উত্তর : দিনের পরে রাত পেরিয়ে কালের গতি চলমান, সেই গতির ধারাবাহিকতায় আমাদের মাঝে ফিরে এলো আরও একটি হিজরী সন ১৪৪২। হিজরী সন সম্পর্কে নয় বরং আমি লক্ষ্য করি যে, হিজরী সন এলেই আসে মহররম মাস আর মহররম এলেই সাথে নিয়ে আসে ১০ তারিখ যাকে আমরা আশুরা বলে ডেকে থাকি। এটিকে বিশ্ব মুসলিম বিভিন্ন ভাবে পালন করে থাকে , আমাদের এই বাংলাদেশেও এর উৎযাপন কোন অংশে কম নয়। এই আশুরাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব মুসলিম আজ নানা দলে বিভক্ত। শিয়াদের কথাতো বলার মত নয়, কেননা তারা তাদের প্রধান ইবাদত হিসেবে আশুরায় মাতম করাকে মনে করে, অন্য দিকে যারা সুন্নী দাবিদার তারাও অনেকে শিয়াদের মত মাতমকে আশুরার তাৎপর্য হিসেবে মনে করতে শুরু করেছে ।
আবার একদল আছেন যারা এই দিনটির ব্যাপারে বিশ্ব নবী (সঃ) কর্তৃক বর্ণীত নির্দেশনাও মানতে নারাজ। তাহলে কোনদিকে চলছে জাতি? আমি এ নিয়ে খুবই বিচলিত। আমি বলবো! আশুরার ইতিহাস শুধুই কারবালা কেন্দ্রীক সীমাবদ্ধ নয়। এইদিনটিকে ঘিরে রয়েছে মুসলমানদের বহু গৌরবাজ্জল ইতিহাস যেগুলোর মাধ্যমে মুসলমানদের ঘুরে দাড়ানোর মানসিকতা তৈরী হয় । সুতরাং যারা শুধু কারবালার ইতিহাসকে স্বরন করে দেয় তারা কি বুঝাতে চায়? কোনভাবে এটা বলছে না তো যে, হে মুসলিম জাতি তোমাদের ইতিহাস খুবই ঘৃন্য তোমরা নবীর দৌহিত্রকে হত্যা করেছিলে। সুতরাং মাথা উচুঁ করে কথা বলতে এসোনা। এমনটি নয়তো যে, তোমাদের ইতিহাস হলো পরাজয়ের ইতহাস? যদি তাই বলতে চায় তাহলে অবশ্যই তাদেরকে বলতে হবে আশুরার ইতিহাস হলো পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস, আশুরার ইতিহাস হলো পয়গম্বর মুসার প্রতি আল্লাহর সাহায্য আসার ইতিহাস । সুতরাং মনে রেখো কারবালার ইতিহাস একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র যেখানে আল্লাহর পরিক্ষা সংঘটিত হয়েছে।
কারবালার ঘটনার বহুদিন পুর্বেই বিশ্বনবী (সঃ) হাদিস বর্ণনা করেছেন, আশুরার তাৎপর্য এবং আমল সংক্রান্ত। * বিশ্বনবী (সঃ) বলেছেন রমজানের রোজার পরে সর্বত্তম রোজা হলো মহররমের রোজা অর্থাৎ আশুরার রোজা। মুসলিম শরীফ ১/৩৬৮ * হযরত আলী রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, রাসুল সঃ রমজানের রোজা ব্যাতিত আর কোন রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কি? তখন হযরত আলী রাঃ বলেন এ ব্যাপারে আমি শুধু একজন ব্যাক্তিকেই জিজ্ঞেস করতে দেখেছি আর তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম, সে বলল হে আল্লাহর রাসুল সাঃ আমাদেরকে রমজানের রোজা ছাড়া আর কোন রোজার নির্দেশ দেন? তখন রাসুুল সাঃ বললেন তোমরা যদি চাও তবে রমজানের রোজার পরে মহররমের রোজা রাখতে পারো। কেননা এটি আল্লাহর মাস, এই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তায়ালা একটি সম্প্রদায়ের তওবা কবুল করেছিলেন। আশা করা যায় যে, সেদিন অন্য সম্প্রদায়েরও তওবা কবুল করা হবে। তিরমিযি ৭৪১
এ ধরনের আরও অনেক হাদিস রয়েছে, যেগুলোর দ্বারা বুঝা যায় যে, আশুরার দিনের রোজা সুন্নাহ এবং বরকতময়। তবে রোজা রাখার খেত্রে বিশ্বনবীর নির্দেশনা হলো তোমরা এই রোজার খেত্রে ইহুদীদের বিরোধিতা কর। অর্থাৎ তারা শুধু ১০ তারিখ রোজা রাখে তোমরা ১০/১১ অথবা ৯/১০ তারিখ রোজা রাখবে।
উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি জাকারিয়া মাসউদ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন