এতিমের মাল আত্মসাৎ করা: অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান রেখে যখন কোন পিতা মৃত্যুবরণ করে তখন সেই সন্তান অনেকাংশে অভিভাবকহীন ও অসহায় হয়ে যায়। পিতার অকৃত্রিম স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়। অনাথ এই শিশুর দুরবস্থায় তার আত্মীয়স্বজন ও পরিবার-পরিজনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্ব হলো তাকে সাহায্য ও সহযোগিতা করা। তাকে লালন পালন করা ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়তা করা। যথাযথভাবে তার সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনাথ শিশুর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সমাজের কিছু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি তার সম্পদ আত্মসাৎ করে। তাকে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত করে। এমনটি করা অত্যন্ত অমানবিক ও চরম অন্যায় কাজ। এতিমের মাল কুক্ষিগত করা পেটে আগুন ভরার নামান্তর। মহান আল্লাহ বলেন, 'যারা এতিমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্বরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।' (সুরা নিসা, আয়াত : ১০)
যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন: যদি কখনো কাফেরদের সঙ্গে মুসলমানদের ধর্ম যুদ্ধ হয়, তাহলে প্রতিটি মুসলমান সৈনিকের দায়িত্ব হল প্রাণপণে লড়াই করা। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রক্তের শেষ বিন্দু থাকা পর্যন্ত কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। যুদ্ধ চলা অবস্থায় কৌশল হিসাবে কাফেরদেরকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য কিংবা নিজেদের সৈনিকদের কাছে আশ্রয় লাভ করার নিমিত্তে সাময়িকভাবে পিছু হটলে এর অবকাশ রয়েছে। কিন্তু কাফেরদের ভয়ে ভীত হয়ে কোন মুসলমান সৈনিক যদি যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করে, তাহলে আল্লাহর গজব তার জন্য অবধারিত হয়ে যায়। এমন ব্যক্তির ঠিকানা জাহান্নামে হওয়ার কঠোর হুঁশিয়ার বাণী মহাগ্রন্থ আল কুরআনে উচ্চারণ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, 'হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কাফেরদের সাথে মুখোমুখী হবে, তখন পশ্চাদপসরণ করবে না। আর যে লোক সেদিন তাদের থেকে পশ্চাদপসরণ করবে, অবশ্য যে লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তনকল্পে কিংবা যে নিজ সৈন্যদের নিকট আশ্রয় নিতে আসে সে ব্যতীত অন্যরা আল্লাহর গজব সাথে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। আর তার ঠিকানা হল জাহান্নাম। বস্তুতঃ সেটা হল নিকৃষ্ট অবস্থান।' (সুরা আনফাল, আয়াত : ১৫-১৬)
সতী নারীদের অপবাদ দেয়া: সমাজে বহু মুসলিম নারী এমন রয়েছে যারা স্বভাবগতভাবেই সতী-সাধ্বী। তারা অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও বেলেল্লাপনার ধার ধারে না। অশালীনতা, চরিত্রহীনতা এবং যিনা-ব্যভিচারের ধারে কাছেও তারা যায় না। এমন চরিত্রবান নারীদের চরিত্র নিয়ে কটুক্তি করা এবং তাদের বিরুদ্ধে যিনা-ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া নিতান্ত অন্যায় ও চরম অপরাধ। যেসব লোক নিরীহ ঈমানদার সতী-সাধ্বী মুসলিম নারীদের উপর অপবাদ আরোপ করবে তারা ইহ ও পরকালে ধিকৃত হবার সঙ্গে সঙ্গে মহান আল্লাহ শাস্তির সম্মুখীন হবে। পবিত্র কুরআন শরিফে বর্ণিত হয়েছে, 'যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকালে ও পরকালে ধিকৃত এবং তাদের জন্যে রয়েছে গুরুতর শাস্তি।' (সুরা নুর, আয়াত : ২৩)
উপরে যে সাতটি পাপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো নিতান্ত অন্যায় ও চরম অপরাধ। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলোকে ধ্বংসাত্মক বলে আখ্যায়িত করে এগুলো হতে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করেছেন। 'হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা (২) জাদু করা (৩) আল্লাহ তাআলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরিয়ত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) এতিমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবা সতী-সাধ্বী বিশ্বাসী নারীদের অপবাদ দেয়া।' (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭৬৬) মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে এসব ধ্বংসাত্মক বিষয় হতে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন।
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা-১২১১
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন