শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাড়ছে অনলাইন শপিং

প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪১ পিএম, ১৯ জুন, ২০১৬

কেনাকাটার নয়া মাধ্যম
তরুণ-তরুণীদের আগ্রহ ঘরে বসে ক্রয়
ফারুক হোসাইন : মেয়েকে নিয়ে ঈদের শাড়ি দেখছেন তাহমিনা হক। তবে তা দোকানে বসে নয়, নিজের বাসার কম্পিউটারেই। ইন্টারনেটে কাপড় কেনার একটি সাইট থেকে তারা কাপড়ের রং, ধরন ও দাম যাচাই করছেন। কেন অনলাইনে কেনাকাটার চিন্তা করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যস্ততার কারণে শপিং করার খুব একটা সময় হয়ে ওঠে না। এছাড়া যানজট আর ভিড় ঠেলে মার্কেটে যেতেও ইচ্ছা করে না। ওয়েবসাইটগুলোতে ফোন নম্বর দেয়া থাকে সেখানে তাদের সাথে কথা বলে পণ্য সম্পর্কে আরও বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যায় এবং অর্ডার করার পর কোন ঝামেলা ছাড়াই বাসায় পৌঁছে যাচ্ছে পছন্দের পণ্যটি। তাহমিনা হকের মতো কর্মব্যস্ততার জন্য কিংবা রাস্তার যানজট ঠেলে দোকানে গিয়ে কেনাকাটাকে যারা বিড়ম্বনা মনে করছেন, তাদের জন্য বদলে গেছে কেনাবেচার ধরন। কেনাকাটা করতে এখন আর দোকানে যেতে হচ্ছে না। চাইলে যে কোন পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে হাতে হাতে। অনলাইনে কেনাকাটার প্রতি বেশ কয়েক বছর ধরেই আগ্রহ বাড়ছে দেশের মানুষের। আর ঈদকে সামনে রেখে আরও জমজমাট হয়ে উঠেছে এই মাধ্যম। মাত্র কয়েক বছর আগেও ঈদ শপিং মানেই ছোটবড় বিভিন্ন শপিংমল, বিপণি বিতান ও ফ্যাশন হাউসে ঘুরে ঘুরে পণ্য কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে অনেক ব্যাবসা কার্যক্রম চলছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। পোশাক, দৃষ্টিনন্দন গহনা, ব্যাগ-কসমেটিকস, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও দ্রব্যের পাশাপাশি জায়গা-জমি, ফ্ল্যাট, আসবাবপত্র, মোবাইল, কম্পিউটার, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, নতুন-পুরাতন সব ধরনের পণ্য কেনা বেচা হচ্ছে অনলাইনেই। ক্রেতাকে এখন আর যানজটে আটকে থেকে, মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে ক্লান্ত ও গরমে ঘেমে অস্থির হতে হচ্ছে না। পছন্দের পণ্যটিতে ক্লিক করে অর্ডার করলেই পৌঁছে যাচ্ছে ক্রেতাদের ঘরে ঘরে। ফলে এক দিকে যেমন অনলাইন শপিংয়ের পরিধি ও পরিসর সম্প্রসারিত হচ্ছে অন্যদিকে রাজধানীসহ অন্যান্য শহরের বড় বড় শপিং কমপ্লেক্সেও পড়ছে তার প্রভাব। ঈদের সময় কিছুটা ভিড় থাকলেও অন্যান্য সময় বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কের মতো বড় শপিং মলগুলো অধিকাংশ সময় থাকছে ফাঁকা। যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি অনলাইনের এই দাপাদাপিতেও বাজারে তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। তারা বলছেন, অন-লাইনে বেচাকেনা এমন পর্যায়ে পৌঁছায়নি যে, তার জন্য দোকানে কেনাকাটায় প্রভাব পড়বে। বসুন্ধরা সিটির দোকান মালিক সাইফুজ্জামান বলেন, অন-লাইনে কেনাকাটা এখনও একটা নির্দিষ্ট গ-ির মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাছাড়া এখনও ঘরে বসে কেনাকাটা করার থেকে বাজারে গিয়ে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করার লোকের সংখ্যা অনেক বেশি।
গত কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায় কেনাকাটার যে রীতি ছিল তা এখনও রয়েছে। ক্রেতারা তাদের পছন্দের পণ্য কিনছেন এ মার্কেট থেকে ও মার্কেট ঘুরে। আসছে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রতিটি বিপণিবিতান সেজেছে নতুন সাজে। তবে রমজানের মাঝামাঝি পর্যন্ত এসব মার্কেটে এখনো আশানুরূপ ক্রেতা দেখছেন না বিক্রেতারা। বেচাবিক্রিও প্রত্যাশানুযায়ী হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মার্কেটে ক্রেতার আনাগোনা তুলনামূলকভাবে কম। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে রাজধানীর যমুনা ফিচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি, মোতালেব, ইস্টার্ন প্লাজা, গাউছিয়া মার্কেট, চদ্রিমা সুপার মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, কাঁটাবন মার্কেট, চাঁদনি চক সুপার মার্কেট, আল্পনা প্লাজা, ইস্টার্ন মল্লিকা ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের তেমন একটা ভিড় নেই। বসুন্ধরা সিটিতে থ্রি পিস বিক্রেতা ওয়াবদুল হক বলেন, এখন বিক্রি একটু কম হলেও কয়েকদিন পর থেকেই তা বাড়বে। গাউসিয়ায় শাড়ির দোকানদার মোঃ ইব্রাহীম বলেন, এখনো তেমন বিক্রি বাড়েনি। তবে ১৫ রোজার পর ভালো বিক্রি হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে গতবছরের তুলনায় এবছর তাদের ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ই-কমার্স সংশ্লিষ্টরা। কেনাবেচার জন্য নির্দিষ্ট সাইটগুলোর পাশাপাশি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও জমে উঠেছে এই কেনাবেচা। বিশেষ করে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন পেজ। আর তা থেকেই ক্রেতারা খুঁজে নিচ্ছেন পছন্দের পণ্য। উদ্যোক্তাদের মতে, নতুনদের পাশাপাশি বিশ্বের বড় মাপের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তাদের পণ্যের প্রচারে ব্যবহার করছে ফেইসবুক। অল্প পুঁজিতে, এমনকি বিনা পুঁজিতে এ ব্যবসা করা যায়। ব্যবসা করতে লাগে না কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা পরিচালনা করা যায় ঘরে বসেই। তাই নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে এ মাধ্যমটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আর কেনাকাটায় ঝামেলামুক্ত ও সহজ মাধ্যমে ঝুঁকে পড়ছে নতুন প্রজন্মের একটা বড় অংশ। দোকান, শপিং মলের ভিড় উপেক্ষা কররে বাজার সারছেন বাড়িতে বসেই। অনলাইনের ক্রেতারা বলছেন, অনলাইনে কেনাকাটা করার অনেক সুবিধা আছে। সেখানে নিজের পছন্দ মতো জিনিস বেছে নেয়া যায়। কেউ কিছু নিতে চাপ দেয় না বা বাধ্য করে না। আবার কোনও জিনিস কেনার পরে অসুবিধা হলে বা পছন্দ না হলে টাকা ফেরত ও জিনিস পাল্টে নিতেও কোনও অসুবিধা হয় না।
তবে তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং ই-কমার্স বিশ্লেষকরা বলছেন, গত দুই বছরে রাজধানী ও এর আশপাশসহ বড় শহরগুলোর কেনাকাটার চরিত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে চিরাচরিত বাজারগুলোতে ভিড় কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। তারা বলছেন, ১৬ থেকে ৫৫ বছরের পুরুষ ক্রেতাদের বেশিরভাগই অনলাইনে জিনিস কিনতে পছন্দ করছেন। ঠিক তেমনই ১৬ থেকে ৪৯ বছরের নারীদের কাছেও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে অনলাইনে জিনিসপত্র কেনা। বিশেষ করে সেই নারীরা যাদের পেশাগত কারণে প্রতিদিন বাইরে বেরোতে হয়, খুব দ্রুত হারে বাড়ছে এ পরিমাণও। তারা আরও বলছেন, টেকনোলজির ব্যবহারের ফলে অনলাইনে বেশ কিছুটা কম দামে জিনিস দেয়া সম্ভব, যা কোনোভাবেই সাধারণ দোকানে দেয়া সম্ভব নয়। শুধু পোশাক নয় অন্যান্য জিনিস কেনার ক্ষেত্রেও তাই বাড়ছে অনলাইনের চাহিদা।
অনলাইন বাজারের কয়েকজন ক্রেতা বলেন, মার্কেটে যাওয়ার জন্য জ্যামে আটকে পড়ায় সময়ের অপচয় হচ্ছে। মার্কেটে ও রাস্তায় মানুষের ঠেলাঠেলি তো আছেই। রাস্তাজুড়ে খানাখন্দ, আছে পকেটমারের উৎপাত। এ কারণেই অনলাইনে কেনাকেনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। তারা বলছেন, জায়গা-জমি থেকে শুরু করে পোশাক সবই পাওয়া যাচ্ছে এই বাজারে। রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার-সদাই, ইলেক্টনিক্স পণ্য এমনকি ট্রেন-বাস-প্লেনের টিকিট। ঘরে বসে ইন্টারনেটের বদৌলতে যেখান থেকে খুশি, যখন খুশি পছন্দমতো যে কোনো পণ্যই সহজে কেনা যাচ্ছে।
উদ্যোক্তারাও জানাচ্ছেন, ক্রেতাদের এই আগ্রহে খুশি তারাও। মানুষের জীবযাত্রায় এসেছে পরিবর্তন। সময় বাঁচানো ও নিরাপত্তাজনিত কারণে দিন দিন ক্রেতারা অনলাইন কেনাকাটায় আগ্রহী হচ্ছে। তারা বলছেন, বিভিন্ন মার্কেট থেকে আলাদা আলাদ পণ্য সংগ্রহ করতে হয় ক্রেতাকে। এখানে এক জায়গায়ই সব ধরনের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। এতে ক্রেতাদের সময় অপচয়রোধের পাশাপাশি ঝক্কি-ঝামেলাও কমছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) ও ই-কমার্স এসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে তাদের তালিকাভুক্ত প্রায় ৯ হাজার অনলাইন শপিংয়ে সাইট ও ফেইসবুক ফেইজ রয়েছে। আর এই মাধ্যমে প্রতিবছর লেনদেন হয় ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
অনলাইন কেনাকাটার বিষয়ে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সভাপতি রাজিব আহমেদ বলেন, প্রতিমুহূর্তে, প্রতিবছরই আমাদের অনলাইন কেনাকাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে এই সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ও পেইজের সংখ্যাও। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের তালিকাভুক্ত এক হাজার ওয়েবসাইট ও ৮ হাজার ফেইসবুক পেইজে ক্রেতারা কেনাকাটা করছেন। এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে আরও অনেক সাইট ও পেইজ তো আছেই। একটি অনলাইন শপের মালিক শামীম আহসান জানান, বিশ্বের অন্যান্য দেশে এভাবে কেনাকাটার ধারণা থাকলেও আমাদের দেশে ছিল না। তাই বাংলাদেশের পণ্য দেশ ও বিদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই তারা এই ওয়েবসাইট চালু করেন।
বাংলাদেশে এখন এধরনের ওয়েবসাইটের বাইরেও সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ খুলেও বেচাকেনা হচ্ছে বিভিন্ন জিনিসের। ফেসবুকে এমন একটি পেজের নাম স্টাইল ওয়ার্ল্ড কালেকশন। পেজটিতে গিয়ে দেখা যায়, গতকাল পর্যন্ত ১৫ লাখ ৩৬ হাজারেরও বেশি লাইক রয়েছে। সেখানে মেয়েদের জন্য শাড়ির বিপুল সমাহার। পাশাপাশি ছেলেদের পোশাকও রয়েছে। এই একি নামে গুলশানের একটি শপিং মলে তাদের দোকান রয়েছে। স্টাইল ওয়ার্ল্ডের মালিক মিস পলি বললেন, ২০০৫ সাল থেকে তিনি ঐ শপিংমলে দোকান দিয়েছেন। বেচাকেনা খুব একটা খারাপ ছিল না। তবে গত তিন বছর হল তিনি ফেসবুকে একটি পেজ খুলো তার দোকানের সব পণ্যের ছবি আপলোড করাতে বিক্রি বেড়েছে কয়েক গুণ।
এবিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বেসিস-এর সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর জানান, অনলাইনে সবচেয়ে বড় সুবিধা ক্রেতারা যেটা পাচ্ছেন, সেটা হল ঘরে বসে অর্ডার দিয়ে ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছেন। আর অনেক ক্ষেত্রে এই দাম শপিংমলের দামের থেকেও কম থাকায় ক্রেতারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
ফাহিম ২০ জুন, ২০১৬, ২:৩১ পিএম says : 0
দেশ ডিজিটাল হচ্ছে
Total Reply(0)
s.r tufahyl ২২ অক্টোবর, ২০১৭, ৭:১০ পিএম says : 1
আমি একটি জুতা কিনব
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন