মুসলিম উম্মাহর স্মৃতি বিজড়িত স্থান ইরাকের নাজাফ ও কারবালা। কারবালায় শাহাদাত বরণ করেন ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু। প্রত্যেক বছর ইরাকের নাজাফ থেকে কারবালার পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন অনেক শিয়া-সুন্নি মুসলমান ও দর্শনার্থীরা। নাজাফ থেকে কারবালা পর্যন্ত দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার পথ আরামে ভ্রমণ করার জন্য রাস্তার দুই পাশে গাছ লাগানোর ব্যয় বহুল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন পাকিস্তানি ব্যবসায়ী মোহাম্মাদী দরবার।
পাকিস্তানের করাচিতে বসবাসরত সাবেক শিল্পপতি ব্যবসায়ী মোহাম্মদী দরবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ইমাম হুসাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহির স্মৃতির স্মরণে অনেক শিয়া-সুন্নি মুসলমান নাজাফ থেকে কারবালার পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
তিনি জানান, ‘আমার স্ত্রী ও নাতনি ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথের এ যাত্রায় অংশগ্রহণ করে। যাত্রাপথে মরুভূমি উষ্ণ বায়ু ও রোদের তাপে তাদের মখু ঝলসে যায়। তাদের দেখেই বুঝতে পারি যে এ পথে যে বাতাস প্রবাহিত হয়, তা কতটা উষ্ণ।
তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নাজাফ থেকে কারবালা পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে ছায়াদানকারী গাছ লাগানো ব্যবস্থা করবো।
কেননা এ পথে প্রত্যেক বছর লাখ লাখ শিয়া-সুন্নি জিয়ারতকারী নাজাফ থেকে কারাবালায় পায়ে হেঁটে যায়। দীর্ঘ এ পথের দুই পাশে তেমন কোনো ছায়াদানকারী গাছ নেই বললেই চলে।
তার আত্মীয়-স্বজনকে দেখেই তার এ বিষয়টি নজরে আসে। তা থেকেই তিনি দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার পথে ছায়াদানকারী গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। যাতে অন্ততঃ দর্শনার্থীদের গরমের কষ্ট দূর হয়।
নাজাফ থেকে কারবালা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি ইরাক সফর করেন। ইতিমধ্যে তিনি এ অঞ্চলের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গাছ লাগানোর অনুমতিও পেয়েছেন।
ব্যবসায়ী মোহাম্মাদি দরবার এ দীর্ঘ পথে শুধু গাছ লাগিয়ে তার দায়িত্ব সম্পন্ন করবেন না, বরং তা রক্ষণাবেক্ষণেরও দায়িত্ব নেবেন তিনি। যাতে গাছগুলো বেঁচে থাকে।
ইতিমধ্যে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে নাজাফে কিছু চারা রোপন করেছেন এবং এগুলোর পরিচর্যাও গ্রহণ করেছেন। নাজাফের বাগানে ও রাস্তার পাশে চারাগুলো সুন্দরভাবেই বেড়ে ওঠছে বলেও জানান তিনি।
পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রথম চালানে ৮ প্রজাতির ৯ হাজার ৮০০ চারা পাঠানো হয়। এসব চারা গাছের কোনো কোনোটির বয় প্রায় ৮ মাস। ইরাকের অভ্যন্তরীন চলমান পরিস্থিতির জন্য গাছের প্রথম চালান পাঠাতে প্রায় একমাস দেরি হয়।
উল্লেখ্য যে, পাকিস্তানের করাচি থেকে এসব চারা ইরান হয়ে সড়ক পথে ইরাক নেয়া হবে। পুরো শীতকাল ইরাকের রাজধানী বাগদাদের একটি নার্সারিতে রাখা হবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মার্চ থেকে শুরু হবে চারা রোপনের কাজ। গাছের চারাগুলোর সঙ্গে ১২ জনের একটি প্রশিক্ষিত কর্মীদলও পাঠানো হয়েছে ইরাকে। যারা চারা গাছগুলো দেখাশোনা করবে।
নাজাফ থেকে কারবালা পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে চারা গাছ রোপনে প্রায় ৩ বছর সময় লাগবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৫০ কোটি পাকিস্তানি রুপী বা প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার মার্কিন ডলার খরচ হবে।
তবে এ প্রকল্প গ্রহণকারী ৮৫ বছরের ব্যবসায়ী মোহাম্মাদি দরবার জানান, ‘রাস্তার দুই পাশে ছায়াদানকারী গাছের সুন্দর দৃশ্য আমি দেখে যেতে পারবো কিনা তা অনিশ্চিত। আল্লাহ তাআলা তাকে এ বিশাল কাজ হাতে নেয়ার সৌভাগ্য দান করায় তিনি আল্লাহ পাকের লাখো শোকরিয়া আদায় করেন।’
তিনি আরও জানান, ‘ প্রকৃতি ও মানুষের উপকারে গাছ লাগানোর মহতি কাজে নিজেকে শামিল করার চেয়ে ভালো কাজ আর কি হতে পারে!’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন