আবুল হাসান সোহেল, মাদারীপুর থেকে : মাদারীপুর সরকারী নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে হত্যা চেষ্টার মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামী গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম শনিবার ভোররাতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় নিহত হয়েছে। গত শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টায় মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইদুর রহমান পুলিশের দাখিলকৃত ১৫ দিনের রিমান্ড আবেদন শুনানী শেষে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার সকাল ৭টায় বন্দুকযুদ্ধে আসামী ফাহিম নিহত হয়।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. সরোয়ার হোসেন ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান ফকির দুপুর ১২টায় আসামী ফাহিম পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন মর্মে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য নিশ্চিত করেন। মাদারীপুর সদর থানার ওসি জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, আদালতের আদেশমতে আসামী ফাইজুল্লাহ ফাহিমকে শুক্রবার গভীর রাতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর তার দেয়া তথ্যমতে দিবাগত রাত দুইটার দিকে পুলিশ বাকি আসামিদের গ্রেফতার অভিযানে মাদারীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসানের নেতৃত্বে ২০ জন পুলিশ দুটি গাড়ি নিয়ে এ অভিযানে নামে।
সকাল ৭টায় সদর থানার মিয়ারচর এলাকায় পৌঁছালে আগে থেকে অবস্থানরত ফয়জুল্লার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে থাকা ফয়জুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তার বুকের বাঁ পাশে দুটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে সদর থানার কনস্টেবল আলী হোসেন মারাত্মক আহত হন। তাকে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতাল ও পরে পুলিশ লাইনের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি বন্দুক, তিনটি গুলি ও ছয়টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। ফয়জুল্লাহকে হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা, আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হবে বলে জানান ওসি।
এদিকে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. সরোয়ার হোসেন ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান ফকির দুপুর ১২টায় সাংবাদিকদের কাছে তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আসামী ফাহিম পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে শনিবার সকাল ৭টায় নিহত হয়েছে। আসামী ফাহিমকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে যে, সে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত। সে ঢাকার দক্ষিণখানের বাসিন্দা এবং উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। ওই কলেজের সাবেক এক ছাত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার জিহাদী বই পড়ে উগ্র পন্থায় উদ্বুদ্ধ হন। এ ধরনের হামলায় হিযবুত তাহরীরের কোনো সদস্য আটক হওয়ার এটা প্রথম ঘটনা তারা জানান।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মো. এমরানুর রহমান সনেট বলেন, শনিবার সকালে পুলিশ ফাহিম নামে একজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়। তার শরীরের বাঁ অংশে গুলির চিহ্ন রয়েছে।’
মাদারীপুর জজ কোর্টের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট সুজিত চ্যাটার্জী বাপ্পি বলেন, ‘রিমান্ডে থাকা কোন আসামী বন্দুকযুদ্ধে কিংবা গুলিতে নিহত হলে এর দায়ভার পুলিশকেই নিতে হবে। আর বন্ধুকযুদ্ধে কোনো অপরাধী মারা গেলে বাকি অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।’
উল্লোখ্য, গত বুধবার বিকেলে মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দীন কলেজের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে তার বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালাতে থাকে। স্থানীয় জনতা ধাওয়া করে ফয়জুল্লাহ ফাহিমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরদিন বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় পুলিশের এসআই আইয়ুবআলী বাদী হয়ে আসামী ফাইজুল্লাহ ফাহিমসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মাদারীপুর সদর থানায় মামলা করে। ফয়জুল্লাহ ফাহিমের দেওয়া তথ্যমতে, বাকি ৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। বাকি পাঁচ আসামী হচ্ছেÑসালমান তাকসিন ওরফে সালিম (১৯), শাহরিয়ার হাসান ওরফে পলাশ (২২), জাহিন (২৩), রায়হান (২৪) ও মেজবাহ (২৪)
আসামী ফাইজুল্লাহ ফাহিম গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশ ফাহিমের ছবি বরিশালে সেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত শিক্ষককে দেখানো হলে তিনি ফাহিমকে হামলাকারী হিসেবে শনাক্ত করেন। এছাড়া হামলায় ফয়জুল্লাহ ফাহিমের সাথে হত্যার উদ্দেশ্যে এ মিশনে অংশ নেন সালিম ও পলাশ। জাহিন, রায়হান ও মেজবাহ বাসার বাইরে পাহারায় ছিলেন।
আসামী ফাহিমের লাশ যথাযথ প্রক্রিয়ায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়।
এদিকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাদারীপুর সদর হাসপাতাল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সমাদ্দার এলাকায় পিতা গোলাম ফারুকের কাছে ‘বন্দুকযুদ্ধে ’ নিহত ফাহিমের লাশ হস্তান্তর করা হয়। শনিবার বিকাল ৪টার দিকে নিহত ফাহিমের বাবা ও মা সদর থানায় আসেন। এ সময় পুলিশ গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে ফাহিমের পরিবারকে কথা বলতে দেয়নি। দুপুরে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শশাঙ্ক ঘোষসহ ৩ সদস্যের বিশেষ টিম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন