রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

গোপালগঞ্জে চুরির অপবাদ দেয়ায় বিষপানে যুবকের আত্মহত্যা

প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : গোপালগঞ্জে সালিশ বসিয়ে মুরগি চুরির অপবাদ দিয়ে জরিমানা করায় কৃষি শ্রমিক পরিবারের রিপন মজুমদার (২০) নামের এক তরুণ বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল শুক্রবার সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের খালিয়া গ্রামের বাড়িতে শোকাবহ পরিবেশে ওই তরুণের লাশ দাফন করা হয়েছে। মাতবরদের হুমকিতে রিপন মজুমদারের বড় ভাই মিল্টন মজুমদার গা ঢাকা দিয়েছে। রিপনের মা কবিতা মজুমদার ও বাবা নির্মল কুমার মজুমদার মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
মৃত রিপন মজুমদার খালিয়া গ্রামের দিনমজুর কৃষি শ্রমিক নির্মল কুমার মজুমদার ওরফে খুদি রাম মজুমদারের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার সকালে রিপন বাড়িতে বিষপান করে। বিকেলে গোপালগঞ্জ আড়াইশ’ বেড জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শুক্রবার ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ রিপনের লাশ হস্তান্তর করে। ওইদিন বিকেলে তার লাশ গ্রামের বাড়িতেই দাফন করা হয়। রিপনের বাবা খুদিরাম ও ভাই মিল্টন অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। মৃত রিপনও অন্যের জমিতে কাজ করত।
জানা যায়, ১০ জুন দিবাগত রাতে ওই গ্রামের মরণ ও স্বপনের বাড়ি থেকে কুদ্দুস মোল্লার ছেলে বায়োজিৎ ও পাঁচু বিশ্বসের ছেলে বিভাস  তিনটি মুরগি চুরি করে। ওই গ্রামের রিপন ও বিভাস তাঁদের দুই সহযোগীর সহায়তায় মুরগিগুলো চুরি করেছেন, এ অভিযোগে গত বুধবার রাতে রিপনের বাড়িতে সালিশ বসানো হয়।
জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর ইকরাম সমাজদার, মুরব্বি মশার আলী মোল্লা, মনির শেখ, বাবলু মোল্লা  ও খালিয়া ইউনাইটেড একাডেমির এমএলএসএস গোবিন্দ সরকার এ সালিশ পরিচালনা করেন। সালিশে রিপন ও বিভাসকে ৩০০ টাকা কওে মোট ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়। মশার আলী মোল্লা বলেন, রিপন ও বিভাস তাঁদের আরও দুই সহযোগীকে নিয়ে দুটি পরিবারের তিনটি মুরগি চুরি করে খেয়েছেন। এ জন্য এ সালিশ করা হয়েছে।
রিপনের বাবা নির্মল কুমার মজুমদার ওরফে খুদি রাম অভিযোগ করেন, ‘আমার ছেলে মুরগি চুরি করেনি। মিথ্যা চুরির অপবাদে বিচার করায় রিপন অভিমান ও মনঃকষ্টে বৃহস্পতিবার সকালে বাড়িতে বিষপান করে। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে বিকেলে তার মৃত্যু হয়।’ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইউপি নির্বাচনে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত মেম্বার ইকরাম সমাজদারকে খুদিরামের পরিবার ভোট দেয়নি। খালিয়া ইউনাইটেড একাডেমির এম.এল.এস.এস গোবিন্দ সরকার ওই মেম্বারের খাস লোক। গোবিন্দ কৌশলে মেম্বারকে দিয়ে এ সালিশি বৈঠকের আয়োজন করে জরিমানা করান। গোবিন্দ সরকার খালিয়া গ্রামে দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে হিন্দুদের কাছ থেকে ফায়দা লোটেন। তার হুমকি-ধমকিতেই পরিবারটি তটস্থ। অভিযুক্ত গোবিন্দ সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার দিন স্কুলের কাজে আমি ঢাকা ছিলাম। পরে গ্রামে এসে এ খবর জানতে পারি।
জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ইকরাম সমাজদার বলেন, গোবিন্দ সরকার, মশর আলী, মনিরুলসহ ৫ জন সালিশ পরিচালনা করি। সালিশে অভিযুক্তদের ৬০০ টাকা জরিমানা করে আমি চলে আসি। রিপনের পরিবার থেকে এ ঘটনায় রাগ করার কারণে পরের দিন  সে বিষপানে আত্মহত্যা করতে পারে বলে আমার ধারণা। তবে তিনি ইউপি নির্বাচনের প্রসঙ্গ ও পরিবারকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এস,আই আবদুস সোবাহান বলেন, ময়না তদন্তের পর শুক্রবার লাশটি পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারা বাড়িতেই মরদেহ সমহিত করে। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মৃত রিপনের মা কবিতা মজুমদার ও বাবা নির্মল কুমার মজুমদার ওরফে খুদি রামকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন