সাউথইস্ট ব্যাংক নওগাঁ শাখা থেকে ১১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে উধাও হয়ে গেছে এক গেছে এক শিল্পপতি দম্পতি। দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের তিশিগাড়ী জে এন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিক গোপাল আগরওয়ালা (৫৬) ও তার স্ত্রী মেসার্স শুভ ফিড প্রসেসিংয়ের স্বত্বাধিকারী দীপা আগরওয়ালা (৪৮) এ টাকা আত্মসাৎ করে ভারতে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, নওগাঁ জেলা শহরে লিটন ব্রিজ মোড়ের বাসিন্দা গোপাল আগরওয়ালা ’৯৪ সালে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের তিশিগাড়ী নামক স্থানে জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য জমি ক্রয় করেন। প্রায় দুই বছর উক্ত জায়গায় মিল কারখানা গুডাউন স্থাপন করে জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ নামে ব্যবসার কার্যক্রম প্রাথমিক ভাবে শুরু করেন। কারখানার ২৯৫ শতক ও ১৩৯ শতক সম্পত্তির মালিকানাধীন জে এন ইন্ডাস্ট্রিজের নামে সাউথইস্ট ব্যাংক নওগাঁ শাখা থেকে ৮৪ কোটি ১৩ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা ও ফিড প্রসেসিংয়ের নামে ৩০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার টাকা ঋণ নেয় তারা।
ব্যবসায়ী দম্পতি নির্ধারিত সময়ে ঋণের টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন অজুহাতে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মৌখিক আশ্বাস ও ব্যবসায়িক দিক বিবেচনা করে তাদেরকে বার বার সময় দিয়ে আসছিলেন। এতে ব্যাংকের তাদের ঋণ অনিয়মিত হতে থাকে এক পর্যায়ে তারা ব্যাংকের সাথে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে নানা ভাবে খোঁজ নিয়ে তাদেরকে না পেয়ে গত ১০ অক্টোবর ঐ শাখা ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান দুপচাঁচিয়া থানায় জিডি করেন।
গতকাল বুধবার জেএন ইন্ডাস্ট্রিজে গিয়ে দেখা গেছে, মূল গেটের সামনেই নোটিশটি শোভা পাচ্ছে। মূল গেটটি বন্ধ থাকলেও পকেট গেটটি খোলা। পকেট গেটটি দিয়ে ভিতর ঢুকতেই ব্যাংক থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মীরা এগিয়ে আসে। কথা হয় সাউথইস্ট ব্যাংক নওগাঁ শাখার নিয়োগপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সিদ্দিকের সাথে। তিনি জানান, সাউথইস্ট ব্যাংক নওগাঁ শাখার দখলে রয়েছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে চার জন ও ওরেঞ্জ নামে একটি সিকিউরিটি কোম্পানির ১০ জন নিরাপত্তা কর্মী কারখানায় দিন রাতে পালাক্রমে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। তবে ইন্ডাস্ট্রিজের সকল কার্যক্রম বন্ধ।
ভিতরে ঢুকে দেখা যায় বড় বড় গুদামঘর গুলো ফাঁকা। যে বিশাল বিশাল যন্ত্রপাতি গুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তাতে আবার মাকড়সার জাল বাঁধছে। ভিতরে পাখির বাসাও বাধছে। ইন্ডাস্ট্রিজ এলাকার ভিতরে পূর্ব দিকে এক বিঘা জায়গার উপর গড়ে তোলা হয়েছে মেসার্স শুভ ফিড প্রসেসিং। যন্ত্রপাতি বা সামগ্রী বলতে কিছুই নেই। শুধু নামেই রয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। অথচ দীপা আগরওয়ালাই নিয়েছে প্রায় ৩১ কোটি টাকার ঋণ। ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে এখনো দু’জন নিরাপত্তা কর্মচারী দেখভালের জন্য রয়েছে। কথা হয় তাদেরই একজন সিরাজুল ইসলামের সাথে তিনি জানান, এই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন কর্মচারী কাজ করতো। পর্যায়ক্রমে তাদেরকে ছাটাই করা হয়। এখন তারা দুজন রয়েছেন। তারা দু’মাস ধরে বেতন পাননি।
স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই এলাকায় বর্তমান জমির মূল্য ৩ লাখ টাকা শতাংশ। সেই হিসাবে বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রিজের জমির মূল্য আনুমানিক ১৩ কোটি টাকা স্থাপনা ও যে যন্ত্রপাতি রয়েছে তার মূল্য আনুমানিক ৪০ কোটি টাকা হবে। অর্থাৎ মোট মূল্য প্রায় ৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা হতে পারে।
উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুর রাজ্জাক জানান, তাদেরকে যে পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়েছে তা উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যোগসাজস করে অনেক বেশি টাকা ঋণ দিয়েছে। সুযোগ নিয়েছে ব্যবসায়ী দম্পতি। এ বিষয়ে ব্যাংকের শাখা প্রধান কামরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি না হওয়ায় তার মতামত জানা সম্ভব হয় নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন