নাছিম উল আলম : মাহে রমজানেও বিদ্যুৎ বিভাগের অমানবিক আচরণ থেকে মুক্তি মেলেনি দক্ষিণাঞ্চলবাসীর। বিদ্যুৎ ঘাটতি না থাকলেও নড়বড়ে বিতরণ ব্যবস্থার পাশাপাশি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানীর কতিপয় কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতার কাছে অসহায় দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষ। ‘রমজানে কোনো বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকবে না’ বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দাবি সত্যি প্রমাণিত করেও বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের ভঙ্গুর বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার কারণে গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দুর্ভোগকে এবার নতুন মাত্রা দিয়েছে।
দক্ষিণের ৬টি জেলার কোটি মানুষ রোজার মাসেও দিনভর বিদ্যুৎ নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাবার পরে ইফতারী থেকে তারাবী হয়ে সেহেরীর সময়ও বিদ্যুৎ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এমনকি মধ্যরাতেও দূর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা খোদ বরিশাল মহানগরীর বিশাল এলাকার বিদ্যুৎ সরবারহ ব্যবস্থা অচল করে দিচ্ছে পিজিসিবি’র কেন্দ্রীয় লোড ডেসপাস সেন্টারের কর্তারা। তখন রোজাদার মুসুল্লীগণ বর্ষণহীন আষাঢ়ের মাঝরাতে শুধু হাপিত্যেস করেন। এমনকি এ রোমজানের সেহেরীর সময়ও সঞ্চালন ও উৎপাদনকে টেকসই রাখার নামে একইভাবে দূর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বরিশাল মহানগরী ছাড়াও গোটা ঝালকাঠী জেলা এবং বরিশাল পল্লী বিদ্যুতের এলাকাগুলোর বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
এর সাথে রয়েছে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুর জেলা সদরগুলোতে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী-ওজোপাডিকো’র বিতরণ ব্যবস্থার সীমাহীন ত্রুটি। এসব জেলা সদরগুলোর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সামাল দিতে এতদিনের ব্যর্থতা এখন ক্রমশ অক্ষমতার পর্যায়ে যাচ্ছে। ওজোপাডিকো’র ছোট-বড় কর্তাগণ দীর্ঘদিন অনেকটা কুম্ভকর্ণের ঘুমে আচ্ছন্ন থাকার পরে রমজানের আগে কিছুটা নড়েচড়ে বসলেও এখন পুঞ্জীভূত জঞ্জাল সরিয়ে গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছেন না। খোদ বরিশাল মহানগরীতেই প্রতিদিন প্রতিটি ফিডারের একাধিক ট্রান্সফর্মারের ফিউজ পুড়ছে। ৩০-৩৫টি ১১/.০৪ কেভিএ ট্রান্সফর্মার নিয়ে ফিডারগুলো দৈনিক গড়ে ৩বার বন্ধ করতে হচ্ছে শুধু ফিউজ বদলাবার কারনে। ওজোপাডিকো অতি নি¤œমানের ড্রপ আউট সংগ্রহ করায় এখন অকার্যকর ঐসব ড্রপ আউট এ নগরীসহ গোটা দক্ষিনাঞ্চলের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের দুর্ভোগকে প্রতিনিয়ত চরম দূর্ভোগের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবারে ফিউজ পড়ানোর জন্য গোটা ফিডারের গ্রাহকের ১৫মিনিট থেকে কুড়ি মিনিট বিদ্যুৎ বিহীন থাকতে হচ্ছে। আর যে ট্রান্সফমারের ফিউজ পুড়ছে সেখানের গ্রাহকগণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ নিয়ে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছেন।
এছাড়াও বরিশাল ও ভোলা সহ দক্ষিনাঞ্চলের সবগুলো জেলাতেই ওজোপাডিকো’র ৩৩/১১ কেভী সাব-স্টেশনগুলোর যন্ত্রাপাতি সহ সব বিদ্যুৎ সরঞ্জামগুলো ক্রমশ নাজুক হয়ে পড়ছে। ফলে এসব সাব-স্টেশনের ব্রেকার থেকে শুরু করে কোন সরঞ্জাম থেকেই সুষ্ঠু সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। এ রমজানেও বরিশাল মহানগরীর কাশীপুর, পলাশপুর ও রূপাতলী ৩৩/১১ কেভী সাব-স্টেশনগুলো গোটা নগরবাশীর দুর্ভোগকে বৃদ্ধি করে চলেছে। ব্রেকারের পাশাপাশি বাজবার’সমূহের ত্রুটির কারনে রোজার শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রতিটি সাব-স্টেশনই একাধিকবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ করে দিয়ে মেরামত ও সংরক্ষণ কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকদের সংরক্ষণ কাজ নিয়ে কোনো অভিযোগ না থাকলেও তা টেকসই না হবার কারণে একই বিড়ম্বনা বারবারই ফিরে আসায় সকলে ক্ষুব্ধ। রোজার শুরুতে ৩৩ কেভী ও ১১ কেভী ফিডারগুলোর লাইনের আশপাশে গাছপালার ডালপালা কাটায় কিছু লাইনের ত্রুটি কমলেও এখন সাব-স্টেশন ও ট্রান্সফর্মারের গোলযোগের পাশাপাশি দূর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ বন্ধের অত্যাচারে অতিষ্ঠ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসী।
বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের ৬টি জেলায় সান্ধ্য পিক আওয়ারে চাহিদা প্রায় দেড়শ মেগাওয়াটে পৌঁছলেও সরবরাহে খুব একটা ঘাটতি নেই। কিন্তু বিতরন ব্যবস্থায় সীমাহীন ত্রুটি গোটা দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকেই ক্রমশ পঙ্গু করে দিচ্ছে। কিন্তু তা থেকে আপত পরিত্রাণের কোনো কথা বলতে পারছেন না ওজোপাডিকো’র দায়িত্বশীল মহল।
এসব ব্যপারে ওজোপাডিকো’র বরিশাল অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ কোম্পানীর পরিচালক পরিচালক-কারিগরি জানান, আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকদের ভাল সেবা প্রদানে। তবে দীর্ঘদিনের কারিগরি সমস্যা উত্তরণে সময় লাগছে বলেও জানান তারা। পাশাপাশি একটি প্রকল্পের আওতায় বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ চলছে বলেও জানান তারা। তবে দূর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবারহ ব্যবস্থা বন্ধ করার বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে দেন দরবার চলছে বলেও জানায় দায়িত্বশীল মহল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন