চিকিৎসার কথা বলে নিজের ১৪ দিন বয়সী শিশু কন্যাকে কোলে করে বাড়ি থেকে নিয়ে যান বাবা ফারুক মিয়া। কিন্তু ডাক্তার না দেখিয়ে তাকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন তিনি। আর সেই টাকা উড়িয়ে দেন জুয়া খেলে। মেয়ে হারিয়ে গেছে বলে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে ঘটনা অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
অবশেষে শিশুটির মায়ের প্রচেষ্টায় বেরিয়ে আসে জুয়ারি বাবার অবাক করা কান্ড। উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। গ্রেফতার করা হয় বাবা ফারুকসহ শিশুটির ক্রেতা জাকিয়া নামে এক নারীকে।
জানা গেছে, কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নের রামদী গ্রামের মো. ফরিদ ভূঞার মেয়ে মোছা. রিনা খাতুনের প্রায় ১৫ বছর আগে মো. ফারুক ভূঞার সাথে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। কিন্তু সংসারে অভাব অনটন লেগে থাকায় প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। এরই মধ্যে গত ৫ই নভেম্বর কটিয়াদী পৌর সদরের একটি ক্লিনিকে জন্ম নেয় তাদের তৃতীয় সন্তান। এই কন্যা সস্তানটির নাম রাখা হয় রাধিয়া। গত সোমবার রাধিয়া সামান্য জ্বরে আক্রান্ত হলে ওই দিন সকালে তার বাবা ফারুক ভূঞা চিকিৎসার কথা বলে মেয়েটিকে তার মায়ের কোল থেকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিশুটির বাবা ফারুক ভূঞা তার শ্যালক শফিককে মোবাইল ফোনে জানায়, শিশু রাধিয়াকে এক মহিলার কোলে দিয়ে সে শৌচাগারে গিয়েছিল। পরে সেখান থেকে এসে দেখতে পায় যে রাধিয়াকে নিয়ে ওই মহিলা পালিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুুঁজি করেও শিশুটি সহ ওই মহিলাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ খবর পেয়ে ছোট বোন রিনাকে নিয়ে শফিক হাসপাতালে গিয়ে শিশুর বাবাকে খুঁজতে থাকেন। না পেয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে শিশুটির বাবার মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে তার ফারুকের বাড়ি বালিরারপাড় গ্রামে যান। এক পর্যায়ে শিশুটির বাবা অন্য একটি মোবাইল ফোনে শিশুটির মা রিনাকে জানায়, শিশু রাধিয়াকে পেতে হলে তাকে ৬ লাখ টাকা দিতে হবে। পরবর্তীতে শিশুর মামা শফিক ও মা রিনা আক্তার জানতে পারে, শিশু রাধিয়াকে তার বাবা ফারুক ভূঞা, দাদী রেহেনা খাতুন ও তাদের আত্মীয় জসিম ভূঞা ও অজ্ঞাত দুই তিন জন মিলে উপজেলার বেতাল গ্রামের সুমন ভূঞার স্ত্রী জাকিয়া আক্তারের কাছে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে।
এই ঘটনায় শিশু রাধিয়ার মা মোছা. রিনা খাতুন পরদিন গত মঙ্গলবার কটিয়াদী মডেল থানায় ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধেনারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৬/৮/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ পাষন্ড পিতা ফারুক ভূঞা ও শিশুর ক্রেতা জাকিয়া আক্তারকে শিশুসহ আটক করে গত বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ আদালতে পাঠায়। পরে আদালতের নির্দেশে রাতে শিশু রাধিয়াকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে দুই আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
কটিয়াদী মডেল থানার ওসি এম এ জলিল জানান, ১৪ দিনের শিশু সন্তানকে বিক্রি করে ফারুক ভূঞা ৭০ হাজার টাকা পেয়েছিল। এক রাতেই জুয়া খেলে সে পুরো টাকাই শেষ করে দেয়। জুয়ার নেশায় পড়েই সে এমন নির্মমতার পথ বেছে নিয়েছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন