উবায়দুর রহমান খান নদভী : শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর জানাযা ও দাফনে সমবেত হাজার হাজার মানুষের যে আবেগ মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববাসী দেখার সুযোগ পেয়েছে, তার নজির কেবল মুসলমান সমাজেই পাওয়া যাবে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে মানুষ এখনও এই মহান মুসলিম ব্যক্তিত্বের দাফনের দৃশ্য দেখার সুযোগ পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির কেভ হিল গোরস্তানে মোহাম্মদ আলীর কফিন নিয়ে যাওয়ার সময় হাজার হাজার ভক্তের মুখে কালেমা শাহাদাতের ধ্বনি, শেষ যাত্রার মিছিলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র সমবেত কণ্ঠের জিকির যে কোন জীবন্ত হৃদয় মানুষকে অভিভূত না করে পারে না। একটি মুসলিম সংখ্যালঘু পরিবেশে আধুনিক মুসলিম প্রজন্মের এই জিকিরের ধ্বনি বিশ্ববাতাবরণে ইসলামের আধ্যাত্মিক নীরব অগ্রযাত্রারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
অথচ এই মহান মুসলিম নেতার মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের সময় ৯২% জন মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশের কোন কোন সংবাদ মাধ্যম কথিত ধর্মহীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আয়াতটি বর্জন করার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে। এটাকে তারা বলেÑ ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রসার’। একজন মুসলমানের দ্বীন, ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার যেখানে হরণ করা হয়, সেখানে তার মুসলিম পরিচয়ে দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করা হবে, এতে বিস্ময়ের কী আছে? যদিও মুসলমানের মৃত্যু শুধু তার শেষ হয়ে যাওয়া নয়। এটি তার নতুন জীবনে প্রবেশ। এক জগত থেকে অন্য জগতে স্থানান্তর হওয়া। যাকে মুসলিম পরিভাষায় বলা হয় ‘ইন্তেকাল’। ইসলামে মৃত্যুকে ‘ওফাত’ বলার কারণও এটিই যে, ইহজীবনের পাট চুকিয়ে ফেলা বা দুনিয়ার সময়সীমা পূর্ণ করা হচ্ছে ওফাত। বাংলাদেশে এখন মিডিয়ায় বলা ও লিখা হচ্ছে ‘মারা’ গেছেন। ইন্তেকাল করেছেন বলতে কারো কারো কষ্ট হয়। আর হাজার বছর ধরে এ দেশের মানুষ ‘ইন্না লিল্লাহি’ পড়লেও গণমাধ্যমে হঠাৎ ‘প্রগতিশীল’ একটি অংশ ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ লিখতে দ্বিধান্বিত। যারা এমন করছেন তারা ঈমান হারা হতে পছন্দ করতে পারেন, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ ঈমান নিয়ে বাঁচতে এবং ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করতে শতভাগ বদ্ধপরিকর। তারা চায় তাদের শেষ বিদায়ও ইসলামী রীতির আলোকেই হোক। ‘জানাযা’ হোক ‘শেষকৃত্য’ নয়। ‘লাশ’ ‘দাফন’ হোক। ‘মরদেহ’ ‘সমাহিত’ নয়। ‘জানাযা’র মাধ্যমে শেষ বিদায় হোক। নিছক প্রার্থনার পর ‘অন্তিম যাত্রা’ বা ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’ নয়।
ইদানীং বাংলাদেশের জনজীবন থেকে ইসলাম ও মুসলমানের সকল চিহ্ন নিঃশেষে মুছে দেয়ার হীন উদ্দেশ্যে একটি শ্রেণী কৌশলে কাজ করে যাচ্ছে। আর কিছু লোক বুঝে না বুঝে তার অন্ধ অনুসরণে নেমে গেছে। এরা ‘আল্লাহ’ না বলে ‘গড বা ঈশ্বর’ বলে আরাম পায়। মুসলমানের সন্তান হয়েও নিজেকে ধর্মপরিচয়হীন অসাম্প্রদায়িক ভাবতে ও জাহির করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এসব মানুষ শব্দ করে কালেমা পাঠেও কৃপণতা করে, নবী (সা.) এর উপর দুরূদ পাঠেও কুণ্ঠা বোধ করে। এসব হতভাগ্য মুসলমানের জন্য মোহাম্মদ আলী দ্যা গ্রেটেস্ট-এর জানাযা ও দাফন অনুষ্ঠানের জিকির মিছিলে অনেক শিক্ষা রয়েছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মবোধ ও ঐতিহ্যপ্রিয় সংস্কৃতি থেকেও এ শ্রেণীর মুসলমান নামধারী হীনমন্য ব্যক্তিদের বহু কিছু শেখার আছে। ভারতীয় সিনেমা, নাটক, সিরিয়ালে যেভাবে দেবদেবীর নাম, জপতপ, ওঁম, পূজা-পাঠ, ঐশী ক্ষমতার জয়গান থাকে এসব মুসলমানের সন্তান কেন নিজেদের সাহিত্য, বিনোদন, সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমে ইসলাম বা মুসলমানিত্ব নিয়ে এভাবে মাথা উঁচু করে চলতে পারে না, এ জিজ্ঞাসার জবাব এখনই খুঁজতে হবে। বাংলাদেশের ৯২ ভাগ মানুষ মুসলমান। তাদের ধর্মবিমুখ করার হাজারো চেষ্টা চললেও তা কোনদিন সফল হবে না। তবে বেঈমানচক্র ও মুসলিম নামধারী মুনাফিক শ্রেণীর চেষ্টা থেমে যায়নি। এক্ষেত্রে সব শ্রেণীর মুসলমানকে হতে হবে সচেতন। নিজেদের রীতি-ঐতিহ্য শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরতে হবে। ভিন্ন জাতি-ধর্ম ও সংস্কৃতির অনুসারী হওয়া যাবে না। কারণ, হাদীস শরীফে মহানবী (সা.) বলেছেন, যারা যে সংস্কৃতি বা সম্প্রদায়ের অনুসারী হবে পরিণামে তারা তাদের অন্তর্ভুক্ত বলেই গণ্য হবে।
মানুষের প্রথম পরিচয় তার চেহারা। এরপর নাম-ঠিকানা, পেশা, পদবী অবস্থান। আরো গভীরে তার জ্ঞান, বোধ-বিবেচনা ও চেতনা সংস্কৃতি। আবার শুধু প্রথম দর্শনেই তার চেহারায় এসব কিছুরই ছাপ দেখা যেতে পারে। চেহারা দেখেও মানুষটির রুচি, সংস্কৃতি, চেতনা ও প্রজ্ঞার পরিচয় খানিকটা আঁচ করা যেতে পারে। যদি তাতে কোন অস্বাভাবিকত্ব আরোপ না করা হয়। ঠিক তেমনি মানুষের পরিচয় তার কথাবার্তা ও প্রাত্যহিক সম্ভাষণে ফুটে ওঠে। মানুষের ঈমানও সেরকম। যে ব্যক্তি ঈমানদার তার গোটা অস্তিত্ব জুড়েই ঈমানের সুরভি দেখা দেয়। তার জীবন-মৃত্যু, আশা-নিরাশা, সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-বঞ্চনা, হাসি-কান্না সর্বত্র ঈমানের আলো চোখে পড়বে।
ঈমানদার সম্প্রদায় বা মুসলিম জাতিকে মহান রাব্বুল আলামীন পৃৃথিবীভরা মানুষের মধ্যে বিশিষ্টতা দান করেছেন, তাদের ঈমানের ভিত্তিতেই। প্রখ্যাত হাদীস গ্রন্থে রয়েছে, নবী করীম (সা.) এর কাছে জনৈক অবিশ্বাসী বেড়াতে এলে তিনি তাকে রাতের খাবার দিলেন বকরির দুধ দিয়ে। লোকটি একাই সাতটি বকরির দুধ পান করল। রাতে তার অন্তরে ঈমান জাগ্রত হলে সে সকালে নবী করীম (সা.) এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করল। সকালে তার খাবারে বকরির দুধ ছিল। একটি বকরির দুধ পান করে সে আর দুধ নিচ্ছিল না। অন্যরা বললেন, ভাই, এতটুকুই নিলে, আরো দুধ নাও। সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী লোকটি জবাবে বলল, সত্যি বলছি ভাইয়েরা, আমি সম্পূর্ণ তৃপ্ত হয়ে গেছি। আর একটু দুধও খেতে পারব না। নবী করীম (সা.) তখন বললেন, ঈমানদার একটি পেট নিয়ে খায় আর অবিশ্বাসী ব্যক্তির পেট থাকে সাতটি। এ কথার মাধ্যমে নবী (সা.) বোঝাতে চেয়েছেন, ঈমান ও কুফর মানুষের জীবনবোধের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য তৈরি করে। কার্যকর অবস্থায় যে ব্যক্তি সাতটি বকরির দুধে উদরপূর্তি করেছিল ঈমান আনার পর এক বকরিতেই তার ক্ষুধা মিটে গেছে। এর নাম বরকত।
মুসলমান অন্য ভাইকে সালাম দেয়। বলে আসসালামু আলাইকুম। প্রতি-উত্তরে অপরজন বলেন, ওয়া আলাইকুমস্ সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। অর্থাৎ তোমার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি বর্ষিত হোক। জবাবেও বলা হয়, তোমার উপরও আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও বরকত নাযিল হোক। ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য এটিই সালাম বা সম্ভাষণ। অন্যান্য সম্প্রদায় বলে থাকে গুডবাই, গুডমর্নিং, গুড আফটারনুন বা গুড নাইট। এখানে সকাল বিকাল রাত ও বিদায় বেলার জন্য ভিন্ন ভিন্ন শুভ কামনা। কেউ বলে জয়, জয় রাম, নমস্কার, আদাব, ইত্যাদি। এর কিছু কিছু সম্ভাষণ ধর্ম ও সম্প্রদায় বোঝায়। কিছু ধর্মনিরপেক্ষ বা ধর্ম পরিচয়হীন, যেমন শুভ সকাল, শুভরাত্রি, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। কিন্তু ইসলামে বিশ্বাসী বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য চিরস্থায়ী ও পূর্ণাঙ্গ অভিবাদন ব্যবস্থা মহান আল্লাহ করে রেখেছেন, পবিত্র কোরআনের আয়াত দিয়ে এবং নবী করীম (সা.) এর সুন্নাহর মাধ্যমে।
আপনি কারো জন্যে শুভ কামনা করলেন, এটিই কি তার শুভ বিষয় প্রাপ্তির জন্য যথেষ্ট। আপনি কি শুভাশুভের মালিক? আপনি রাত্রি বা সকালকে শুভ বানিয়ে দেয়ার কে ? এটি করবেন ভাগ্য বিধাতা, মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহ। তাছাড়া শুভ সকাল বার্তাটি দুপুর-বিকাল বা রাত পর্যন্ত চলছে না। বলতে হচ্ছে গুডমর্নিং, গুড আফটারনুন ও গুডনাইট। কিন্তু ঈমানদারের বিষয় এমন নয়। সে শান্তি, নিরাপত্তা, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি সবকিছুই আল্লাহর কাছে কামনা করে এবং তাঁর কাছ থেকেই প্রাপ্ত হয়। এ জন্য সালামের মধ্য দিয়ে সবসময়ের জন্য সে অপরকে আল্লাহর পক্ষ থেকেই রহমত, বরকত, ক্ষমা ও নিরাপত্তার বার্তা প্রদান করে। জবাবেও সে তেমনটিই প্রত্যাশা করে ও প্রাপ্ত হয়।
জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও মুমিনের বিষয়টি একই রকম। যা অমুসলিম, ঈমানহারা বা ধর্মহীন ব্যক্তির ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। ইসলামের নির্দেশনা হলো আগামী দিন বা ভবিষ্যতে কোনো কাজ করতে হলে বলতে হবে ‘যদি আল্লাহ চান’ তাহলে আগামীতে এমন করব। যার আরবী হলো ‘ইনশাআল্লাহ’। মুসলমান ছাড়া আর কেউ ইনশাআল্লাহ বলে না। এটা ঈমান ও আল্লাহর সাথে সম্পর্কের বিষয়। যারা নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বনির্ভর মনে করে, তারা ইনশাআল্লাহর সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী নয়। ঈমানদার ব্যক্তি এক মুহূর্তের কাজটিও যদি আল্লাহ তওফিক দেন, যদি আল্লাহ আমাকে সক্ষম রাখেন বা যদি আল্লাহর ইচ্ছা হয় তাহলে করব বলে ঘোষণা দেয়। আগামীর কোনো কাজের কথা ‘ইনশাআল্লাহ’ সহযোগে বলা ইসলামী সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যে কোনো প্রাপ্তি, অর্জন ও নেয়ামতের ক্ষেত্রে বলতে হয় ‘আল হামদুলিল্লাহ’। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর। বিস্ময়কর ও গৌরবজনক বিষয়ে ঈমানদারের অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয় ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘সুবহানাল্লাহ’ দিয়ে। কোনো আনন্দকর দৃশ্য, সমৃদ্ধি, কৃতিত্ব দেখে বলা চাই ‘মা-শা-আল্লাহ’। যে কোনো সময় মনের ভাব প্রকাশের বিষয় ও বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্দ্বিধায় যখন মুখ থেকে উচ্চারিত হয় সুবহানাল্লাহ, আল হামদু লিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মদ, সাল্লাল্লাহু আলান নবী, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইত্যাদি তখন মানুষের ঈমান সতেজ থাকে। কারো মৃত্যু সংবাদ শুনলে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলাও ইসলামী সংস্কৃতি। মৃত্যুর জন্য সূরা ফাতিহা, কুল, সূরা, কালাম ও দোয়া পাঠ করা জীবিত মুসলিম ভাইয়ের দায়িত্ব।
পানাহারের সময় সাধারণত ডান হাত ব্যবহার করা, বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া-দাওয়া শুরু করা, শেষে আল হামদু লিল্লাহ ও সুন্নতি দোয়া পাঠ করা, মসজিদে প্রবেশ ও বাইর হওয়ার দোয়া পড়া, আজানের জবাব দেয়া, ঘুম ও জেগে ওঠার দোয়া পড়া ইত্যাদি মুসলমানদের ঈমানী পরিচয় ও স্বকীয়তার নিদর্শন। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিতে ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতির অবস্থা খুবই করুণ। জনগণের শিক্ষাদীক্ষা ও মানসগঠনে চলচ্চিত্র, নাটক, মিডিয়া যে ভূমিকা রাখে তা তুলনাহীন। কিন্তু আমাদের গণমাধ্যম ও সিনেমা নাটক খুবই নেমকহারাম। ৯২ ভাগ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় চলেও মালিক ও দায়িত্বশীলরা মুসলমানের সন্তান হয়েও এসব মাধ্যম ইসলাম থেকে বহু দূর। কোনো কারণেই যেন ইসলাম ও মুসলমানিত্বের গন্ধও না পাওয়া যায়, এমনভাবেই তারা সবকিছু করতে মরিয়া। একবার কোনো এক টিভি বিজ্ঞাপনে ‘মা-শা-আল্লাহ’ বলার কারণে স্পন্সররা নাকি আপত্তি তোলে। পরে সংলাপ থেকে মা-শা-আল্লাহ কেটে বাদ দিয়ে এটি প্রচার করা হয়। পানির পাম্পের বিজ্ঞাপনে ঝপ করে পানি এসে যাকে ভিজিয়ে দেয়, তিনি মুসলমানের একটি ঐতিহ্যগত পোশাক পরা শায়খ। ভাঁড়ামি করা লোকটিকে সাধারণ পোশাকে তাদের ভালো লাগেনি। ঠিক যেন ভারতের সে ললিপপের বিজ্ঞাপনের মতো, যেখানে ইতিহাস পাঠের বিড়ম্বনার জন্য স্বয়ং হুমায়ুন তার পুত্র জাহাঙ্গীর ও নাতি আকবরকে নিয়ে চলে আসেন এক কিশোরীর দোলনার পাশে। ক্ষমা চান, কান ধরে ওঠবস করেন তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকার জন্য আর বোরিং দূর করতে কিশোরীটির হাতে ধরিয়ে দেন একটি ললিপপ। কিশোরী বলে, আপনারা কি ফেসবুকে আছেন? হুমায়ুন জবাব দেন, না, আমরা কেবল টেক্সটবুকেই থাকি। তিনজন মুসলিম সম্রাটকে এনে এ কেমন বিজ্ঞাপন? কেমন এ কান ধরে ওঠবসের আইডিয়া? ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ কী কায়দা করেই না ঢোকানো হয়েছে বিজ্ঞাপনে। ডিটারজেন্টের বিজ্ঞাপনে কালো মানুষকে দেখানো হয়েছিল চীনে। প্রতিবাদ ওঠায় তা বন্ধ করতে বাধ্য হয় উদ্যোক্তারা। আর ইসলাম ও মুসলমান হরদম বাংলাদেশের মিডিয়া ও বিনোদনজগতে ক্ষতবিক্ষত, কিন্তু বলার বা ভাবার কেউ আছে বলে মনেই হয় না।
কিছু চ্যানেল এমন আছে যারা আজান প্রচারও বর্জন করেছে। বিটিভিসহ যারা আজান প্রচার করে তাদের চেয়ে ওরা প্রগতিশীল হতে চায়। প্রগতি অর্থ কি ঐতিহ্য ও পরম্পরা ত্যাগ করা? ধর্ম ও সংস্কৃতির মূল থেকে বিচ্যুত হওয়া? এসব ‘হঠাৎ প্রগতিশীল’ ও ‘নতুন ভদ্রলোক’ ব্যক্তিরা নিজ বিশ্বাস, চেতনা, ঐতিহ্য ও পরিচয়ের গুরুত্ব বোঝেন বলে মনে হয় না। তাদের শিক্ষা নেয়া উচিত খ্রিস্টানদের আধুনিকতা ও প্রগতি থেকে। হিন্দুদের ঐতিহ্য, ধর্ম ও সংস্কৃতিপ্রীতি থেকে। তাদের চোখে কি মিসর, ইরান ও সউদী আরবের মিডিয়ার উৎকর্ষ চোখে পড়ে না? তারা কি অন্ধ? যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের মুদ্রায় ‘অন গড উই ট্রাস্ট’ ছেপেও যদি আধুনিক থাকতে পারে, যদি মমতা ব্যানার্জি আল্লাহ ও ঈশ্বরের নামে শপথ নিয়েও প্রগতিশীল হতে পারেন, নরেন্দ্র মোদি বিদেশে গিয়েও সময়মতো পূজাপাঠ করতে বিব্রত বোধ না করেন, তাহলে এসব কুলাঙ্গার কেন ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে আল্লাহর নামটি উচ্চারণ করতে রাজি হয় না?
কিছু নিন্দিত ও ঘৃণিত উপস্থাপক এমনও দেখা যায়, অনুষ্ঠানে সরাসরি ফোন করা দর্শক সালাম দিচ্ছেন, কিন্তু তারা সালামের জবাব বা নিজেরা সালাম না দিয়ে বারবার বলছেন শুভ সকাল, শুভরাত্রি ইত্যাদি। যেন সালামের সংস্কৃতিটি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে তুলে দিতে চাইছেন। যেন তাদের কেউ বলে দিয়েছে, মুসলমানিত্বের গন্ধও যেন না থাকে তাদের প্রোগ্রামে। তারা উঠেপড়ে লেগেছেন, বাংলাদেশের দর্শক শ্রোতার কান থেকে ইসলাম ও ইসলামী কালচারের সকল শব্দ, আওয়াজ এবং নিদর্শন মুছে দেয়ার কাজে। তাদের উদ্দেশ্য পূরণ হতে দেয়া যাবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন