২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৭ সদস্য ও ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে যুবদলের ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দ্রæততম সময়ের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। অথচ আংশিক কমিটি গঠনের পর মেয়াদ ইতোমধ্যেই পূর্ণ হয়ে গেছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের। জাতীয়তাবাদী যুবদলের মেয়াদ পূর্ণ হতে দুই মাসও বাকি নেই। দীর্ঘ ৩ বছরেই স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদলের কোনোটিই তাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি।
সর্বশেষ উভয় সংগঠনকে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই সময়সীমাও অতিক্রম করে ফেলেছে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। কিন্তু কোনোটিরই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি দায়িত্বে থাকা নেতারা। এদিকে ছাত্রদলের বিগত তিন কমিটিতে বাদ পড়া ছাত্র নেতারা এবং স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদলের আগের কমিটির নেতারা অপেক্ষায় আছেন রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্য। তারা বলেন, ১/১১ থেকে শুরু করে পরবর্তী সব আন্দোলন সংগ্রামেই সাবেক ছাত্রনেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই তারা রাজনৈতিক পরিচয়হীন অবস্থায় রয়েছেন। অন্যদিকে যুবদলের আলাল-নিরব কমিটি এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সোহেল-সপু কমিটির নেতারাও তিন বছর ধরে পদহীন। রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রেখেও কমিটি ঘোষণা না হওয়া এবং পদ না থাকায় অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে নিষ্ক্রিয়ও হয়ে গেছেন। পদপ্রত্যাশী নেতাদের প্রশ্ন স্বেচ্ছাসেবক দলের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, যুবদলেরও শেষ পর্যায়ে তাহলে আর কতদিনে নেতারা কমিটি ঘোষণা করবেন? জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল জানিয়েছেন, খুব দ্রæততম সময়ের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। শেষ মুহূর্তের কাজ সম্পন্ন করে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি তালিকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে জমা দেবেন। এরপর তা ঘোষণা করা হবে।
২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি ও আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরাজ্জামান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলীকে মনোনীত করা হয়। পরের বছর ১ মে স্বেচ্ছাসেবক দলের উত্তর ও দক্ষিণ শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি করা হয় এস এম জিলানীকে আর সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। এই কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি রফিক হাওলাদার, যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন আব্দুল কাদের ঝিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ মোর্শেদ পাপ্পা সিকদার। আর ঢাকা উত্তরের সভাপতি করা হয় ফখরুল ইসলাম রবিন, সাধারণ সম্পাদক গাজী রেজওনুল হক রিয়াজ। এই কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি হারুন-অর-রশিদ, যুগ্ম সম্পাদক আজিজুর রহমান মোছাব্বির এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল ইসলাম সাইদুরকে। উভয় কমিটিকেই এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে বলা হয়।
তিন বছরের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৬ অক্টোবর। দীর্ঘ সময়েও কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দল পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। অবশেষে গত মাসের ১৪ অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ৭ নেতা এবং দুই মহানগরের ৪ নেতার সাথে স্কাইপে বৈঠককালে তারেক রহমান ২০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের এবং ২৫ অক্টোবরের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সংগঠনটির নেতারা জানান, দীর্ঘদিনেও কেন্দ্রীয় ও মহানগর কোনোটিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই কেন্দ্রীয় ও মহানগর কোনো কমিটিই পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি আংশিক কমিটির নেতারা।
জানা যায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের আগের কমিটি (সোহেল-সপু) ছিল ৩৩১ সদস্যবিশিষ্ট। এবার স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট। এক্ষেত্রে আগের কমিটির সক্রিয় নেতা, জেলা নেতা এবং ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের পদায়ন করা হবে। যারা নিষ্ক্রিয় তাদেরকে রাখা হবে না। এবারের কমিটিতে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের মধ্যে অন্তত ৮০ জনকে রাখা হবে। স্বাভাবিকভাবেই আগের কমিটির শতাধিক নেতা বাদ পড়বেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনে চলছে শেষ মুহূর্তের যাচাই-বাছাই। পদপ্রত্যাশীরা চালাচ্ছেন লবিং-তদবির।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজ করছে। পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাই শেষে তা চূড়ান্ত করা হবে। আশা করছি খুবশিগগিরই স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে।
যুবদল: বর্তমানে যুবদলের কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন ৫ জন নেতা। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও মহানগর দক্ষিণের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির নেতারা হলেন- সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্ত্তাজুল করিম বাদরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি। সর্বশেষ গত ৯ অক্টোবর রাতে যুবদলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর নেতাদের সাথে স্কাইপে বৈঠক করেন তারেক রহমান। বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি। তবে এই পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি। এরপরই কাউন্সিলের মাধ্যমে যুবদলের নতুন নেতা নির্বাচন করা হবে বলে তারেক রহমান যুবদলের নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের মতো যুবদল নেতারাও তারেক রহমানের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে তাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি।
যুবদল নেতারা জানান, যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পেতে সাবেক ছাত্রনেতারা লবিং করে চলেছেন। পদের আশায় প্রায় ৭০০ জন নেতা জীবনবৃত্তান্ত যুবদলের শীর্ষ নেতাদের কাছে জমা দিয়েছেন। ফলে এত ব্যক্তির মধ্যে ২৭১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি নির্ধারণ করতে রীতিমতো গলদঘর্ম যুবদলের নেতারা। তবে এসব পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে একেবারে নতুন কমপক্ষে শতাধিক ছাত্রনেতা ঠাঁই পাবেন যুবদলে। পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে থাকবেন কিছু জেলা কমিটির নেতা, ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং যুবদলের আগের (আলাল-নীরব) কমিটির পদবঞ্চিত নেতা। অবশ্য যুবদলের আগের কমিটির নেতাদের মধ্যে যারা এখনো সক্রিয় কেবল তাদেরই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রাখা হবে। যারা নিষ্ক্রিয় তারা বাদ পড়বেন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের যাচাই-বাছাই। তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেয়া হবে। এরপরই তা ঘোষণা করা হবে।
যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন জানান, যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন শেষ পর্যায়ে। বহু পদপ্রত্যাশী তাদের জীবনবৃত্তান্ত আমাদের কাছে জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে ২৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা কতটা কঠিন তা সহজেই বুঝা যায়। তিনি বলেন, এবারো ২৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। ছাত্রদলের সাবেক নেতা সহ ত্যাগীদের সর্বোচ্চ মূল্যায়নের চেষ্টা চলছে। আশা করি, শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি আমরা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে জমা দিবো।
পদপ্রত্যাশীরা তৎপর: দুই সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার খবরে পদপ্রত্যাশী ও নিষ্ক্রিয় এবং ছাত্রদলের সাবেক নেতারা সক্রিয় হচ্ছেন। তাদের অনেকেই নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয় ও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সশরীরে হাজির হচ্ছেন। অনেকে মোবাইলে দলের সিনিয়র এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে লবিং করছেন ভালো পদের আশায়। আগামীতে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে ফের সক্রিয় হয়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে ভুমিকা রাখতে চান তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ওয়ান ইলেভেনের জরুরি অবস্থা-পরবর্তী অন্তত এগারো বছরের রাজনীতিতে খেয়ে-না খেয়ে মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন। ছাত্রদলের বিগত তিনটি কমিটির সাবেক নেতাদের প্রায় সবারই অংশগ্রহণ আছে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে। যারা দুঃসময়ে শত শত লোক নিয়ে মিছিল মিটিং করেছে। কিন্তু উভয় সংগঠনের সাবেক এবং ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের অধিকাংশই এখন সাংগঠনিক পরিচয়হীন। রাজনীতিতে কোনো পদ না থাকায় অলস সময় পার করছেন। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি পূর্ণাঙ্গের ঘোষণায় আশার আলো দেখছেন তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন