মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর ঢাকা-দিল্লি-লাহোর

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ঢাকার নাম বারবার উঠে আসছে। দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষ স্থানটি ছয়টি শহরের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। কখনো ঢাকা, আবার কখনো দিল্লি-লাহোর। এছাড়া করাচি, কলকাতার নামও রয়েছে শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায়। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে এসব শহরের নাম ওঠানামা করছে। শীর্ষ ১০ দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় চীনের বেইজিং, মঙ্গোলিয়ার উলানবাটর, উজবেকিস্তানের তাসখন্দ ও ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরের নাম আসবে। বিশ্বের বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বায়ুদূষণের ঝুঁকিবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্বের যে পাঁচটি দেশের শতভাগ মানুষ দূষিতবায়ুর মধ্যে বসবাস করে, তার একটি বাংলাদেশ।

ঢাকা শহরের বায়ুর মান এক মাস ধরেই অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। তবে তা বিভিন্ন সময়ে বদলাচ্ছে। কখনো অস্বাস্থ্যকর, কখনো বা খুবই অস্বাস্থ্যকর, আবার কখনো মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে এই শহরের বায়ু। তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে শহরের বাতাসে ভাসমান বস্তুকণা পিপিএম ২.৫ ও পিপিএম ১০-এর পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। শহরের চারপাশের ইটভাটার ধোঁয়া, শহরজুড়ে নির্মাণ কাজের খোঁড়াখুঁড়ি আর যানবাহনের কালো ধোঁয়া এসব দূষণ ঘটাচ্ছে।

এয়ার ভিস্যুয়াল নামের সংস্থাটি ঢাকার মোট ছয়টি স্থানের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে থাকে। গুলশান, মিরপুরের রোকেয়া সরণি, বারিধারা, উত্তরা ও নর্দ্দা এলাকায় বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে স্থাপন করা যন্ত্র থেকে তারা ঢাকার বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এসব স্থানে স্থাপন করা যন্ত্র থেকে প্রতি ঘণ্টায় পাওয়া তথ্য তারা তাদের ওয়েবসাইট ও অ্যাপসের মাধ্যমে তুলে ধরে। ওই পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকে বেলা একটা পর্যন্ত রাজধানীর সবচেয়ে দূষিত বায়ু ছিল গুলশান এলাকায়। সেখানকার বায়ুর মানের সূচক ছিল সর্বোচ্চ ২৪০ পিপিএম থেকে ১৮০ পিপিএম পর্যন্ত। তা খুবই অস্বাস্থ্যকর। এর পর পর্যায়ক্রমে খারাপ ছিল মিরপুরের রোকেয়া সরণি, বারিধারা ও উত্তরা এলাকার বায়ুর মান। তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে কম দূষিত ছিল নর্দ্দা এলাকার বায়ুর মান।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুর মান বিভাগের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, তাপমাত্রা কমতে থাকলে বাতাসে ভারী বস্তুকণার পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে বাতাস দূষিত হতে শুরু করে। কোনো একটি একক সংস্থা বা উৎস থেকে রাজধানীর বায়ুদূষণ হচ্ছে না। নানা উৎস থেকে দূষণকারী পদার্থ বের হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের বায়ুতে মিশছে। ফলে পরিবেশ অধিদপ্তরের একার পক্ষে এসব উৎস বন্ধ করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, আমরা ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। তবে সরকারের অন্য বিভাগগুলোকে যুক্ত করে তাদের দূষণ কমানোর বিষয়টি যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণের জন্য দেশের ১১টি জেলায় পর্যবেক্ষণযন্ত্র বসানো হয়েছে। ওই যন্ত্রের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী গত অক্টোবর থেকে রাজধানী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদীর বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। গতকাল ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, সাভারের বায়ু ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। আর কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রাজশাহীর বায়ু ছিল অস্বাস্থ্যকর। মাঝারি মানের বায়ুর মান ছিল সিলেট, চট্টগ্রাম শহরে। খুলনা শহরের বায়ুর সাবধান থাকার মতো। পরিবেশ অধিদপ্তরের বাতাসের মান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছর ১৯৭ দিন রাজধানীবাসী দূষিত বাতাসে ডুবে ছিল। আগের বছরগুলোতে রাজধানীর বাতাস বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১২০ থেকে ১৬০ দিন দূষিত থাকত। অর্থাৎ ঢাকার বায়ুদূষণ সময়ের বিবেচনায়ও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুল মতিন বলেন, বায়ুদূষণ রোধে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই। আমাদের এখানে এখনো বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনটাই হয়নি। আর ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ শহরের বায়ুদূষণের উৎসগুলো আমরা জানি। স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগে তা দূর করা সম্ভব। যেমন শীতকালে রাজধানীর চারপাশে শতশত অবৈধ ইটভাটা থেকে বায়ুদূষণ হয়। এ সময় বিভিন্ন স্থানে নির্মাণকাজের ধুলা বেড়ে যায়। এমনকি মেট্রো রেলের মতো সরকারের বড় প্রকল্পগুলো থেকেও প্রচুর ধুলা বের হচ্ছে। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণে কোনো সরকারি দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখি না। যানবাহন থেকে কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণেও কাউকে মাঠে দেখা যায় না। তাহলে বায়ুদূষণ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে। বাযুদূষণ রোধ করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সক্রিয় এবং যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।

বৈশ্বিক বায়ুদূষণের ঝুঁকিবিষয়ক ‘দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের যে পাঁচটি দেশের শতভাগ মানুষ দূষিত বায়ুর মধ্যে বসবাস করে, তার একটি বাংলাদেশ। আর বায়ুদূষণজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পঞ্চম। এ কারণে ২০১৭ সালে দেশে মারা গেছে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ। বিশ্বে বায়ুদূষণের কারণে হৃদরোগ, শ্বাসকষ্টজনিত জটিল সমস্যা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও ক্যানসারের মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষত শিশু ও গর্ভবতী নারীরা বায়ুদূষণের সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছেন। ইটভাটা, অবকাঠামো নির্মাণ ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া ধোঁয়া ও ধুলার কারণে ওই দূষণ ঘটছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন