শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কুমিল্লা মেতে ওঠে ভোরের স্বাস্থ্য উৎসবে

পারিবারিক আবহ গড়ে উঠেছে ধর্মসাগর পার্কে

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

রাতভর শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের আড়ষ্ঠতা ভোরে ভাঙে কিছু মানুষের স্পর্শে। ঘুমন্ত শহর পাখির কলতান আর মানুষের কোলাহলে জেগে ওঠে। কথাগুলো কুমিল্লার ধর্মসাগর পার্ক নিয়ে। আধো আলো আধো অন্ধকারে শুরু হয় শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের নারী-পুরুষের প্রতিদিনের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উৎসব। ভোর থেকেই ওয়াকওয়ে ধরে লোকজন ছুটতে থাকেন। সুস্থ থাকার প্রত্যয়ে এক বিশাল কর্মকান্ড চলে এই পার্কে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দিন দিন বেড়েই চলছে ব্যায়ামে যোগদান।
গতকাল ভোরে ধর্মসাগরের দক্ষিণের গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই দেখা গেল হাঁটার পথ ধরে পার্কের অভ্যন্তরের দিকে ছুটছে সবাই। গোল হয়ে দাঁড়িয়ে সবাই একজনের কমান্ড মেনে ব্যায়াম করছেন। ব্যক্তিগত ছাড়াও ২ থেকে ৩টি সংগঠনের অধীনে সকালে ব্যয়াম হয়। পার্কের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা যায় কেউ কোমরে হাত দিয়ে পুরো শরীর ঝাঁকাচ্ছেন। কেউ কেউ দড়ি নিয়ে লাফাচ্ছেন।
বয়স্করা ব্যায়ামের ফাঁকে ফাঁকে কিছুটা সময় জিরিয়ে নেন। ক্লান্ত হয়ে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে খোশগল্পে মেতে ওঠেন। পার্ককে ঘিরে সবার মাঝে রীতিমত পরিবারিক আবহ গড়ে উঠেছে। কেউ কেউ হাঁটতে হাঁটতেই সঙ্গী, বন্ধু কিংবা স্বজনের সঙ্গে জরুরি কথাও সেরে নিচ্ছেন।
পার্কের গেট দিয়ে প্রবেশ করে দেখা গেল একের পর এক টুল পেতে ডায়াবেটিস ও প্রেসার মাপার যন্ত্র নিয়ে বসে আছেন কেউ কেউ। অপরদিকে ব্যায়াম সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে, আমরা হাঁটা ছাড়বো না, উজ্জীবন কুমিল্লা, প্রভাতী, মহিলা অঙ্গন ইত্যাদি
অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন ১৯৯১ সাল থেকে ধর্মসাগর পার্কে ব্যায়াম করেন। বর্তমানে বয়স ষাটের ঘর পেরিয়েছে। তার কথায়, তিনি ফজরের নামাজ আদায় করেই ব্যায়াম করতে পার্কে আসেন। নিয়মিত ভোরের ব্যায়ামই তাকে সুস্থ রেখেছে। প্র্রেসার ও ডায়াবেটিস নেই। উপকার আছে বলেই সকালে পার্কে ব্যায়াম করা লোকজনের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেশি।
সোহেল নামে এক প্যারামেডিকেল ডাক্তার নিয়মিত পার্কে ডায়বেটিস মাপার মেশিন নিয়ে বসেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা উৎসব আয়-উপার্জনের পথ খুলে দিয়েছে ধর্মসাগর পার্ক। ব্যায়াম করতে আসা লোকজনের ডায়াবেটিস মেপে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার ভালোই চলছে।
সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ‘শরীর সুস্থ রাখতেই ব্যায়াম করি। একদিন ব্যায়াম না করলে দিনের কোনো কাজেই মনোযোগ দিতে পারি না।’ এসব কথা বলেই তিনি হাসতে শুরু করেন। এরপর জানালেন, হাসি হচ্ছে মনের ব্যায়াম। এতে মন ভালো হয়। হৃৎস্পন্দনও ঠিক থাকে।
এ ব্যাপারে ঢাকা বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ল্যাবরেটরি সার্ভিসেসের পরিচালক অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, ভারী খাবার খেয়ে সকালের ব্যায়াম সারাটা ভালো। ফুসফুস ও হৃৎপিন্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এই ব্যায়ামের ফলে। রক্ত সঞ্চালনও বৃদ্ধি পায়। আর হাসাহাসি করলে ‘এন্ডোরফিনস’ নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়। যেটি মেজাজ শান্ত রাখতে সহায়তা করে।
তিনি আরো বলেন, হাঁটা হলো সব ধরনের ব্যায়ামের মধ্যে সবচেয়ে উপকারী। স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য প্রত্যেকেরই হাঁটা প্রয়োজন। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস রক্ত সঞ্চালন, ফুসফুস ও হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁঁকি কমায়। প্রত্যেকের দিনে ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন হাঁটা উচিত। আর যাদের হাঁটতে কষ্ট হয়, তারা বিরতি নিয়ে হাঁটতে পারেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন