বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শস্যদানার বদলে এনার্জি ড্রিংকস

মিথ্যা ঘোষণায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি থেমে নেই

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

এবার শস্যদানার ঘোষণায় এলো কোটি টাকার এনার্জি ড্রিংকস। চালানটির মাধ্যমে প্রায় ৮০ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকি দেয়া হচ্ছিল। গতকাল বুধবার আমদানি চালানটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে জালিয়াতির এ ঘটনা ধরা পড়ে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকতাদের হাতে পনের দিনের মধ্যে আটক এটি দ্বিতীয় চালান। পনের দিন আগে আরও একটি বড় চালান ধরা পড়ে। ওই চালানে পানির পাম্প ঘোষণায় আনা হয়েছিল ৩৭ মেট্রিক টন মূল্যবান কসমেটিকস। চালানটিতে শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা হয়েছিল এক কোটি ৩০ লাখ টাকা।

প্রতিনিয়তই এ ধরনের চালান ধরা পড়ছে। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। কম পণ্যের ঘোষণা দিয়ে বেশি পণ্য নিয়ে আসা, আবার কম দামের পণ্যের ঘোষণায় মূল্যবান পণ্য নিয়ে আসার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। শুল্ক ফাঁকির পাশাপাশি মিথ্যা ঘোষণায় মুদ্রা পাচারের ঘটনাও ঘটছে। আমদানির এলসি খুলে বিদেশে ডলার পাঠিয়ে আনা হচ্ছে বালু, মাটির মত মূল্যহীন দ্রব্য। কোটি টাকার পণ্য আমদানির ঘোষণা দিয়ে কন্টেইনার ভর্তি বালু, মাটি ও ছাই নিয়ে আসার বেশ কয়েকটি ঘটনা ধরা পড়েছে সম্প্রতি। কাস্টম সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি অসাধু আমদানিকারক চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে এ অপকর্ম করে আসছেন। এ কারণে সরকারের রাজস্ব আহরণও চাপের মুখে পড়েছে। তবে বর্তমান অর্থমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনায় কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের সতর্ক নজরদারিতে একের পর এক মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি চালান ধরা পড়ছে বলে জানান কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার উপ-কমিশনার নুরউদ্দিন মিলন দাবি করেন, নজরদারির কারণে মিথ্যা ঘোষণায় আনা বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। এতে জালিয়াত চক্র কিছুটা হলেও কোণঠাসা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভিযান অব্যাহত থাকলে মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকির প্রবণতা কমে আসবে।

জালিয়াত চক্রের কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। দীর্ঘদিন নজরদারির কারণে শস্যদানার বদলে মূল্যবান ও উচ্চ শুল্কের এনার্জি ড্রিংকস এবং চকলেট আমদানির চালানটি ধরা পড়েছে বলেও জানান নুরউদ্দিন মিলন। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১০ মাস চালানটি খালাস না করে আমদানিকারকরা বন্দরের ইয়ার্ডে ফেলে রাখে। তবে তাদের শেষ রক্ষা হয়নি।

কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, চীন থেকে সুইটকর্ণ ও মটরশুটি আমদানির ঘোষণা দেয় ঢাকার গুলশানের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের ঘোষণায় পণ্যের মূল্য ছিল সাত লাখ টাকা। আর আমদানি পণ্যের শুল্ককর ছিল চার লাখ টাকা। তবে কন্টেইনার খুলে শতভাগ কায়িক পরীক্ষার পর তাতে কোটি টাকার পণ্য পাওয়া যায়। আর তাতে শুল্ককরের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮০ লাখ টাকা। শস্যদানার শুল্ক নামমাত্র অথচ এনার্জি ড্রিংকসের শুল্ক প্রায় শতভাগ। মূলত শুল্ক ফাঁকি দিতেই এ জালিয়াতির আশ্রয় নেয় ওই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।

২২ মেট্রিক টন পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা কন্টেইনারটি গতকাল খুলে এর কায়িক পরীক্ষা করেন কাস্টমসের এআরআই শাখার কর্মকর্তারা। পরীক্ষায় ঘোষণা বর্হিভ‚ত পণ্য আনার বিষয়টি ধরা পড়ে। কাস্টম কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার গুলশানের উত্তর বাড্ডা এলাকার স্টার অ্যালায়েন্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৩ মেট্রিক টন সুইটকর্ণ বা মিষ্টি ভুট্টার দানা এবং ৯ মেট্রিক টন কিডনি বিন বা মটরশুটি দানা আমদানির ঘোষণা দিয়ে ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলে। চীনের আনাস পি ট্রেডিং পিটিই লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এই পণ্য আমদানির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

সিঙ্গাপুর থেকে আসা এমভি নাভা শিবা নামে একটি জাহাজে করে স্টার অ্যালায়েন্সের আমদানি কন্টেইনার নিয়ে একটি জাহাজ ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে। ২৫ দিন পর ১৭ জানুয়ারি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান সেই পণ্য খালাসের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। চালানটি খালাসের দায়িত্ব পায় চট্টগ্রাম নগরীর শেখ মুজিব রোডের এলিট এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
কন্টেইনারটি খুলে তাতে ঘোষণা অনুযায়ী কোনো মটরশুটি পাওয়া যায়নি। আর ১৩ টন আমদানির ঘোষণা দিলেও সুইট কর্ণ পাওয়া গেছে মাত্র পাঁচ কেজি। কন্টেইনারে বিভিন্ন ধরনের জুস, এনার্জি ড্রিংকস, চকোলেট ও ওয়েফার মিলিয়ে ২২ টন পণ্য পাওয়া গেছে। এসব পণ্যের মধ্যে শুধুমাত্র ২টি আইটেম বাদে সবই মেয়াদোত্তীর্ণ। কাস্টম কর্মকর্তাদের ধারণা, পণ্যগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও নতুন করে তারিখ লাগিয়ে তা বাজারজাত করা হত। এর আগে মালয়েশিয়া থেকে আসা মেয়াদোত্তীর্ণ নুডুলসের ১৩ টনের একটি চালান আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

গত ১২ নভেম্বর ওয়াটার পাম্পের ঘোষণায় আসা প্রসাধনীর বিশাল চালান আটক করেন কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। ওই চালানে চীন থেকে ২৩ হাজার কেজি পানির পাম্প আমদানির ঘোষণা দেয়া হলেও আনা হয় মাত্র ৪৮টি পাম্প। কন্টেইনার খুলে পাওয়া যায় ৩৭ মেট্রিক টন প্রসাধনী সামগ্রী। কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার উপ-কমিশনার নুরউদ্দিন মিলন জানান, ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে তাদের কাছ থেকে বকেয়া শুল্ক ও জরিমানা আদায়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন