শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দুদক কর্মকর্তারা কেন মাছি মারা কেরানির মতো কাজ করবেন: হাইকোর্ট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম


‘দুদকের কর্মকর্তারা কেন পুলিশের উপপরিদর্শকের (এস আই) মতো কাজ করবেন? এত টাকা বেতন নিয়ে কেন মাছি মারা কেরানির মতো কাজ করবেন।’ সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় প্রকৃত আসামি আবু সালেকের পরিবর্তে নিরীহ জাহালমকে আসামি করায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কর্মকর্তাদের কর্মকা-ে এভাবেই চরম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালমের কারাভোগ নিয়ে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল বৃহস্পতিবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। আগামী ৩ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক করেছেন আদালত।
শুনানির সময় ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা ফয়সাল কায়েস ও সাবিনা শারমিনের দেওয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারার জবানবন্দি আদালতে পড়ে শোনান দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। শুনানির একপর্যায়ে দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘ফয়সাল কায়েস আর সাবিনা শারমিনের জবানবন্দিতে দুজনের নাম ঠিকানা ছাড়া বাকি দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন সব এক। দুদকের কাছে দেওয়া এই জবানবন্দির সাক্ষ্যগত মূল্য নেই। ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা ফয়সাল কায়েসের আদালতে দেওয়া জবানবন্দির অংশ পড়ে শোনান দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আদালতকে তিনি বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা আদালতে গিয়ে জাহালমকে শনাক্ত করে এসেছেন। দুদকের কাছে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন এই সাক্ষী, সেই একই কথা আদালতে গিয়েও বলেছেন। দুদকের খুরশীদ আলম খান আদালতে আরও বলেন, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ভুলভাবে পরিচালিত হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। সাক্ষীদের বক্তব্যের ওপর তো দুদকের কর্মকর্তাদের বিশ্বাস করতে হবে।
দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, যাদের আসামি হওয়ার কথা তাদের সাক্ষী করা হয়েছে। দুদক তো আর চুরি ডাকাতির মামলার তদন্ত করে না। দুদক সুনির্দিষ্ট কিছু অপরাধের মামলার তদন্ত করে।
দুদকের আইনজীবী তখন আদালতে বলেন, সংঘবদ্ধ চক্র সোনালী ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছে। আদালত তখন বলেন, তদন্ত করা দুদকের দায়িত্ব। এই টাকা কোথায় গেল তা কি দুদক তদন্ত করেছে?
জাহালমের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ধুবড়িয়া গ্রামে। দুদকের আইনজীবী ধুবড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মন্টুর দুদকের কাছে দেওয়া বক্তব্য পড়ে শোনান। দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, স্থানীয় লোকজন যখন ২০১৪ সালে বললেন, জাহালমের শ্বশুর ঝালমুড়ি বিক্রেতা। শাশুড়ি একটা স্কুলের ঝাড়–দার। জাহালম লেখাপড়া জানেন না। তখনো জাহালমের ব্যাপারে দুদকের কর্মকর্তারা কেন সন্দেহ করলেন না। কেন স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য আমলে নেওয়া হলো না।
আদালত বলেন, প্রকৃত আসামি আবু সালেকের পরিবর্তে জাহালমকে ফাঁসানোর ক্ষেত্রে অনেকে জড়িত। সবাই মিলে জাহালমকে ফাঁসিয়ে দিয়ে আরামে আছে। গত ১১ জুলাই দুদকের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে এক প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। মামলার তদন্তপ্রক্রিয়ায় থাকা অনুসন্ধান কর্মকর্তা, তদন্ত কর্মকর্তা ও তদারক কর্মকর্তা সবাই যে ভুল করেছেন, সেটা ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন দুদকের পরিচালক (আইন) আবুল হাসনাত মো. আবদুল ওয়াদুদ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিজেদের বাঁচাতে যেকোনো ব্যক্তিকে যে আবু সালেক হিসেবে শনাক্ত করতে পারেন, তা দুদকের কর্মকর্তারা ভেবেই দেখেননি। ৩৩টি মামলার ১২ জন তদন্ত কর্মকর্তা গুরুত্বের সঙ্গে মামলা তদন্ত করেননি। প্রত্যেক তদন্ত কর্মকর্তা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। দুদকের ১২ জন কর্মকর্তা মামলাগুলো তদন্ত করলেও একজন কর্মকর্তাও জাহালমের বাড়ি যাননি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন