অর্থনৈতিক রিপোর্টার : প্রথমবারের মতো বৈদেশিক বিনিয়োগে ২ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে ৪৬ শতাংশেরও বেশি। মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২৩ কোটি ৫৪ লাখ ডলার, যা ২০১৪ সালে বাংলাদেশে এফডিআই ছিল ১৫৫ কোটি ডলার। স্বাধীনতার পর দেশে এফডিআইর এটিই সর্বোচ্চ রেকর্ড। শতাংশের হিসাবে যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এখনো দূর না হওয়ায় ২০১৬ সালে এই বিনিয়োগের পরিমাণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের (আঙ্কটাড) বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। গতকাল বিনিয়োগ বোর্ডের সভাকক্ষে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন-২০১৬ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. এম ইসমাইল হোসেন।
প্রতিবেদনটির তথ্যমতে, দেশভিত্তিক বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতিমালার ক্ষেত্রে এখনও ১৫ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান। তাই বৈদেশিক বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়ানোর পাশাপাশি নীতিমালা সহজ করতে সরকারের প্রতি সমর্থন বাড়ানোর পরামর্শ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর।
উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্রের ঘাটতি কোনো সমস্যা নয় বলে উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্রের ঘাটতি কোনো সমস্যা নয়। উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুদক্ষ নেতৃত্বের, যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে। দেশকে উন্নত করতে এ ধরনের নেতৃত্বের প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে বিদেশি বিনিয়োগের এক-তৃতীয়াংশ হবে বিদেশি বিনিয়োগ। দেশের অর্থনীতি যত বাড়বে, তত বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বেড়ে যাবে। আমাদের অর্থনীতি এখনও অনেক তরুণ, যার প্রবৃদ্ধি হওয়ার অনেক জায়গা রয়েছে। তিনি বলেন, এই বিনিয়োগ ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ানোর মাধ্যমে আমরা সাহস সঞ্চার করতে পেরেছি, যা আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান এস এ সামাদ বলেন, গত বছর কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল না। বিনিয়োগের ভালো পরিবেশ ছিল। এটি বিনিয়োগ বাড়ার একটা কারণ। তিনি বলেন, আমি মনে করি না বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খুব বেশি ঝুঁকি আছে। আর ঝুঁকি না থাকায় এফডিআই বাড়ছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতির সমিতির সদস্য জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৭০ সালের দিকে আলজেরিয়া, মিশর ও ইরান উন্নত দেশ হওয়ার পথে ছিল। কিন্তু দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদের দেশেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে ড. এম ইসমাইল হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে এফডিআই বেড়েছে ৩৮ শতাংশ বা ১ দশমিক ৭৬ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে এফডিআইর পরিমাণ ৭৬৫ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে, যা ২০১৪ সালের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। আর যুক্তরাষ্ট্র ৩৮০ বিলিয়ন এফডিআই করে প্রথম স্থানে রয়েছে। হংকং ১৭৫ বিলিয়ন ও চীন ১৩৬ বিলিয়ন করে তার পরের অবস্থায় রয়েছে।
ইসমাইল হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ২০১৬ সালে এফডিআই ১০ থেকে ১৫ ভাগ কমে যেতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতিতে ভঙ্গুরতা, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, কার্যকরী ট্যাক্স পলিসিসহ বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে এফডিআই কমতে পারে বলে মনে করেন তিনি। তবে নানা ধরনের নীতি সহায়তার কারণে ২০১৭ ও ১৮ সালে এফডিআই ভালো অবস্থানে যাবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
মতিঝিলে বিনিয়োগ বোর্ডের সভাকক্ষে, এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে ২ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছে বাংলাদেশ, শতাংশ হিসেবে যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও আন্তর্জাতিক উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ বাড়লেও অভ্যন্তরীণ খাত বিশেষ করে শিক্ষা ও কৃষিতে কমেছে।
বিদেশে বাংলাদেশের বিনিয়োগও বেড়েছে : প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে বিনিয়োগ হয়েছে ৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর আগের বছর ছিল ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১৩ সালে বিদেশে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সম্মিলিতভাবে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বহির্বিশ্বে বিনিয়োগ কিছুটা কমেছে। ভারত থেকেও দেশের বাইরে বিনিয়োগ কমেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন