বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা, বাজার মনিটরিং সেল ও টিসিবির ব্যর্থতা এবং সর্বোপরি ভারত নির্ভরতার কারণেই দেশে এবার পেঁয়াজের দাম সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
গতকাল বৃহষ্পতিবার বাংলাদেশের প্রায় সব হাট বাজারেই খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৪০ টাকা কেজিতে। যা এখন পর্যন্ত পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম বলে জানিয়েছেন বগুড়ার শীর্ষস্থানীয় পেঁয়াজ আমদানীকারক পরিমল প্রসাদ রাজ। তিনি বলেন, আছি অতীতে দু-একবার সামান্য কদিনের জন্য পেঁয়াজের কেজি ওঠে ৭০/ ৮০ টাকা পর্যন্ত। তবে এবার উর্ধ্বগতির রেকর্ড হল ।
তিনি আরো বলেন, বৈরী পরিস্থিতির মধ্যেও মিয়ানমার থেকে ট্রলারের মাধ্যমে কিছু কিছু পেঁয়াজ প্রতিদিনই দেশের বাজারে ঢুকছে। না হলে হয়তো পেঁয়াজের দর ২০০ টাকায় গিয়ে হয়তো ঠেকতো।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে , ৯০ পরবর্তী সময় থেকে পেঁয়াজ ,রশুন ও আদার আবাদে কৃষি বিভাগ তেমন গুরুত্ব দেয়নি। ফলে এই ৩টি মশলার ক্ষেত্রে দেশের বাজার একচেটিয়াভাবে ভারত, মিয়ানমার ও চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, দেশ পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে পড়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন হয় ২৩ লাখ মেট্রিক টন আর বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে ইতোমধ্যেই পেঁয়াজ আমদানী হয়েছে ১০ লাখ মেট্রিক টন । এই তথ্য যদি সঠিক হয় তাহলে দেশের আড়ত গুলোতে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকার কথা নয় পেঁয়াজের এতবেশি দাম বাড়াটাও অস্বাভাবিক।
সঙ্কটের অজুহাতে যখন দেশের পাইকারী আড়ত গুলোতে কেজি প্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ১৩০-১৪০ টাকায়। তখন প্রতিটি আড়তেই দেখা যাচ্ছে বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ, রশুন ও আদায় ভরপুর হয়ে আছে। এমনকি ৭০ / ৮০ টকা দরে বিক্রি হচ্ছে পঁচা পেঁয়াজও ।
আড়তে আদা, রশুন ও পেঁয়াজ কিনতে আসা ক্রেতার সাথে বিষয়টি নিয়ে কাটাকাটি হচ্ছে পাইকারদের। অনেকেই বলছেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজের উৎপাদন না হলে ফেব্রুয়ারী মার্চে দেশী পেঁয়াজের দর কিভাবে ১০/১৫/ ২০ টাকায় নেমে এসেছিল ? ভারত না হয় ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজ রফতানী বন্ধ করেছে তাই বেড়েছে পেঁয়াজের দর। কিন্তু চীন থেকে আমদানী করা রশুন কেন ২০০ টাকায় এবং মিয়ানমার ও ভূটান থেকে আনা আদার দাম উঠেছে ১৮০ টাকায় ?
এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকরা বলছে পুরো ব্যাপারটা সি-িকেটবাজী ছাড়া কিছুই নয়। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাজার মনিটরিং সেল এবং (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ ) টিসিবির ভূমিকা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো।
আমদানীকারকরা যুক্তি দেখিয়ে বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ দেশী পেঁয়াজের মতই। এলসি খোলার সাথে সাথেই ২/৪ দিনের মধ্যে চলে আসে পেঁয়াজ যেটা মিশর ও তুরষ্কের পেঁয়াজ এসে পৌঁছুতে সময় লাগে একমাসের বেশি। এরপর আছে বন্দরের জটিলতা খাতুনগঞ্জের আমদানীকারকদের নানামুখী অপতৎপরতা মোকাবেলা করে বাজারে ছাড়ার সময় ওই পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে সব সময়।
তাই যতদিন দেশ পেঁয়াজ উৎপাদণে চালের মত স্বয়ংস¤পূর্ণ না হবে ততদিন পেঁয়াজের বেলায় ভারত নির্ভরতা থেকে পরিত্রাণ অসম্ভব!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন