সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নৈরাজ্যের অপচেষ্টা

সড়কে নতুন আইন কার্যকর

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

সংসদে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাসের পর পরিবহন মালিক শ্রমিকদের এক বছর সময় দিয়ে কার্যকর করা হচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার বদলে পরিবহণ শ্রমিক ও মালিকদের একটা অংশ সড়ক-মহাসড়কে নৈরাজ্যের অপচেষ্টা শুরু করে।ে আইনটি কার্যকরের প্রথম দিনই খুলনা বিভাগ ও রাজশাহী বিভাগের পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা মুখে নতুন আইন বাস্তবায়নে সরকারকে সহায়তার কথা বললেও পর্দার আড়ালে তাদের ইন্দনেই দুই বিভাগে অনির্দিষ্ট কারের জন্য বাস ধর্মঘট করেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা নতুন আইন বাস্তবায়নে সহায়তা করতে চাই। তবে তা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা উচিত। আমি বিভিন্ন জেলায় যোগাযোগ করে বলেছি, ধর্মঘট আহ্বান না করতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েই বিভাগীয় পর্যায়ে বাস ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। মূলত গত বছর সড়কে শৃংখলা আনার লক্ষ্যে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। অতপর এক বছর সময় দিয়ে পহেলা নভেম্বর আইনটি বাস্তবায়ন শুরু হয়। প্রথম সাপ্তাহে শুধু পরিবাহন শ্রমিক ও পথচারীদের সচেতনতার উদ্যোগ নেয়া হয়। অতপর এই সময় আরো এক সাপ্তাহ বৃদ্ধি করা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের নতুন আইন বাস্তবায়নে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশনা দেন। তারপরও দুই বিভাগে বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়ে কার্যত সরকারের প্রতি ‘নতুন আইন বাস্তবায়ন’ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া হলো। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, নতুন আইন বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করছেন তারা সকলেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোক। নিজ দলের লোকজন সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে সড়ক-মহাসড়কে অতীতের নৈরাজ্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত শুদ্ধি অভিযানে যুবলীগের পাশাপাশি পরিবহণের মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পরিবহন সেক্টরে শুদ্ধি অভিযান শুরু হলেই সড়কে নতুন আইন বাস্তবায়ন সহজ হয়ে যাবে।

আইন কার্যকরের প্রথম দিন গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছে বিআরটিএ। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে সংস্থাটির ৬টি আদালত বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ৮৮টি মামলা এবং ১ লাখ ২১ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করেছে। সড়ক ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন আইন যথাযথ বাস্তবায়ন ও কার্যকর করা সম্ভব হলে জনদুর্ভোগ অনেক কমবে। তবে অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং লাইসেন্স প্রাপ্তিসহ অন্যান্য বিষয় সহজ করা না হলে নতুন আইনের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এদিকে সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করার প্রতিবাদে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। সকাল থেকে প‚র্ব কোন ঘোষণা ছাড়াই এই কর্মবিরতি পালন করছে তারা। নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার পরিবহন শ্রমিকরা এই কর্মবিরতি পালন করছেন।

খুলনা বিভাগীয় শ্রমিক ফেডারশনের যুগ্ম সম্পাদক মোর্তজা হোসেন বলেন, শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় এই কর্মবিরতি পালন করছেন। তবে তারা কাউকে ইচ্ছা করে হত্যা করে না। অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার জন্য নতুন সড়ক আইনে তাদেরকে ঘাতক বলা হচ্ছে। তাদের জন্য এমন আইন করা হয়েছে যা সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নতুন আইন বাস্তবায়নে হয়রানি কিংবা বাড়াবাড়ি না করে জনগণকে আইন মানাতে সচেতন করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

নানা জল্পনা-কল্পনার পরে সড়ক পরিবহন আইন পাস হওয়ার এক বছর পার হলেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি মোটেও। মোটরসাইকেল চালক-আরোহীরা হেলমেট ব্যবহারসহ কিছুটা আইন মানলেও গণ পরিবহনের চরিত্র খুব একটা বদলায়নি। ফিটনেসবিহনীন গাড়ি, চালক ও গাড়ির লাইসেন্স না থাকা, যত্রতত্র গাড়ি থামানো, পথচারীদের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার, ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করাসহ নানা অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা চোখে পড়েছে আগের মতোই। এছাড়া নতুন কার্যকর শুরু না হতেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কোন রকম ঘোষণা ছাড়াই অনিময়মতন্ত্রিক পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছে চালক-শ্রমিকরা।

বিআরটিএর উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সংসদে পাস হওয়ার এক বছরের বেশি সময় পর গত ১ নভেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করে সরকার। তবে নতুন আইনে মামলা ও শাস্তি দেওয়ার কার্যক্রম মৌখিকভাবে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেন সড়কমন্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। এই দু’সপ্তাহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মোড়ে মোড়ে নতুন আইন সম্পর্কে মাইকে প্রচারের পাশাপাশি প্রচারপত্রও বিলি করা হয়েছে। তবে গতকাল থেকে প্রয়োগ শুরু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সোমবার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর ৬টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন যানবাহনকে ৮৮টি মামলা ও ১ লাখ ২১ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়। তিনি বলেন, রাজধানীর উত্তরা, বনানী, মতিঝিল, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী ও মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।

সোমবার বেলা ১১টায় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ সাদিয়া তাজনীন বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইনের প্রয়োগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে প্রথম দিন হিসেবে জরিমানার ক্ষেত্রে ‘সর্বোচ্চ জরিমানা’ প্রয়োগ না করে সচেতনতার জন্য আইনের মধ্যে থেকেই ‘কম জরিমানা’ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অভিযানকালে ফিটনেস, কালার, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ট্যাক্স টোকেন, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স এসব বিষয় দেখা হচ্ছে। এসবের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় পেলেই কেবল মামলা দেওয়া হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ বলেন, বাসের ভেতরে ভাড়ার তালিকা না রাখা, হাইড্রোলিক হর্ন থাকা, নারীদের জন্য আসন বরাদ্দ না রাখার মতো অপরাধে জরিমানা করা হয়েছে।

তবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকালে যানবাহনের কাগজ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় অনেক যাত্রীকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করতে দেখা গেছে। উত্তরাগামী এক যাত্রী বলেন, সিটিং সার্ভিসের কথা বলে ভাড়া আদায় করলেও পথে পথে যাত্রী তুলেছে হেলপার। অপর এক যাত্রী বলেন, বাসের ভেতরে বসলে আর নড়াচড়া করা যায় না। তিনি বলেন, সিটে কেউ বমি করে গেলেও পরিষ্কার না করে যাত্রী তোলা হয়েছে।

দুপুরের দিকে মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় একটি বাস থামানো হলে ভ্রাম্যমান আদালত বাসের ভেতরে গিয়ে সংরক্ষিত আসনে নারী যাত্রী আছে কি না এবং বাসটির ফিটনেস যাচাই করেন। বিকাশ পরিবহনের একটি বাস থামানো হলে আদালত দেখেন- গাড়ি এবং চালকের কোনো কাগজপত্রেরই মেয়াদ নেই। বাসটি জব্দ করা হলে যাত্রীরা সবাই নেমে যান। বাসের চালক শিবলু রহমান বলেন, তার লাইসেন্স নবায়নের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। নতুন আইন জানতেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গাড়ি নিয়ে চলাচলের বিষয়ে আইন হইছে সেটি জানি, কিন্তু মালিক গাড়ি নিয়ে নামতে মানা করেননি তাই নেমেছেন।

কাকলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পথচারীরা সিগন্যাল না মেনেই যাচ্ছেতাইভাবে রাস্তা পার হচ্ছেন। ট্রাফিক সার্জেন্ট আফসানা ফেরদৌস বলেন, সকাল থেকে কয়েকবার গাড়ি থামিয়ে পথচারীদের পার করে দেওয়া হয়েছে। একজন-দু’জন করে আসতেই থাকে। সবার জন্য যদি গাড়ি থামাতে গেলে তো সড়কে গাড়িই চলবে না। তিনি বলেন, পথচারীরা ফাঁক পেলেই সড়কের মাঝ দিয়ে দৌঁড় দেয়। তাদের সামলানো খুবই কঠিন। কাকলীতে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, প্রথম দিনে হিসেবে পথচারীদের কোনো শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের আইন মানতে বোঝানো হচ্ছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালত থেকে কয়েক গজ দূরে বাসস্ট্যান্ডে চালকের সহকারীরা চালকদের সড়কের ডান দিক দিয়ে চলে যেতে বলছেন, যাতে আদালতের সামনে না পড়েন। এ ছাড়া আদালতের সামনে এসে দেখছিলেন মো. মনিরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে বঙ্গবন্ধু পরিবহনের মালিক পরিচয় দিয়ে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, আমাদেরও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা আছে তবে আমাদের কথা কেউ বলে না। সব জগাখিচুড়ি অবস্থা। যা যায়, সব মালিকের ওপর দিয়া। তার অভিযোগ, মামলার পর মামলা হয়, কিন্তু দ্রুত ফয়সালা হয় না। চালকদের লাইসেন্স প্রক্রিয়া নিয়েও বিআরটিএর ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি বলেন, একটা লাইসেন্স করতে সাত-আট হাজার টাকা লাগে। ড্রাইভার গরিব হওয়ায় এত টাকা তারা কোথায় পাবে। এছাড়া একবার নবায়ন করতে দিলে দিনের পর দিন পার হয়ে যায় কিন্তু কাগজ আর বাইর হয় না। আবার রাস্তায় নামলেই মামলা দেয়।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রথমে সহনীয় পর্যায়ে কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ আইন বাস্তবায়নে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যেন হয়রানি কিংবা বাড়াবাড়ি না করে, সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক ইস্যুতে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, নতুন আইনে জরিমানা আদায় করা মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, সরকার চায়- সবাই আইন মেনে চলুক। নতুন সড়ক পরিবহন আইনের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই প্রধান উদ্দেশ্য।

সেতুমন্ত্রী বলেন, আইনটি কার্যকরে অনেকেই আরও বেশি সময় চেয়েছিলেন, কিন্তু আমি তাতে রাজি হয়নি। প্রধানমন্ত্রীও আইনটির বাস্তবায়ন চান। তাই আইনটি কার্যকর করতে শুরু করেছি। প্রথম পর্যায়ে আইনটি সহনীয় পর্যায়ে কার্যকর করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও এ আইনে শাস্তি দেয়া যাবে- এ বিষয়ে রোববার একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। তবে আইনটির বিধিমালা প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, নতুন সড়ক আইনে ১৪টি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে আইনে থাকা বিভিন্ন বিষয়ের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এর পরের অধ্যায়গুলোতে যানবাহন ও চালকের যাবতীয় দলিল সংগ্রহ এবং করণীয় সম্পর্কে বলা আছে। এরপর বিআরটিএ’সহ পরিবহন সংশ্লিষ্ট সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া কী করলে আইন অমান্য হয়, তার বর্ণনা আছে। আর শেষের দিকে আইন অমান্যের দায়ে কী শাস্তি হবে, সেটার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। যানবাহন, চালক ও প্রতিষ্ঠানসম্পর্কিত অধ্যায়গুলোতে আগের আইনের চেয়ে খুব বেশি পার্থক্য নেই। ফলে যানবাহনের নিবন্ধন প্রদান, ফিটনেস সনদ হালনাগাদ, চালকের লাইসেন্স প্রদানসহ দৈনন্দিন কাজ নতুন আইন ও পুরোনো বিধিমালার আলোকে চলছে।

এদিকে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর করতে চাইলেও তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিকরা অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট ডেকে সরকারকে জিম্মি করে আইনের বিভিন্ন ধারা সংশোধন করতে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা এরই মধ্যে নতুন আইনে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে এমন অপপ্রচার চালিয়ে এসব ধর্মঘট, কর্মবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন আইনে ভুল স্থানে পার্কিংয়ের জন্য আগের আইনের চেয়ে ১০ গুণ বেশি জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু ঢাকার পার্কিং নীতিমালাও দেড় বছরে অনুমোদন হয়নি। আইন হওয়ার পর সেবাগ্রহীতারা ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস সনদসহ বিভিন্ন সেবার জন্য বিআরটিএর কার্যালয়গুলোতে ভিড় করছেন। তবে জনবল সংকটসহ বিভিন্ন কারণে সেবা ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হচ্ছে। বিআরটিএতে জনবল আছে ৮২৩ জন। এর সঙ্গে আরো দুই হাজার ২৫০ জন জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পদ আছে ১৩টি। কিন্তু বর্তমানে ১১ জন কাজ করছেন। এছাড়া মামলা করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পজ মেশিনও পরিপূর্ণভাবে হালনাগাদ করতে পারেনি ট্রাফিক পুলিশ।

পরিবহন নেতারা বলছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করতে পারছে না বিআরটিএ। ফিটনেস সনদ হালনাগাদসহ বিভিন্ন সেবা যথাসময়ে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে যারা আইন মানতে কাগজপত্র পেতে চায় তাদের তা সংগ্রহ করতে সময় দিতে হবে। না হলে জরিমানার ভয়ে গণপরিবহন রাস্তায় কম বের হবে।

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, আমরা সড়ক মন্ত্রণালয়ে দুই মাস পর আইন প্রয়োগের আবেদন জানিয়েছি। কারণ নতুন আইনের বিষয়ে মালিক-শ্রমিকদের আরো সচেতন হতে হবে। এ ছাড়া বিআরটিএতে যথাসময়ে সেবা পাচ্ছি না। এ জন্য সময় বাড়ানো দরকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Ahammed Akash ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৮ এএম says : 0
ভালো হয়েছে এই ধরনের শক্ত আইন না করলে মানুষ ট্রাফিক আইন মেনে চলবে না
Total Reply(0)
Ahammed Akash ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৯ এএম says : 0
আমাদের সকলের উচিৎ ট্রাফিক আইন মেনে চলা । আমরা সকলে যদি ট্রাফিক আইন সঠিক ভাবে মেনে চলি তাহলে তো কোন ফাইন দেবার ই প্রয়োজন নেই
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৯ এএম says : 0
৭৯ বছরের পুরনো মোটরযান অধ্যাদেশ বাতিল করে নতুন এ আইনে বেপরোয়া গাড়িচালকের কারণে মৃত্যু হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আমি মনে করি বর্তমান সময়ের জন্য এটা যথোপযুক্ত ।
Total Reply(0)
Kajal Sharma ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৯ এএম says : 0
পুলিশের অল্প সময়ে বেশি কামাই করার ব্যবস্থা করলেন সরকার ।
Total Reply(0)
Rasel Bin Nur ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪১ এএম says : 0
সড়ক-মহাসড়কে চালক এবং সাধারণ জনগন সবাইকে আইন মানতে বাধ্য করা হোক, প্রয়োজনে জেল জরিমানা করা হোক....
Total Reply(0)
Saiful Islam ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪২ এএম says : 0
দেশের আইন শক্তিশালী দেশ শক্তিশালী । Singapore and Malaysia তাদের আইন দেখেন কি শক্তিশালী ।
Total Reply(0)
Mohiuddin Mamun Majumder ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৩ এএম says : 0
এই নতুন সড়ক আইন করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।‌কিন্তু ভি,অাই,‌পি নামধারীরা যেন উ‌ল্টো প‌থে যে‌তে না পা‌রে সে ব্যাপা‌রে কতৃপ‌ক্ষ্যের নজর রাখ‌তে হ‌বে
Total Reply(0)
Kazi Abu Sayed Rintu ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৩ এএম says : 0
মোটরসাইকেলে ৩ জন উঠলে জরিমানা কিন্তু বাসে যাত্রী দারা করিয়ে নিলে বা ৩০সিটের বাসে যখন ৫০ সিট বসানো হয় বা ৫ টনের ট্রাকে যখন ১০ টন ভরা হয় তাদের জন্য কি আইন করা হয়েছে জাতী তা জানতে চায়
Total Reply(0)
লোকমান ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১০:৪৩ এএম says : 0
নতুন আইনের বিষয়ে মালিক-শ্রমিকদের আরো সচেতন হতে হবে।
Total Reply(0)
আসমা ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১০:৪৩ এএম says : 0
প্রশাসন কঠোর হলে এদের দমন করতে সময় লাগবে না।
Total Reply(0)
MD HANIF MIAH ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১০:৫৪ এএম says : 0
৭৯ বছরের পুরনো মোটরযান অধ্যাদেশ বাতিল করে নতুন এ আইনে বেপরোয়া গাড়িচালকের কারণে মৃত্যু হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আমি মনে করি বর্তমান সময়ের জন্য এটা যথোপযুক্ত ।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন