শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আত্মগোপনে তালিকাভুক্তরা

চট্টগ্রামে নজরদারিতে কাউন্সিলরসহ ২৫ জন

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

রাজধানী ঢাকার মত চট্টগ্রামে সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযান জোরদার না হলেও তালিকাভুক্তদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযানের মুখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। এদের অনেকে এলিট বাহিনী র‌্যাবের নজরদারিতে রয়েছেন। বেশ কয়েকজন পালিয়ে গেছেন বিদেশে। বাকিরাও বাসাবাড়িতে থাকছেন না, চলে গেছেন পাতালে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সরকারী দলের জেলা পর্যায়ের নেতাও রয়েছে। আছেন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বেশ কয়েকজন।
দলীয় পরিচয়ে এলাকায় দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কিশোর গ্যাং পরিচালনা, মাদক, জুয়াসহ গুরুতর অপরাধে জড়িত অন্তত ২৫ জনের তালিকা ধরে তাদের নজরদারিতে রেখেছে র‌্যাব। তাদের ধরতে নিয়মিত অভিযানও চলছে। তবে পালিয়ে বেড়ানোর কারণে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুবুল আলম গতকাল বুধবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শুদ্ধি অভিযানের জন্য তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। এ তালিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ছাড়াও কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর রয়েছেন। তালিকাভুক্তদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিদেশে পাড়ি দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাকিরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। এর কয়েকদিন পর চট্টগ্রামেও জুয়ার আড্ডায় হানা দেয় এলিট বাহিনী র‌্যাব। এর পাশাপাশি মদ, জুয়ার আসর পরিচালনা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে যারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হন নগরীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ চাঁদাবাজ কিশোর গ্যাংয়ের হোতা যুবলীগ নামধারী নুর মোস্তফা টিনু।
এরপর অভিযানে র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারান আগ্রাবাদ এলাকার অপর শীর্ষ চাঁদাবাজ যুবলীগ ক্যাডার খোরশেদ আহমদ। সর্বশেষ গতকাল ভোরে সীতাকুন্ডের বাঁশবাড়িয়ায় র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারান শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইকারী চক্রের গ্যাং লিডার নাজির আহমেদ সুমন ওরফে কালু। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শাহ আলম হত্যার মূলহোতা এ কালুর বিরুদ্ধে সীতাকুন্ড এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছেন বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তারা।
র‌্যাব-পুলিশের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে সরকার দলীয় নেতা পরিচয়ে এলাকায় অপরাধে জড়িতদের অনেকে গা ঢাকা দেন। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ রয়েছে, তারা বাসাবাড়ি থেকে পালিয়ে যান। র‌্যাবের শুদ্ধি অভিযান নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও বিরূপ মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন সরকার দলীয় হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। বিএনপি, জাতীয় পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে আসা এ নেতাকে নিয়ে দলের ভেতরে বাইরে তোলপাড় শুরু হয়। দলের ভেতর থেকেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠে। এরপর থেকে অনেকটা নীরবে দিন পার করছেন সামশুল হক চৌধুরী।
ঢাকায় অভিযানের শুরু হলে পরদিন দুবাই পালিয়ে যান শীর্ষ যুবলীগ ক্যাডার হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। এখনও তিনি দেশে ফেরেননি। তার বাহিনীর ক্যাডাররাও আত্মগোপনে। সিআরবিতে টেন্ডারবাজিকালে জোড়া খুনের ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত যুবলীগ নামধারী অপর শীর্ষ ক্যাডার সাইফুল আলম লিমনও এলাকায় নেই। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় সম্রাট গ্রেফতার হওয়ার পর আরও কয়েকজন বিদেশে পাড়ি দেন। এদের মধ্যে আগ্রাবাদ এলাকার একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরও রয়েছেন। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। তিনি দুবাইয়ে অধ্যয়নরত ছেলের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বিদেশ পাড়ি দিচ্ছিলেন।
পরিবহন ব্যবসায় জড়িত উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের অপর এক নেতা এবং একজন উপজেলা চেয়ারম্যানও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। নজরদারিতে আছেন অন্তত সাতজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। সদ্য বহিষ্কৃত যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন যুবলীগ নেতাও এখন আত্মগোপনে। অভিযোগ রয়েছে, এরা ঢাকায় নিয়মিত ক্যাসিনোতে যেতেন এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঘাট থেকে চাঁদাবাজি করে একটি অংশ যুবলীগের সাবেক ওই শীর্ষ নেতাকে বখরা দিতেন।
‘বিচ্ছু সামশু’র বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে অর্থ পাচার ও অবৈধ জুয়া পরিচালনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সরকার দলীয় হুইপ সামশুল হক চেীধুরীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন পুলিশের বিশেষ শাখাকে (এসবি) ইতোমধ্যে এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। এ খবরে চট্টগ্রাম বিশেষ করে তার নির্বাচনী এলাকা পটিয়ায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে।
চট্টগ্রাম নগরীর ফুটপাতের হকার থেকে জাতীয়তাবাদী যুবদল, এরপর জাতীয় যুব সংহতি হয়ে আওয়ামী লীগে আসেন সামশুল হক চৌধুরী। বারবার দল পাল্টানো এ নেতা চট্টগ্রামে বিচ্ছু সামশু হিসেবে পরিচিত। তার ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনকে নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। চলমান শুদ্ধি অভিযানের শুরুতে নগরীর হালিশহরে আবাহনী লিমিটেড কার্যালয়ে র‌্যাবের অভিযানে জুয়া খেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। সামশুল হক এ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক
ওই জুয়ার আসর থেকে গত পাঁচ বছরে সামশুল হক চৌধুরী ১৮০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে। হালিশহর থানার সাবেক ওসি মাহমুদ সাইফুল আমিন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ তথ্য তুলে ধরেন। পরে অবশ্য তাকে এজন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আবাহনী ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানের পরদিন চলমান শুদ্ধি অভিযানের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে র‌্যাবের অভিযান নিয়ে ব্যঙ্গও করেন সামশুল হক চৌধুরী। এ ঘটনায় দলের ভেতরে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। দলের ভেতর থেকেই তাকে হাইব্রিড উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ উঠে।
এ প্রেক্ষাপটে তার বিদেশ যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলো। এদিকে সামশুল হক চৌধুরীর বিদেশ যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) নূরে আলম মিনা ও নগর বিশেষ শাখার উপ-কমিশনার আবদুল ওয়ারিশের সাথে গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে তারা দুজনই জানান, এ সংক্রান্ত কোন চিঠি এখনও তাদের হাতে আসেনি। এ ব্যাপারে চিঠি আসলে বিষয়টি জানা যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন