স্টাফ রিপোর্টার : দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বস্তি দেয় বলে মন্তব্য করেছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করে বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের নামে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে সরকার দেশকে জঙ্গিদের কারখানা হিসেবে প্রমাণ করেছে।
একই সাথে অভিযানের নামে গণগ্রেফতার ও বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে উচ্চতর আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং গণগ্রেফতারের নামে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আগামীকাল (শনিবার) সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন তিনি।
দেশে যত অরাজকতার কুজ্ঝটিকা পরিব্যাপ্ত হবে ততোই শেখ হাসিনার জন্য মঙ্গলজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীকে স্বস্তি দেয়। তার টিকে থাকা নিশ্চিত হয়। মানুষ তার অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণ নিয়ে মাথা ঘামাবে না, এটাই তো তিনি মনেপ্রাণে চান।
রিজভী বলেন, এই অবৈধ সরকারের আমলে ষড়যন্ত্র, খুনতন্ত্র আর লুটপাটতন্ত্র হাত ধরাধরি করে চলে। আর সেজন্যই প্রাণবিনাশী দুষ্কৃতকারীরা নির্বিঘেœ তাদের দুষ্কর্ম সংঘটন করতে পারে বাংলাদেশে।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই ভোটারবিহীন সরকারের আমলেই কারাগারে বন্দী জঙ্গিরা পুলিশের সহায়তায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। গত বিএনপি সরকারের আমলে যে জঙ্গিদেরকে ধরে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তাদের অনেককে এই সরকারের আমলে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
কারাগার থেকে অনেক জঙ্গি হত্যার নির্দেশ পাঠায় উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, অনেক দুর্ধর্ষ জঙ্গি জেলের ভেতর থেকেই মানুষ হত্যার নির্দেশনা পাঠায়। এখন চলছে গণগ্রেফতারের নামে নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি আর গ্রেফতার বাণিজ্য। থানা চত্বর এবং কারাগার ফটকের বাইরে দেখা যায় সম্প্রতি গণগ্রেফতারে নিরীহ বন্দীদের হাজার হাজার আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারী।
রিজভী বলেন, সরকার জঙ্গি দমনের নামে সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ১৫ হাজার লোককে গ্রেপ্তার করেছে। এ অভিযানের মাধ্যমে সরকার প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশ জঙ্গিদের কারখানা। তিনি বলেন, সরকার জঙ্গি দমনের নামে নাটক করছে।
সংবাদ সম্মেলনে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারের নামে সরকার বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে এমন অভিযোগ এনে এই সাঁড়াশি অভিযানের প্রতিবাদে আগামী শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আর ঢাকায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর বিএনপি।
জঙ্গি দমনে সাঁড়াশি অভিযানের নামে গণগ্রেফতার ও বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে উচ্চতর আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। এ লক্ষ্যে সুয়োমুটো রুল জারি করতে উচ্চতর আদালতকে বিনীত অনুরোধও জানিয়েছে দলটি। যাতে করে দেশবাসী এই পবিত্র রমজান মাসে ভয় ও ত্রাসের বিভীষিকা থেকে পরিত্রাণ লাভ করে।
রিজভী বলেন, দেশব্যাপী ভোটারবিহীন সরকার জনগণের ওপর চালাচ্ছে পাশবিক আক্রমণ। এখন যেভাবে ব্যাপক গণগ্রেফতার ও নির্বিচারে বিচারবহির্ভূত হত্যালীলা চলছে, তাতে একাত্তরের ভয়াল পঁচিশে মার্চের রাত থেকে শুরু হওয়া অপারেশন সার্চলাইটের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, পবিত্র রমজান মাসেও সরকার দয়া-মায়া, মানবতা, আইন-কানুন এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনাসহ সবকিছু বিসর্জন দিয়ে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্যই নির্বিচারে গণগ্রেফতারের নামে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। কেন সরকার এই হিংসাশ্রয়ী গণগ্রেফতার ও বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করবে না এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানবে না, সে বিষয়ে সুয়োমুটো রুল জারি করার জন্য আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে মহামান্য উচ্চতর আদালতকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। যাতে দেশবাসী এই পবিত্র রমজান মাসে ভয় ও ত্রাসের বিভীষিকা থেকে পরিত্রাণ লাভ করে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট আহমেদ আযম খান, দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, আব্দুল আউয়াল খান, যুবদলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সম্পাদক কাজী রফিক, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন