিবাহবহির্ভ‚ত যে কোনো যৌনাচারকে যেনা বলে গণ্য করেছে। হাদিসে এসেছে, ‘দুই চোখের যেনা হলো পরনারীর প্রতি নজর করা, দুই কানের যেনা হলো যৌন উত্তেজক কথা-বার্তা শ্রবন করা, মুখের যেনা হলো পরনারীর সাথে রসালো কণ্ঠে কথা বলা। হাতের যেনা হলো পরনারীকে স্পর্শ করা এবং পায়ের যেনা হলো যৌন মিলনের উদ্দেশ্যে পরনারীর কাছে গমন। অন্তরের যেনা হলো হারাম বস্তু কামনা করা। আর যৌনাঙ্গ এগুলো বাস্তবায়ন করে বা মিথ্যা সাব্যস্ত করে।’ (মুসলিম : ৬৯২৫)।
সমাজে নগ্নতা, অশ্লীলতা, অবৈধ প্রেম, পরকীয়া এবং ব্যাভিচার চলমান রেখে দুনিয়তে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করা যাবে না। মুসনাদে আহমাদের মধ্যে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মত ততদিন ভাল থাকবে যতদিন পর্যন্ত তাদের মধ্যে ব্যাভিচার ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে না পড়বে। আর যখন ব্যাভিচার তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে তখন তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি গ্রাস করবে।’ অর্থাৎ এইডস, সিফিলিস, প্রমেহ, গনোরিয়া, আরো নাম না জানা বিভিন্ন মরণব্যাধি মহামারি ছড়িয়ে পড়বে।
তাই দুনিয়ার শান্তি ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে অবৈধ প্রেম, পরকীয়া ও ব্যাভিচার থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মোমিনের ঈমানি দায়িত্ব। এই দায়িত্ব যারা পালন করতে যারা সক্ষম হবে তাদের জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে তার মুখ ও যৌনাঙ্গের হেফাজতের নিশ্চয়তা দিবে আমি তাকে বেহেশতের নিশ্চয়তা দিব।’ (বুখারি : ৬১০৯)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন