মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ওয়াশিংটন সংলাপে নিরাপত্তা ইস্যুতে গুরুত্ব হারিয়েছে জিএসপি

প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আহমদ আতিক : ওয়াশিংটনে আসন্ন সংলাপে বাংলাদেশে সম্প্রতি টার্গেট কিলিং, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ও গণগ্রেফতার সম্পর্কে জানতে চাইবে যুক্তরাষ্ট্র। নিরাপত্তা ইস্যু গুরুত্ব পেলেও এবারের বৈঠকে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের অন্যতম দাবি মার্কিন বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি পুনর্বহাল।
জানা গেছে, ওয়াশিংটন যেসব বিষয়ে আলোচনায় জোর দিতে চায়, তা ইতোমধ্যেই ঢাকাকে অবহিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জঙ্গিদের দমন করার জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে উদ্বেগের কথা সরাসরি জানানো হয়েছে। বৃহৎ এ দুই দেশের উদ্বেগের মধ্যে পার্থক্য না থাকলেও এ ক্ষেত্রে দু’দেশের সরকারের বাংলাদেশের সঙ্গে কার্যক্রমের ভূমিকা নিয়ে অবস্থানের ভিন্নতা রয়েছে। জঙ্গি দমনে যুক্তরাষ্ট্র চায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করতে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংলাপে সাইবার নিরাপত্তা ও আগাম তথ্য বিনিময়কে গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। সেই সাথে প্রতিবারের মতো মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার এবং জিএসপিও আলোচনায় রাখা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এক প্রকার নিরাশায় রয়েছেন কর্মকর্তারা। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ করে আসছে, পোশাক শিল্পের উন্নয়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া সব শর্তই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
কিন্তু এবারের সংলাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সংলাপে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ, ঢাকায় অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ইত্যাদি ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উত্থাপিত হতে যাচ্ছে। আর তাই হারিয়ে যেতে বসেছে জিএসপি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা  গেছে, এ সংলাপে বাংলাদেশে সম্প্রতি টার্গেট কিলিং, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ও গণগ্রেফতার সম্পর্কেও জানতে চাইবে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রসঙ্গত, ওয়াশিংটনে ২৩ ও ২৪ জুন বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে পররাষ্ট্র সচিব মো: শহীদুল হক ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পক্ষে এ সংলাপের নেতৃত্ব দেবেন। সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি থম্যাস শ্যানন। আরো থাকবেন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই।  
এদিকে গত বৃহস্পতিবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপে অংশ নিতে ঢাকা ছাড়ার আগে বলেছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে গণগ্রেফতারের স্বচ্ছতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে। সংলাপে মানবাধিকার বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-ে আইএস দায় স্বীকার করলেও সরকার তা মানতে নারাজ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, বাংলাদেশে কেন, আইএস সবখানেই আছে।
তিনি আরো বলেন, এ দেশের আইন অনুযায়ী বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র বহন করতে পারেন না। তাই যুক্তরাষ্ট্র বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে যতটা সম্ভব শক্তিশালী দেখতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে তার কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশের পুলিশের অসাধারণ ভূমিকার কথা স্বীকার করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশী বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীদের অস্ত্র বহনের সুযোগ যাচাই করতে চায়।
এ সম্পর্কে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, জঙ্গি হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বাংলাদেশে আইএসের অবস্থান সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের তথ্য-উপাত্ত সরকারের হাতে দিয়েছে তা আমি জানি না। তবে বাংলাদেশ সরকারের কথাও আমাদের সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি বন্ধুপ্রতিম দেশ যদি এমন একটি কথা বলে থাকে তাহলে সরকার নিশ্চয়ই গুরুত্বের সঙ্গে তা উদঘাটন করবে। তবে  ভেতরের কথা সরকারই বলতে পারে। আমরা বলতে পারি না সরকার ভুল বলছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, সরকার জঙ্গিদের কঠোর হস্তে দমন করছে এ নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের এ নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও এ পরিপ্রেক্ষিত ভিন্ন। বাংলাদেশ যুগ যুগ ধরে অসাম্প্রদায়িক সমাজের অংশ হিসেবেই পরিচালিত হয়েছে। বাংলাদেশে আইএস কোনো ঘাঁটি স্থাপন করতে পারবে না। মধ্যপ্রাচ্যে আইএস এখন  কোণঠাসা। কিছুদিনের মধ্যে তারা সম্পূর্ণ পরাজিত হবে।
তিনি বলেন, সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করছে তা প্রতীয়মান। তবে যুক্তরাষ্ট্র যে ধরনের সহযোগিতা করতে চায় তা নিয়ে সরকারের ভেবে দেখে পদক্ষেপ নিতে হবে।  
এবারের পঞ্চম অংশীদারিত্ব সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উত্থাপিত হতে যাওয়া নিরাপত্তা ইস্যুতেই বেশি প্রস্তুতি রাখছে বাংলাদেশ। আর সেই চাপে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের অন্যতম দাবি মার্কিন বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি পুনর্বহাল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জিএসপি ইস্যু বাংলাদেশ তুললেও সে বিষয়ে খুব একটা আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না। মার্কিন অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী, সকল শর্ত পূরণ করলেও তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শর্ত এখনো পূরণ হয়নি। এক্ষেত্রে বিষয়টি হতাশার জন্ম দিয়েছে। ফলে বিষয়টি এবারের বৈঠকে খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না।
সূত্র আরো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত হতে যাওয়া নিরাপত্তা ইস্যু নিয়েই বেশি প্রস্তুতি রাখছে বাংলাদেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নিজেদের নাগরিক ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে। তবে তাদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে সেসব অবহিত করবে ঢাকা। এছাড়া আইএস ইস্যুতে ওয়াশিংটনের কাছ  থেকে তথ্য বিনিময় করতে চায় বাংলাদেশ। কেননা আইএস ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার কথা বলে এলেও সরকারকে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। আইএস ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আগাম তথ্য পাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আনতে চায় ঢাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন