বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সমাজের সর্বত্র আজ পচন ধরেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যুবলীগের চেয়ারম্যান হতে চায় এটাই তার বড় উদাহরণ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছাত্রলীগ নেতাদের এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ঈদ বকশিশ দিয়েছেন, তার কাছে কি টাকা তৈরির মেশিন আছে, নাকি গাছ আছে? গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জিয়া মুক্তি পরিষদ’ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোশাররফ বলেন, আরও দুর্ভাগ্যজনক। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আমি আকাশ থেকে পড়েছি। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, ছাত্রনেতা ছিলাম, হলের ভিপি ছিলাম, তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার হয়েছি, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান হয়েছি। আমার ছাত্রজীবন থেকে শিক্ষকজীবন পর্যন্ত অনেক ভিসি দেখেছি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এমন কথা বলতে পারেন? যে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের সভাপতির পদ যদি তাকে দেয়া হয়, তবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদ ছেড়ে দেবেন। চিন্তা করেন! কী লজ্জা! সমাজের পচন কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। যে ভিসি ওই ধরনের সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগ শাসন করবেন, তার চোখ রাঙানিতে ক্যাম্পাস প্রকম্পিত থাকবে, তিনি যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব নিতে চান। ভিসি যুবলীগের সভাপতির পদ নিতে চান কারণ, সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা পাবেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে জনগণের সরকার থাকলে ভারতের সঙ্গে এভাবে চুক্তি করতে পারত না। ভোট চুরির অবৈধ দুর্বল সরকার বলে তারা চুক্তি করেছে। এই অবৈধ সরকারের অসম চুক্তি দেশের জনগণ কিছুতেই মেনে নেবে না। ভারতের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক চাই, প্রতিবেশী, ভাই-ভাই হিসেবে পাশপাশি থাকতে চাই, সমতার সম্পর্ক চাই- এটাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতি। কিন্তু যে চুক্তি করা হয়েছে তাতে দেয়া হয়েছে, নেয়ার কথা হয়নি। তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোনো সমাধান নেই, অভিন্ন ৫৪টি নদীতে ভারত বাঁধ দিয়েছে সে নিয়ে কথা হয়নি। ফেনী আমাদের নদী, সেটার পানি মানবিক কারণে ভারতকে দেয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। অথচ এ চুক্তির আগেই ভারত ফেনী নদীতে ৩৫টি পাম্পের মাধ্যমে অবৈধভাবে পানি নিচ্ছে।
তিনি বলেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান হলো লোক দেখানো প্রতারণা। যারা ক্যাসিনো পরিচালনা করেছে তাদের আটক করা হয়েছে। কিন্তু যেসব মন্ত্রী-এমপির প্রশ্রয়ে এসব হয়েছে সেসব গডফাদারকে গ্রেফতার করা হয়নি। তিনি বলেন বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডে জড়িতদের যারা লালন-পালন করেছে তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।
সরকারের কঠোর সমালোচনা করে ড. মোশাররফ বলেন, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে। ৯/১০টি ব্যাংক দেউলিয়া করা হয়েছে। সরকারের লুটের ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে তা দিচ্ছে না। তাদের আরও সুযোগ দেয়া হচ্ছে। প্রশাসনে যারা আছেন তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সাজানো মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেছে। জামিন তার প্রাপ্য অধিকার, তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। আমাদের অনেকে বলেছেন, আইনজীবীরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারছেন না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলকভাবে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না।
মোশাররফ বলেন, ঘরের ভেতর বসে বক্তব্য দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে না। সকলকে আন্দোলন-সংগ্রামের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন