শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সীমান্তে উত্তেজনা

ভারত থেকে অব্যাহত বাংলাভাষীদের বাংলাদেশে পাঠানো

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিশেষ প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:১৬ এএম

ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২১ জনকে আটক করা হয় -ইনকিলাব


ভারত সরকার জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ (এনআরসি) চুড়ান্ত করে আসামের মুসলমান নাগরিকদের ‘অবৈধ বাংলাদেশী’ আখ্যা দিয়ে বাংলাভাষীদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে। আটক শত শত বাংলাভাষীদের বিভিন্ন সীমান্তপথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। কয়েক দফায় তিন শতাধিক বাংলাভাষীকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। বাংলাভাষীদের ঠেলে পাঠানোর ঘটনায় ক্রমাগতভাবে বাড়ছে সীমান্তে উত্তেজনা।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, এনআরসি (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) আতঙ্কে চলতি মাসের ১ থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ২১৪ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে স্থানীয়রা বলছেন, বিজিবি প্রতিদিন যতজনকে আটক করেছে, অনুপ্রবেশ করছে তার চেয়ে অনেক বেশি।
স্থানীয়দের দাবি, মহেশপুর উপজেলার জুলুলী, খোসালপুর, বাঘাডাঙ্গা, পলিয়ানপুর ও শ্যামকুড় সীমান্ত দিয়ে প্রতদিন অবৈধভাবে ভারত থেকে রাতের অন্ধকারে শত শত নারী-পুরুষ প্রবেশ করছেন। এতে সহায়তা করছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

সীমান্ত সূত্র জানায়, গতকাল শনিবারও ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ২১ জন বাংলাভাষী নারী, পুরুষ ও শিশুকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। এছাড়া বেনাপোল, মহেশপুর, জীবননগর সীমান্তের ওপারে বিএসএফ আরো কিছু বাংলাভাষী নারী, পুরুষ ও শিশুকে জড়ো করেছে বাংলাদেশে পুশ ইনের জন্য। সূত্র জানায়, সীমান্তে বাংলাভাষীদের প্রতি বিএসএফ অমানবিক আচরণ করছে। শীতের রাতে সীমান্তের ফাঁকফোকর দিয়ে ঠেলে দিতে গিয়ে তাদের ঝোপজঙ্গলে খোলা আকাশের নীচে ঘন্টার পর ঘণ্টা রাখা হচ্ছে।

ওপারের সূত্র জানায়, ব্যাঙ্গালুরের একটি হোমে আটক ছিলেন ৫৭ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে বনগাঁ সীমান্তপথে বাংলাদেশে পুশ ইনের জন্য আনা হচ্ছে। আনান্দবাজার পত্রিকাও এমন খবর প্রকাশ করে। শুক্রবার অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে তাদের ট্রেনে আনা হচ্ছে। পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে, ব্যাঙ্গালুর পুলিশের দাবি করেছে আটককৃতদের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্বের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদেও তারা নিজেদের বাংলাদেশি বলে স্বীকার করেন এবং কোনো কাগজপত্র ছাড়াই তারা ভারতে প্রবেশ করে। ওপারের সূত্র বলেছে, ৫৭ জন নয়, ২৭ জনের একটি দলকে সীমান্তে আনা হচ্ছে পুশ ইনের জন্য।

আনান্দবাজার পত্রিকার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এক শীর্ষ পুলিশ কর্তা বলেন, ‘রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিএসএফ ঠিক করছে কোন সীমান্ত দিয়ে পার করা হবে। আমরা এ বিষয়ে আর কিছু জানি না।’ তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, বনগাঁ সীমান্ত দিয়েই ওই ৫৭ জনকে সীমান্তের অন্য পাড়ে পাঠানো হবে। রাজ্য পুলিশ কর্তারা স্বীকার করেন, সা¤প্রতিক অতীতে এত বড় সংখ্যায় বাংলাদেশি নাগরিকদের এ ভাবে এ রাজ্য দিয়ে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়েছে বলে তারা মনে করতে পারেন না।

গোটা ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত সুর। তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ ঘটনা। কর্নাটক সরকার দেশের আইন-সংবিধান সব লঙ্ঘন করেছে। কাউকে এ ভাবে পুশব্যাক করা যায় নাকি! কোনও মামলা নেই ওদের বিরুদ্ধে। পুলিশ কী করে নিশ্চিন্ত হল ওরা বাংলাদেশি? ওরা পশ্চিমবাংলার বাঙালিও হতে পারে। পুলিশকে বাংলাদেশি নির্ধারণের ক্ষমতা কে দিল? কোন আইনে? পুশব্যাকের অর্ডার কে দিল? কোর্টের আদেশ ছাড়া পুশব্যাক কখনওই করা যায় না। কর্নাটক সরকার ফেরত পাঠাচ্ছে, তাতে সাহায্য করছে বাংলার সরকার। আমরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে দাবি করছি, এই পুশব্যাকবন্ধ করুক। বাংলার সবাইকে আবেদন করছি, এর প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য।’ ওই পত্রিকাটি জানায়।

বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মামুন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সর্বশেষ ১৯ তারিখ ওপার থেকে ঠেলে পাঠানো ৪৯ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে বিজিবি আটক করে থানায় দেয়। এরপর আর ওপার থেকে পাঠানো কাউকে থানায় দেওয়া হয়নি। যশোর ৪৯ বিজিবি’র কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল সেলিম রেজা দৈনিক ইনকিলাবকে গতকাল বলেন, নতুন করে কাউকে বিএসএফ ঠেলে পাঠায়নি। সীমান্তে অনুপ্রবেশরোধে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

আমাদের ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ অব্যহত রয়েছে। শনিবার ভোর ৫টার দিকে ২১ জনকে আটক করেছে বিজিবি। আটককৃতদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে। তাদেরকে মহেশপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। ঠেলে পাঠানো লোকজন জানিয়েছেন, তারা সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিল। এখন ভারতের বিভিন্ন বাহিনী তাদের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। তাদের কাজের মুজুরী দিচ্ছে না। বাংলাদেশে না আসলে নানা হুমকী ধামকি দেওয়া হচ্ছে। সীমান্তে এসেও তাদেরকে বিভিন্ন দালালের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে।

সীমান্তবর্তি এলাকার শ্যামকুড়, যাদবপুর, বাশবাড়িয়া ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, প্রশাসনের নির্দ্দেশে তারা সীমান্তের গ্রামে গ্রামে কমিটি গঠন করে পাহারা দিচ্ছেন। তার পরও ওপারের বিএসএফ বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে।। মহেশপুর ৫৮ উপ-অধিনায়ক লে.কর্ণেল কামরুল হাসান জানান, বিজিবি’র নিয়মিত টহল দেয়ার সময় ঝিনাইদহের মহেশপুর বিওপি’র ১০০ থেকে দেড়শ’ গজ বাংলাদেশ অভ্যন্তরে নিশ্চিন্তপুর কালভার্টের পাশ থেকে শনিবার ভোর ৫টার দিকে ১৬ এবং জলুলি বিওপি’র মগদাশপুর মাঠ থেকে ৫জন সহ মোট ২১ জনকে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে। বিজিবি জানতে পেরেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিল। এখন বাংলাদেশে ফেরত আসছে। বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধ্যাদেশ ১৯৭৩ এর ১১(গ) ধারায় আটককৃতদেরকে মহেশপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে বিএসএফএর ঠেলে পাঠানো বেনাপোলে ৩ দফায় ৬২ জন, মহেশপুরে ৪ দফায় ২১৪ জন, জীবননগরে ১৭ জন বাংলাভাষীকে আটক করে ৫৮ বিজিবি, ৪৯ বিজিবি ও ২১ বিজিবি। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (14)
Salman Shamil ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৭ এএম says : 0
আমাদের যে সমস্ত মহামন্ত্রিরা বাণি দিয়েছিলেন যে ভারতের এন আর সি এর প্রভাব বাংলাদেশে, পাড়বে না। এন আর সি ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা ভারতের উপর আস্থা রাখি। ইত্যাদি ইত্যাদি। সে সব মহা মন্ত্রিরা কি কিছু বলবেন? নাকি পাটের পরবর্তী সংলাপ মুখস্থ করছেন? এ অনুপ্রবেশ ভারতের পরক্ষ মদদ ও তত্ত্বাবধানেই হচ্ছে। কারন যেখানে দেখা যায় বি এস এফ এতোটাই এলার্ট যে সিমানায় বাংলাদেশীদের দেখলেই গুলি করে, সেখানে এতো লোক সিমানা অতিক্রম করে কিভাবে?
Total Reply(0)
MD Mesbaul Haque ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৮ এএম says : 0
কেউ যেন ঢুকতে না পারে
Total Reply(0)
ওছমান গনি ফরহাদ ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
এবার ঠ্যালা সামলাও বাংলাদেশ
Total Reply(0)
Md. Majedul Islam Labu ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
কেবল তো নমুনা শুরু করছে ।। চিন্তার কোন কারণ নাই 10 লক্ষের ও অধিক রহিঙ্গা কে আশ্রয় দিতে পারলে কেন কিছু ভারতীয় মানুষ কে আশ্রয় দিতে পারবে না ভাই
Total Reply(0)
Tuhin Morol ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
very bad news
Total Reply(0)
Sayeed Hasan Murad ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫০ এএম says : 0
আমরা কেন দেশে চাকুররীরত ভারতীয়দের উপর চাপ প্রয়োগ করছি না।ভারতীয় চ্যানেল আগেও খুব কম দেখতাম কিন্তু আমার মা দেখতো।কিন্তু প্রায় ২ মাস ধরে টিভিতে এখন দেশীয় চ্যানেল,মোশাররফ করিমের নাটক চলে।প্রায় বেশিরভাগ ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছি। আমি জানি,আমার মত একজন ব্যক্তি এসব কর্মকান্ড কতটা প্রভাব পড়বে কিন্তু আমার মত আরও কিছু মানুষ যদি শুরু করে তবে প্রভাব লক্ষনীয় হতে খুব বেশী সময় লাগবে না।অন্তত আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় এবার এসব শুরু করা উচিৎ।তাতেও যদি তাদের একটু সাইজ করা যায়।
Total Reply(0)
রিদওয়ান বিবেক ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
সন্ত্রাসবাদের জন্য একসময় গুজরাটে নিষিদ্ধ থাকা ভারতের অমিত শাহ রাজ্যসভায় দেশব্যাপী NRC করার এবং অবৈধ ভারতীয়দের বাংলাদেশে পাঠানোর হুমকি দিয়েছে।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
আবারো কি রোহিংগাদের মত পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে? যদি তাই হয় তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় অনেক কঠিন পরিস্থিতি হবে।
Total Reply(0)
Mansoor Ahmed ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
"....অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।...." অর্থাৎ তাদেরকে সাদরে বাংলাদেশে স্বাগত জানানো হল, ফেরত যাওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা। স্বাগত না জানিয়ে তাদেরকে ভারতের দিকে Push back কেন করা হলনা ? রোহিঙ্গাদেরকে যেভাবে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে ঢুকতে দেয়া হয়েছিল, এক্ষেত্রেও ঠিক তাই কেন করা হল ? আমরা অতিত থেকে কেন শিক্ষা নিইনা ? ভারত থেকে অনুপ্রবেশ তো মাত্র শুরু হল। এটার পরিণাম যে খুবই Painful হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই।
Total Reply(0)
মেহেদী ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
আগেই বোঝা গিয়েছিল ভারত মিয়ানমারের পথেই হাঁটবে !আর সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে এসব হাসি মুখে মেনে নেবে !
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় আর অভ্যন্তরীণ থাকলো না। দরজা খুলে বিড়াল বের হয়ে আসলো। আওয়ামী লীগ নিজেদের যতটা বুদ্ধিমান ভাবে আসলে ততটা নয়। হলে ভারতের অভ্যন্তরীণ জিকিরে নিশ্চিন্তে থাকতো না।
Total Reply(0)
মরিয়ম বিবি ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
একবার ঢুকে গেলে তো আর কোনদিন ফেরত পাঠানো যাবে না। রোহিঙ্গারা তো অপেক্ষাকৃত ছোট জনগোষ্ঠী। তাতেই ১০ লক্ষ্য ঢুকেছে। সরকারের কাজ কি? আর কতভাবে ভারতের ডাম্পিং গ্রাউন্ড হব আমরা? একজনও যাতে অবৈধ ঢুকতে না পারে তা কেন নিশ্চিত করা হবে না?
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
বরতোমান ভারত সরকার অসভ্য । মানুষ নয় ওরা মানুষ নামের অমানুষ ।
Total Reply(0)
ahammad ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ৩:১৮ এএম says : 0
ভারত যত লোকই বাংলাদেশে পুশকরুক তাতে সরকারের কোন অসুবিদা নাই। কারন তাদের সকল দায়িত্বশীলদের Secend Home আছে না। তাই শুধুগদিটা ঠিক রাখলে হবে, লুটপাট করে বিদেশে অবস্হান আরও মজবুত করা যাবে। তাই নয় কি ????
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন