রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ বাড়ছেই

বাংলাদেশের নৌসীমায়

মনিরুল ইসলাম দুলু, মংলা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশের নৌসীমানায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ থামছেনা। গত ৯ অক্টোবর থেকে আগামি ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নিষিদ্ধ রয়েছে মাছ শিকার। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের নৌসীমার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় জেলেরা ফিসিং ট্রলার নিয়ে অনুপ্রবেশ করে বিপুল পরিমাণ ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। শীত মৌসুম পুরোপুরি শুরু না হতেই ভারতীয় এসব জেলেদের অনুপ্রবেশের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের জেলেরা।

স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, আসন্ন মৌসুমে ভারতীয় জেলেদের উৎপাতে দেশি জেলেদের মাছ শিকারের পরিবেশ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে, চলতি অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ৫টি ট্রলারসহ ৬৩ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে নৌ-বাহিনী। পরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের নৌসীমা থেকে ভারতের কাকদ্বীপ এলাকা কাছে হওয়ায় সেখানকার বিপুল সংখ্যক জেলে এদেশের নৌসীমায় মাছ ধরতে আসে। প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি-মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশি জেলেরা বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় ট্রলার ও নৌকায় করে ইলিশসহ সামুদ্রিক নানা ধরনের মাছ আহরণ করে থাকে। সমুদ্র শান্ত থাকায় এ সময়টা জেলেদের মাছ আহরণের উপযুক্ত মৌসুম।

সুন্দরবন উপকূলের মোংলা, রামপাল, শরণখোলা ও দাকোপ উপজেলার কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী অভিযোগ করে জানান, ভারতীয় জেলেদের উৎপাত দিন দিন বেড়ে চলছে। একসময় ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের নৌসীমা ঘেষে বা কিছুটা ভিতরে ঢুকে ইলিশ শিকার করতো। শীত মৌসুম পুরোপুরি শুরু না হতেই বর্তমানে সুন্দরবন উপক‚লীয় এলাকার কাছাকাছি এসে ফিসিং বোট নিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছে ভারতীয় জেলেরা। অধিকাংশ সময়ই তারা গোপনে মাছ শিকার করে চলে যায়। বিদেশী জেলেরা বাইনোকুলার দিয়ে ট্রলারে বসে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর তৎপরতায় চোখ রাখে।

তারা আরো বলেন, নিষিদ্ধ কালীন সময়ে যখন দেশীয় জেলেরা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকছেন সে সুযোগ নিয়ে ভারতীয় জেলেরা এ দেশের নৌসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করছে। দেশীয় নৌসীমায় সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বেশি এবং মাছ খেতে সুস্বাদু -তাই এ সময়টাই মাছ লুণ্ঠনের টার্গেট থাকে ভারতীয় জেলেদের। আর সেই সুযোগ বুঝেই ভারতের জেলেরা অত্যাধুনিক ট্রলার ও মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে বাংলাদেশের নৌসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে। তারা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার দিয়ে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর তৎপরতায় চোখ রাখে এবং নৌ-বাহিনী আসতে দেখলেই দ্রæত পালিয়ে যায়। এ ছাড়া ভারতীয় জেলেরা আধুনিক অত্যাধুনিক ট্রলার, ওয়ারলেস, অত্যাধুনিক জাল, জিপিআরএস ব্যবহার করে থাকে। এসব ছাড়াও ভারতীয় জেলেদের কাছে রয়েছে ‘ফিস ফাইন্ডার’ যন্ত্র। যা দিয়ে সহজেই মাছের অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
সুন্দরবন অঞ্চলে মৎস্যজীবিদের বৃহৎ সংগঠন দুবলা ফিসারম্যান গ্রæপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, প্রায় সারা বছরই ভারতীয় জেলেরা সাগরে টহলরত বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর জাহাজ ও সরকারি বাহিনীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশীয় নৌসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে থাকে। তবে বর্তমানে এসব জেলেদের উৎপাত কয়েকগুন বেড়েছে। এসব ভিনদেশী জেলেরা অনেক সময় দেশীয় জেলেদের মারধর করে মাছ লুট করেও নিয়ে নেয়।

মংলাস্থ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সদর দপ্তরের অপারেশন কর্তকর্তা লে. ইমতিয়াজ আলম জানান, দেশীয় জেলেরা সমুদ্রের ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে মাছ ধরেত পারে। আর ভারতীয় দেশীয় সমুদ্রসীমার প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করে থাকে। তারা দ্রæতগামী নৌযান ও কারেন্ট জালসহ জিপিএস নামক বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে। এসব জেলেদের ধরতে নৌ-বাহিনীর পাশাপাশি আমরাও সাগরে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
কয়েকজন আইনজীবী জানায়, মাছ শিকারে অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় জেলেরা ট্রলারসহ ধরা পড়ার পর আদালতে সাধারণত দিক ভুল করে এ দেশে প্রবেশ করেছে বলে ক্ষমা চেয়ে দেশে ফিরে যায়। প্রায়ই দীর্ঘ সময় এ দেশের কারাগারে আটক থাকতে হয় না বলে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশে নৌসীমায় অনুপ্রবেশ করে অবাধে মাছ শিকারে উৎসাহিত হয় বলে মন্তব্য করেন।

মংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, সর্বশেষ গত ২২ অক্টোবর ভোরে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকা থেকে একটি ট্রলারসহ ১৪ ভারতীয় জেলেকে আটক করে নৌ-বাহিনীর টহল দল। এর আগে গত ১ অক্টোবর ১টি ফিসিং বোটসহ ১৫ জন, ৪ অক্টোবর ২টি ফিসিং বোটসহ ২৩ জন ও ১৪ অক্টোবর ১ টি ফিসিং বোটসহ ১১ জন ভারতীয় জেলেকে বাংলাদেশ নৌসীমা থেকে আটক করা হয় এবং মাছ শিকারের অপরাধে আটক জেলেদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সমুদ্রসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে এ পর্যন্ত আটক জেলেদের সবাই ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে সামুদ্রিক মৎস্য অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ২২ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
সত্য বলবো ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
ভারতীয়রা বাংলাদেশের সব কিছু নিয়ে গেলেও বাংলাদেশ গভমেন্ট এর কিছু করার নেই কিন্তু বাংলাদেশের জেলেরা নদীতে নামলে তাদের জাল পুড়িয়ে ফেলা হয় তাদেরকে আটক করা হয় কেন?
Total Reply(0)
Iftikhar Ahmed ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
দুই দেশের মধ্যে প্রজোযনের সময় কেহই ইলিশ মাছ ধরবে না এই ব্যাপারে সমঝোতা হওয়া উচিত । এতে ইলিশের product বাড়বে এবং দুই দেশই লাভবান হবে।
Total Reply(0)
Alamgir Hossain ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের ইলিশ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
Total Reply(0)
Jashim Uddin ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
আমাদের দেশের মানুষ কে তারা তাদের সীমানার ভিতরে দেখলেই পাখির মত গুুলি করে মারে আর আমাদের কিছুই করার থাকে না আমাদের বি জিরা পতাকা বয়টকের মধ্যে দিয়ে লাশ উপহার নেই আর দুসি হয় ঐ মরা লাশ টা যে সে অবয়দ অনুপবেস কারি বা চুরা কারবারি
Total Reply(0)
Monnu Hossain ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
এটা যদি ভারতের ভিতরে বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরত বিএসএফ ঠিকি গুলি চালাত। সমস্যা নাই তারা আমাদের বন্ধু
Total Reply(0)
Md MostafizurRahman Banijjo ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
যেখানে দেশের জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরলে জেল জরিমানা করা হচ্ছে,সেখানে ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা স্বাধীন দেশের ভূখন্ডে আঘাত করার শামিল।
Total Reply(0)
Manzu Manzu ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
আমরা সমুদ্র জয় করেছি। সে কি আনন্দ উল্লাস। দেখ স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ৮:৩৫ এএম says : 0
আমাদের জেলেদের মাছ ধরা নিষেধ করে ভারতীয় জেলেদের সুযোগ করিয়া দিয়াছে ....................
Total Reply(0)
Nannu chowhan ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:০৫ এএম says : 0
Varotke amader shomudro shima nojordari korar jonno diase eaikhon bastobayon shoru hoy nabasto bayon hole ki hobe? Amader jelera vukha nangga ar amra eai varotio jeleder motsho shompod arohone kono shajar bebosta na korei tader prosry detesi
Total Reply(0)
ahammad ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৪৯ পিএম says : 0
দেশের মানুষ হাজার,বারশ টাকা করে ইলিশ কিনতে হয়েছে। আর বন্দুদেরকে দেওয়া হয়েছিল পাচশ সাত টাকা কেজি দরে। বিনিময়ে বন্দুরা পিয়াজ দেওয়া বন্দ করে দিয়াছে। এিশ টাকার পিয়াজ একশবিশ টাকায় খাচ্ছি। আহাহা কি মজা,, , ,,,,।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন