বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

উপমহাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার ও স্বরূপ

প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ড. এ এইচ এম মোস্তাইন বিল্লাহ

॥ শেষ কিস্তি ॥
দীর্ঘ মেয়াদে বৃটিশ উপনিবেশিক শিক্ষানীতি বিশেষত শিক্ষাকে পাশ্চাত্যকরণ করা, যাকে তারা “ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা” ব্যবস্থা বলে অভহিত করেছিল, এর দুটি প্রত্যক্ষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়: প্রথমত শিক্ষা ব্যবস্থাকে দ্বিধা বিভক্ত করা যা হালে বামপন্থিরা/নাস্তিকরা অত্যন্ত জনপ্রিয় শ্লোগান হিসেবে ব্যবহার করছে যেমন একটি ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা অন্যটি ধর্মীয় শিক্ষা। এভাবে শিক্ষা একটি ব্যক্তি মালীকানা বিষয় হয়ে যায় (ঝরশধহফ ২০০৫ : ৬৫ জরুধ ২০১০ : ৭৯)
উপসংহার
মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারে প্রথম সমস্যাটি ছিল শিক্ষার মাধ্যম ফার্সি ভাষার বদলে ইংরেজি ভাষা চালু করা। বৃটিশরা সরলমনা ভারতবাসিকে সুকৌশলে পরাধীন জাতিতে পরিণত করেছিল। বিদ্যমান মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ও কারিকুলাম পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে বৃটিশ পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রেও চক্র থেকে এখন ও মুক্ত হওয়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়া অন্যতম প্রধান বিপত্তি সংযুক্ত হয়েছে মাদ্রাসায় ভাষা জ্ঞান নিয়ে। বৃটিশরা অত্যন্ত সাফল্যের সাথে ইংরেজি ভাষাকে শুধু এই উপমহাদেশে শিক্ষার মাধ্যম করেছে তা নয়, সারা পৃথিবীব্যাপী ইংরেজি ভাষাকে বাণিজ্যিকীকরণে আধিপত্য স্থাপন করেছে। তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান গবেষণার সকল বিষয়ে সর্বত্র ইংরেজি ভাষার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। উন্নয়নের অপ্রতিরোদ্ধ অগ্রযাত্রার অবস্থার প্রেক্ষাপটে মাতৃভাষার পাশাপাশি পৃথিবীর সকল দেশেই ইংরেজি ভাষাকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভবিষ্যতের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি ভারতের দিকে তাকালে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় বলিউড ও গানের মাধ্যমে নিজেদের ভাষাকে বাণিজ্যিক করলে ও ইংরেজি শিক্ষায় তারা তাদের শিক্ষা ও মননকে বহু শক্তিশালী করেছে।
বিশ্বায়নের যুগে বাস্তবতার নিরিখে বিশ্বনন্দিত (নবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ও ইউনুসদের) মাতৃভাষাকে বাণিজ্যিকীকরণের জন্য সকল গবেষণার ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও তার উন্নয়নে ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ও আরবি ভাষায় আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা অর্জন করা ও মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকায়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে। তাছাড়া বিজ্ঞান ও কোরানকে আলাদাভাবে অধ্যয়ন করলে শিক্ষায় বর্তমান বৈষম্য থেকেই যাবে। পবিত্র কোরানে ভ্রুণ তত্ত্বের সকল প্রসঙ্গ ও সকল বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে, তার সাথে বিজ্ঞানের আবিষ্কার মিলিয়ে পড়লেই জীববিজ্ঞান পাঠ পূর্ণতা পেতে পারে । সেজন্য কোর’আন ও জীববিজ্ঞান আলাদা দু’টি বিষয় পড়ার প্রয়োজন নাও হতে পারে। জীববিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনুরূপ আরো বহু বিষয়দি রয়েছে। যেমন মে’রাজের বিষয়াদি, বিগ ব্যাঙগ থিওরি কোরআন এবং পদার্থ বিজ্ঞানের সাথে মিলিয়ে পড়া যেতে পারে।
প্রশ্ন থেকে যায় পাঠ্যপুস্তকের এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ভাষায় উচ্চমানের শিক্ষাগ্রন্থ নেই, সেজন্য মাতৃভাষার উচ্চশিক্ষা দেয়া সম্ভব নয়। এ খোড়া যুক্তি প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ উত্তর দিয়েছিলেনঃ ১৩২২ সালে “শিক্ষার বাহন” প্রবন্ধে তিনি লিখেন- “আমি জানি তর্ক এই উঠিবে, তুমি বাংলা ভাষার যোগে উচ্চ শিক্ষা দিতে চাও কিন্তু বাংলা ভাষায় উঁচুদরের শিক্ষা গ্রন্থ কই? না সে কথা মানি কিন্তু শিক্ষা না চলিলে শিক্ষাগ্রন্থ হয় কি উপায়ে? শিক্ষা গ্রন্থ বাগানের গাছ নয় যে, শৌখিন লোকে শখ করিয়া তার কেয়ারি করিবে, কিংবা সে আগাছাও নয় যে মাঠে ঘাটে নিজের পুলকে নিজেই কাইকিত হইয়া উঠিবে। শিক্ষাকে যদি শিক্ষা গ্রন্থের জন্য বসিয়া থাকিতে হয়, তবে পাতার যোগার আগে হওয়া চাই, তার পরে গাছের পালা এবং কুলের পথ চাহিয়া নদীকে মাথায় হাত দিয়া পড়িতে হইবে।” বাংলায় উচ্চ অঙ্গের শিক্ষাগ্রন্থ বাহির হইতেছে না, এটা যদি আক্ষেপের বিষয় হয়, তবে তার প্রতিকারের একমাত্র উপায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা উচ্চ অঙ্গের শিক্ষা প্রচলন করা। (১০৮) [* শিক্ষার বাহন (১১জ) ৬৪৪-৬৪৫)। তদুপরি ইন্টারনেটের যুগে এসব বিষয়ের উপর প্রবন্ধের সহজ লভ্যতার কথা অস¦ীকার করা অনুচিত হবে। সর্বোপরি প্রয়োজন উদ্যোগ ও সদিচ্ছার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন