উন্নয়ন বিলাসী মেয়র এবং তাদের ভেকু মেশিন এখন নরসিংদী জেলার পৌরবাসীদের মহাতঙ্ক। ভাঙছে তাদের লালিত স্বপ্ন। হাজারো সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তা উন্নয়ন কাজে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মানছেন না মেয়ররা।
ভ‚মি অধিগ্রহণ ছাড়াই রাস্তা উন্নয়নের নামে জোরপূর্বক কোটি কোটি টাকার স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। দখল করে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যের ব্যক্তি মালিকানা জমি। নিজেদের জমির মূল্য দাবি করতে গিয়ে মেয়র ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকে। মেয়রদের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার কাছে অসহায় মানুষ। মেয়র ও তাদের ভেকু মেশিনের তাÐবে চারদিকে শুধু বোবা কান্না। মেয়র ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
জানা গেছে, আইন অনুযায়ী কোন উন্নয়ন কাজে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির প্রয়োজন হলে ভোক্তা সংস্থা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জমির ন্যায্যমূল্য দিয়ে অধিগ্রহণ করে নিতে হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে টঙ্গী-ভৈরব ডাবল লাইন নির্মাণ কাজে রেলওয়ের পাশের ব্যক্তি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। রেলওয়ে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য বাবদ জমির মালিকদেরকে কমবেশি ৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
একইভাবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাদের প্রয়োজনে রায়পুরার মরজালে জমি অধিগ্রহণ চেয়েছে। নরসিংদী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বর্তমানে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া অব্যাহত। একই পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উন্নয়নের জন্য নরসিংদী জেলা প্রশাসকের নিকট ভ‚মি অধিগ্রহণ চেয়েছে। এই অধিগ্রহণও জেলা প্রশাসকের অধীনস্থ এলএও অফিসের প্রক্রিয়াধীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে যে, রাস্তা নির্মাণ কাজে জোরপূর্বক কারো জমি দখল করা যাবে না। রাস্তার আশেপাশে কোন গরীব মানুষের কোন স্থাপনা বা জমি পড়লে এলাইনমেন্ট পরিবর্তন করে রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। কারো জমি দিতে হলে তাদের জমির মূল্য পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) এবং নরসিংদীর পৌরসভাসমূহের মেয়ররা মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে ভ‚মি অধিগ্রহণ না করেই কোটি কোটি টাকার জমি জোরপূর্বক দখল করে নিচ্ছেন।
তারা কোন প্রকার চিঠিপত্র ছাড়াই ভেকু মেশিন পাঠিয়ে কোটি কোটি টাকায় গড়া বাড়িঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। দখল করে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। যেসব পরিবার গ্রামের জমিজমা বিক্রি করে শহরে এসে ২/৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করেছে। দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা নিয়ে বসে ছিল, তারা মেয়র ও ভেকু মেশিনের তাÐবে সর্বহারা হয়ে পড়েছে।
নরসিংদীর পৌরসভা সমূহের অধিকাংশেরই কোনো মাস্টারপ্ল্যান নেই। মেয়ররা অতি বিলাসী পরিকল্পনা নিয়ে মহাসড়ক আদলে রাস্তা তৈরি করছে। এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
এ ব্যাপারে নরসিংদী পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল জানান, রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য সবাইকে একটু ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করতে হয়। অনেক এলাকায় জনগণকে নিয়ে মিটিং করে তাদের মতামত নিয়ে বিএমডিএফএ প্রকল্প প্রস্তাবনা করেছি। কোন কোন রাস্তায় সরকারি জায়গা থাকায় সেখানকার জনগণকে জানাতে পারিনি তাদের কাছ থেকে অল্প কিছু জায়গা আমরা নিয়েছি।
জায়গা নেওয়ার ব্যাপারে জনগণের কোনো মতামত নেই। এ নিয়ে শহরের ডা. আব্দুর রাজ্জাক ও ইউপি চেয়ারম্যান আজান গং হাইকোর্টে মামলা করেছেন। হাইকোর্ট স্থিতাবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া আরও বহুসংখ্যক লোক জেলা প্রশাসক এবং বিএম বিএফডিএফর ম্যানেজিং ডিরেক্টরের নিকট লিখিতভাবে আপিল করেছেন। স্থানীয়দের মতে, শহরের সব মানুষ যেখানে উন্নয়নের পক্ষে সেখানে কয়েকজন মানুষের আপত্তি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন