বাপা’র নতুন সভাপতি বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন- বন, পাহাড় সমুদ্র সর্বোপরি পরিবেশের মতো স্পর্শকাতর জায়গাগুলোকে বিনষ্টের দিকেই সরকার এগুতে চাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
সুলতানা কামাল বলেন, উন্নয়নের নামে এ স্পর্শকাতর জায়গাগুলোকেই কেন বারবার বেছে নেয়া হচ্ছে? আমরা কখনও উন্নয়নের বিমুখ নই, কিন্তু সে উন্নয়ন হতে হবে সুপরিকল্পিত এবং পরিবেশ প্রকৃতির ক্ষতি না করে বৃহত্তর জনগণের স্বার্থে। আমরা এ দেশটাকে বিশে^র সবচেয়ে বেশি দূষণের দেশ হিসেবে দেখতে চাই না। আমরা কক্সবাজার এবং মহেশখালীকে বাঁচাতে চাই।
‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পÑ গুচ্ছ স্থাপনের পরিকল্পনা : ঝুঁকিতে বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন বাপা’র নির্বাহী সহ-সভাপতি ডা. মো. আব্দুল মতিন সঞ্চালনা করেন। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক শরীফ জামিল। এতে উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য রাখেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী ও বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক শারমীন মুরশিদ, বাপা কক্সবাজার শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চেীধুরী, মহেশখালী শাখার সদস্য সচিব আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন, বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ন কবির সমুন, অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, বাপা’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য যথাক্রমে ড. মাহবুব হোসেন, এম এস সিদ্দিকী, ইবনুল সাঈদ রানা প্রমুখ।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বর্তমান অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে কথাগুলো বলছি দেয়ালের সাথে, আর সেই দেয়ালটি হচ্ছে সরকার। সরকার তার অবস্থানে অনড় আর দেশবাসী তাদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে প্রতিনিয়তই বঞ্চিত হচ্ছে। চীন, জাপান এবং ভারত তাদের স্বার্থে বাংলাদেশ সরকারকে পরিবেশ বিধংসী এ প্রকল্পগুলো এদেশে করতে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে। সরকার এবং ইনভেস্টরদের মধ্যে একটা বিরাট সিন্ডিকেট চক্র তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে এ প্রকল্পগুলো করছে। আমরা এ ধরণের উন্নয়ন চাই না যেটা দেশকে একটা দোযখে পরিণত হবে।
শরীফ জামিল তার লিখিত বলেন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ২৫ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৭ হাজার ৯৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষম ১৭টি প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন মানুষ, পারিপার্শ্বিক জীববৈচিত্র্য, সামুদ্রিক অভয়ারণ্য, পাহাড়ি বনাঞ্চল, ভূ-প্রকৃতি, সমুদ্রসৈকত এবং বিস্তৃত কৃষিজমির জন্য হুমকিস্বরূপ প্রতীয়মান। কেননা পর্যটন নগরী কক্সবাজারের মূল শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে উল্লেখিত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন সবকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থান। সিংহভাগ বিদেশি অর্থায়নে বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনায় ইতোপূর্বে প্রকাশ করা হয়নি এমন তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়। এই গবেষণার প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বন্দর নির্মাণের কারণে পরিবেশের কী ভয়াবহ বিপর্যয় সাধিত হবে এবং এ জন্য কতটা চড়া মূল্য দিতে হবে সেই তথ্য উদ্ঘাটন ও প্রকাশ করা।
তিনি বলেন, বাপা এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং এর মতো বড় আকারের পরিকাঠামো নির্মাণের আগে অবিলম্বে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) ও পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) করার দাবি জানায়। তিনি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কয়লাভিত্তিক বিদুুৎকেন্দ্রসহ যে কোনো ধরনের বৃহৎশিল্প ও অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণের আগে ব্যাপক, স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) ও গ্রহণযোগ্য পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) করার দাবি জানান।
অপরদিকে শারমীন মুরশিদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ বিভিন্ন চুক্তির সাথে জড়িত, প্যারিস চুক্তি, এসডিজিসহ অনেক চুক্তিতে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প যদি এভাবে চলতে থাকে তা হলে এ সমস্ত চুক্তি কিভাবে বাস্তবায়িত হবে? সরকার এ ধরণের প্রকল্প গ্রহণের আগে পরিবেশবাদীদের সাথে এর ফলাফল কি হবে তা নিয়ে পরামর্শ করা উচিৎ ছিল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন