কুমিল্লার হাট-বাজারে জীবাণুযুক্ত টাকার ব্যবহারে বাড়ছে উদ্বেগ। মাছ বাজার থেকে শুরু করে তরকারি, গোশত, ফল ও মিষ্টি দোকান সবখানেই ব্যবহার হচ্ছে কাগজের টাকা। অথচ সেই কাগজের টাকা থেকে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, বিক্রেতারা যেই হাতে মাছ, গোশত, মুরগী ধরছেন এবং পরিষ্কার করছেন আবার সেই হাতেই টাকা ধরছেন। ক্রেতারাও হাত দিয়ে ধরে নোট বা কয়েন বিনিময় করছেন। তাই পথে, মাঠে, ঘাটে জীবাণুযুক্ত টাকার ব্যবহার যেভাবে বাড়ছে তা উদ্বেগজনক।
সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষণায় থেকে জানা গেছে, দেশের প্রচলিত সকল ধরণের কাগজের নোট ও কয়েনে রয়েছে ‘ই-কোলাই ও ফেকাল কলিফম’ নামে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উচ্চমাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে সংরক্ষিত টাকা ও কয়েন সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে ভয়াবহ উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মাছের দোকান থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় ‘ই-কোলাই’ রয়েছে ২৬০০, গোশত দোকানে ২১৩০, মুরগির দোকানে ২৪৮০ এবং ফলের দোকানে ইকোলাইয়ের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে ৭০০টি। একইভাবে ফেকাল কলিফম মিলেছে মাছের দোকানে ২৮০০, গোশতের দোকানে ২৬৬০, মুরগির দোকানে ২৯০০ এবং ফলের দোকানে ২০৬০টি। এমনকি ভিক্ষুকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা টাকা ও কয়েনেও ১ হাজার মাত্রার চেয়ে বেশি কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। যা মানব দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
কাগজের নোট-কয়েনে পাওয়া মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জীবাণুমুক্তের কোন ব্যবস্থা নেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ধীরে ধীরে কাগজের নোটের ব্যবহার কমিয়ে লেনদেন বাড়াতে হবে অ্যাপসের মাধ্যমে। টাকা ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত ধোয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের। টাকা গোনার দৃশ্য হরহামেশাই চোখে পড়ে। অজ্ঞতাবশত এভাবেই প্রতিনিয়ত ক্ষতিকর সব ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করছে মানবদেহে।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা প্রাইম ব্যাংক রেইসকোর্স শাখার ফাস্ট অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. আবুল হাসানাত দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জেলা শহরের ব্যাংকগুলোতে সবসময় নতুন টাকা রাখা সম্ভব না স্টকে। রি-ইস্যু নোটগুলোই গ্রাহকদের দিয়ে থাকি। তবে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচতে হলে আমাদের পেপার কারেন্সি থেকে সরে আসতে হবে। প্রতিদিনের লেনদেন ই-ওয়ালেট ব্যাবহার করার পর্রামশ দেন তিনি।
তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক কায়সার আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, কোন না কোনভাবে এসব টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হয়। তাই ব্যাংক থেকেই এসব টাকা ও কয়েনকে জীবাণুমুক্তের উদ্যোগ নিতে হবে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ এর কনসালটেন্ট মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. ইজাজুল হক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এসব ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার কারণে ডায়রিয়াসহ নানা সমস্যা হতে পারে। এমনকি খুব বেশি মাত্রায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার কারণে পরিপাকতন্ত্রের আরো নানা ধরণের রোগ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই টাকা কিংবা কয়েন ধরার পর হাত না ধুয়ে যেন কোন খাবার গ্রহণ না করা হয়। খাবার পূর্বে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
গবেষকরা বলছেন, ‘ই-কোলাই’ এটি একটি ব্যাকটেরিয়া। যা মানুষের মলে পাওয়া যায়। এই ব্যাকটেরিয়াই ক্ষতিকর মাত্রায় মিলেছে সংগ্রহ করা পুরনো টাকা ও কয়েনে। যেসব জায়গায় টাকার লেনদেন বেশি হয় বাজারে সেখানে নোট বা কয়েনে ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন তারা। সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া মিলেছে মাছ, গোশত আর মুরগির দোকান থেকে সংগ্রহ করা টাকার নোট আর কয়েনে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন