আল্লাহ তা’য়ালার সর্ব শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হচ্ছে মানুষ। মানুষের এই একক শ্রেষ্ঠত্ব লাভের কারণ; মানুষের রয়েছে বিবেকবোধ, ন্যায়বোধ ও মনুষ্যত্ববোধ। আর মনুষ্যত্ববোধ অর্জনের সর্বশ্রেষ্ঠ হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষা মানবতার চারিত্রিক উৎকর্ষ লাভের মাধ্যম ও আতœপলদ্ধির ও চাবিকাঠি। আতœবিকাশ ও সুকোমলবৃত্তির পরিস্ফুটন ও জীবনের সকল সমস্যার দিক নির্দেশক। মানব জাতিকে নৈতিক শিক্ষার পবিত্র স্পর্শে একটি সুসভ্য ও সুশীল মানবিক গুণ সম্পন্ন জাতিতে পরিণত করতে যে মহামানব শ্রেষ্ঠ শিক্ষক রূপে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন তিনি হলেন আরবের নবী, মানবতার মহান শিক্ষক হযরত মুহাম্মদ (সা:)।
হযরত মুহাম্মদ (সা:) ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শবান শিক্ষক। কোন শিক্ষক যদি, তার আদর্শ খুঁজে পেতে চায় তবে, দারুল-আরকামে শিক্ষাদান রত বিশ্বনবী (সা:) ই হবে তার জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। আর এ সম্পর্কে তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন- “ আমি শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি। যাতে মানব জাতিকে উত্তম চরিত্রের শিক্ষা প্রদান করতে পারি” (তিরমিযী)।
শিক্ষা তথা জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে হযরত মুহাম্মদ (সা:) যা কিছু বলেছেন, পৃথিবীর কোন ধর্মগ্রন্থ কিংবা কোন মনীষীর উক্তিতে তা খুঁজে পাওয়া যাবে না। জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে ইসলামের নবী রাসূলে আকরাম (সা:) রেখে গেছেন অনুপম এক উৎসাহের বাণী। সমগ্র আরব ভূখন্ড যখন জাহিলিয়্যাতের ঘোর অমানিশায় আচ্ছাদিত; ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি দ্ব্যার্থ কন্ঠে ঘোষণা কররেন- “জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর উপর ফরজ” (বায়হাকী ঃ ১৬১৪)। এমনকি হেরা গুহায় ধ্যানরত নবী (সা:) এর নিকট হযরত জিব্রাইল (আ) সর্বপ্রথম যে আসমানী পয়গাম নিয়ে এসেছিলেন তা ছিল- “পড় তোমার প্রভুর নামে”। কেননা পড়া ব্যতিত কোন জাতির সুপ্ত মেধার বিকাশ ঘটতে পারে না, পৌঁছাতে পারে না উৎকর্ষতার চরম সোপানে। এ মর্মে পবিত্র কোরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছে- “ যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে”? (সূরা যুমার ঃ ৩৯ঃ৯)
শিক্ষাকে সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছাবার লক্ষে হযরত মুহাম্মদ (সা:) ঘোষণা করেছেন একের পর এক উৎসাহের বাণী। তিনি বলেন- “ একজন ইলমহীন আবেদের চেয়ে একজন আলেম (জ্ঞানী) ব্যক্তির মর্যাদা তত বেশী, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নি¤œতম ব্যক্তি অপেক্ষা আমার মর্যাদা যত বেশী” (মেশকাত)।
জ্ঞান অন্বেষণের পথকে নবী (সা:) জান্নাতের পথ বলে ঘোষণা করেন। নবী করীম (সা:) বলেন “ আসমান ও জমিনে অবস্থানকারী সকলেই এমনকি গভীর পানির মাছও জ্ঞান অন্বেষণকারীর জন্য দোয়া করে” (মেশকাত)।
হযরত মুহাম্মদ (সা:) জ্ঞান চর্চার ব্যাপারে শুধু অনুপ্রেরণাই দেননি বরং পরকালীন পুরস্কারের কথা বলে জ্ঞান চর্চার ব্যাপারে আমাদেরকে করে গেছেন প্রলুব্ধ। হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন- “যখন মানুষ মরে যায়। তখন তার আমল ও সওয়াবের ধারা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন ধরণের আমলের সওয়াব সর্বদা অব্যাহত থাকে।যথা-১. সদকায়ে জারিয়াহ ২. এমন জ্ঞান যা দ্বারা মানুষের কল্যাণ সাধিত হয় ৩.সুসন্তান যে তার জন্য দোয়া করে” (মুসলিম)। রাসূলে করীম (সা:) শিক্ষার দ্বার উন্মক্ত করে বিরল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। আজও যদি কেউ তার শিক্ষার আদর্শকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যায় তবে তিনি সাফল্যের স্বর্ণ শিখড়ে উপনীত হতে পারবেন। জ্ঞান সাধক হযরত মুহাম্মদ (সা:) শিক্ষার আলো দিয়ে একটি বর্বর-উগ্র ও অশিক্ষিত জাতিকে সুশিক্ষিত ও সুসভ্য জাতিতে রুপান্তরিত করে এমন এক আদর্শ সমাজ নির্মাণ করেছিলেন; যার সুফল সমাজের প্রতিটি তন্ত্রিতে তন্ত্রিতে ফল্গু ধারার ন্যায় প্রবাহিত হয়েছিল। তিনি তৎকালীন মুসলমানদের মনে জ্ঞান চর্চার যে আকর্ষণ সৃষ্টি করেছিলেন তা সত্যিই বিরল। এমনকি আব্বাসীয় শাসনামলে ও পরবর্তী মুসলমানেরা যে জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম শিখরে আরোহন করেন, তার মূলেও ছিল হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর জারিকৃত জ্ঞানান্বেষণের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন