বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে চলমান গুপ্তহত্যার জন্য বিএনপি-জমায়াত জোটকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, মাদারিপুরে কলেজ শিক্ষকের হত্যা প্রচেষ্টার সাথে যুক্ত একজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের পর এ বিষয়ে আর কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। তিনি বলেন, মাদারিপুরের ঘটনার পর আর এ বিষয়ে দেশের মানুষের কোনো সন্দেহ নেই যে বিএনপি-জামায়াতই সকল গুপ্তহত্যার সঙ্গে যুক্ত। কলেজ শিক্ষক হত্যা প্রচেষ্টায় যুক্ত এবং জনগণের হাতে আটক সন্ত্রাসীর পরিচয়Ñসে একজন শিবির কর্মী।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি এবং জামায়াত উভয়েই প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষ হত্যায় সিদ্ধহস্ত। এটাই তাদের চরিত্র। তারা জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে এবং ব্রিটিশ এমপি টিউলিপকে যুক্তরাজ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যেসব যুদ্ধাপরাধী লন্ডনে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন তারাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। তিনি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে লন্ডনে অবস্থানরত বেগম জিয়ার ছেলে এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, একজন কুলাঙ্গার ছেলে যে লন্ডনে বসে আছেÑব্রিটিশ সরকার কেন তাকে সেখানে জায়গা দিয়েছে জানি না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, লন্ডনে এক কুলাঙ্গার বসে আছে। ব্রিটিশ সরকার কেন তাকে আশ্রয় দিয়েছে জানি না। সে ওখানে যাওয়ার পর টিউলিপ হুমকি পাচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারের দায়িত্ব এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
তিনি আরো বলেন, টিউলিপকে দেওয়া হুমকিতে বলা হয়েছে, ‘তোর নানাকে হত্যা করেছি। তোকে আর তোর মা-খালাকেও হত্যা করব।’ এই হলো হুমকির ভাষা। যে হুমকি শুনে বিএনপি নেত্রীর সেই ‘হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ চাই’ হুমকির কথা মনে পড়ে যায়। হুমকি-ধমকির মধ্য দিয়েই আমাদের চলতে হচ্ছে। যাদের চরিত্র মানুষ হত্যা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে কখনও জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের জায়গা হবে না বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
শেখ হাসিনা তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে জড়িয়ে বিবিসির একটি প্রতিবেদনের সমালোচনা করে বলেন, কিছু ভিত্তিহীন খবর প্রচার করা হচ্ছে। বিবিসির মতো আন্তর্জাতিক মানের সংবাদমাধ্যম এটা করতে পারে না।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, সরকারের সমালোচনা করবেন ঠিক আছে, কিন্তু সেটা যেন অসংলগ্ন না হয়। সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। তবে স্বাধীনতা ভোগের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রতি যে দায়িত্ব রয়েছে সেটাও পালন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে সাংবাদিক নেতারা নানা দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। এর মধ্যে সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন, আবাসন সমস্যা সমাধান ও প্রেসক্লাবের ভবন নির্মাণের দাবি রয়েছে। সাংবাদিকদের নবম ওয়েজ বোর্ড দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর জন্য মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তথ্যমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানাচ্ছি। আবাসন সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী জায়গা খোঁজার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি টেলিভিশন চালু করার সাহস কেউ পায়নি। তিনি সেটা করেছেন। এখন টক শো করেও অনেকের ভালো কামাই হচ্ছে। তবে টক শো সংসদের বিকল্প হতে পারে না। জাতীয় সংসদে কথা বলা হয় কতগুলো নিয়ম-নীতি ও বিধিবিধানের মধ্যে থেকে। আর টক শোতে বক্তব্য হয় লাগামছাড়া।
ইফতার মাহফিলে আরও বক্তৃতা করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাফর ওয়াজেদ, মহাসচিব ওমর ফারুক ও ডিইউজের সভাপতি শাবান মাহমুদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সম্পাদকবৃন্দ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকবৃন্দ এবং বিএফইউজে এবং ডিইউজের সদস্যবৃন্দ ইফতারে অংশগ্রহণ করেন। ইফতারের পূর্বে সমগ্র দেশ-জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি এবং উন্নতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতির ছেলের সাক্ষাৎ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের লোকসভার সদস্য ও দেশটির রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনে এই সাক্ষাৎ হয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। এ সময় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহজাবিন খালেদ উপস্থিত ছিলেন।
ইহসানুল করিম জানান, সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের সরকার ও জনগণের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ভারতের এই সহায়তার কথা বাংলাদেশের জনগণ কখনোই ভুলবে না। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, সহযোগিতা বৃদ্ধি হলে এবং যোগাযোগ অব্যাহত থাকলে তা ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য ভালো বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আরও বর্ডার হাট স্থাপন করা হলে তা আরও ভালো ফলাফল বয়ে আনবে এবং চোরাচালান কমবে বলেও প্রধানমন্ত্রী এ সময় মন্তব্য করেন।
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের সীমান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত জনগণের সুবিধার জন্য পাইলট ভিত্তিতে সীমান্ত হাট (বর্ডার হাট) স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী সীমান্তে এই হাট চালু আছে। আরও কয়েকটি হাট চালুর প্রস্তুতি চলছে দুই দেশে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য ইতিবাচক বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। এ সময় সার্কভুক্ত দেশগুলোকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে সবার সহযোগিতার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিদেশে থাকা খুনিদের অবস্থান নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হলেও ছয়জন বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছেন, বাকি একজন মারা গেছেন।
পলাতক রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্রের এবং নূর চৌধুরীকে কানাডার ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানানোর দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মানবতাবিরোধী, মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাদেরই রক্ষা করে। আমি এর ভিকটিম। সাক্ষাৎকালে প্রণবপুত্র অভিজিৎ বাংলাদেশের আতিথেয়তার প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের স্থান ভারতের জনগণের হৃদয়ে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শেখ নিলুর বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (এনডিএফ) চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অন-লাইন বার্তা সংস্থা ‘দ্য রিপোর্ট’ এ খবর জানায়।
জানা গেছে, প্রায় ৪০ মিনিটব্যাপী এ বৈঠকে দেশের সমসাময়িক ও রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী ২৭ জুন রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে এনডিএফ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন নিলু। এদিন প্রধানমন্ত্রী না আসলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে বলে নিলু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন