বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন: নামাজে কী বান্দার প্রশান্তি মেলে?

| প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

উত্তর: নামাজে মুক্তি। নামাজে প্রশান্তি। নামাজে মেরাজ। নামাজে বান্দার সাথে প্রভূর কথোপকথন। নামাজই সব। হাশরের মাঠের চালান পুঁজি হলো নামাজ। ঐ দিন বান্দার নামাজের হিসাব আগে নেয়া হবে। পার্থিব জীবনে যারা নামাজের প্রতি যতœবান হবে তারাই উভয় জাহানে সফলকাম। পার্থিব বিপদ-আপদ বালা-মুসিবত দূরীকরণে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ নিজেই তাঁর বান্দাকে শিখিয়ে দিচ্ছেন যে, তোমরা নামাজের মাধ্যমে আমার সাহায্য কামনা করো। কুরআনে ইরশাদ,‘ হে মুমিন গণ! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।’ (সূরা আল-বাকারা: ১৫৩)। নামাজ বান্দার আমলনামা থেকে গোনাহ গুলো ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে নিষ্পাপ বানিয়ে দেয়। হযরত আবু হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা বলতো, যদি তোমাদের কারো দরজার সামনে একটি নহর থাকে যাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে? সাহাবাগণ উত্তরে বললেনঃ না, কোনো ময়লাই অবশিষ্ট থাকবে না। অত:পর রাসূল (সা:) বললেন : পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্ত এমনই। এর বিনিময়ে আল্লাহ পাক নামাজীর সকল গোনাহ মাফ করে দেন।’ (বোখারি:৫০৩)।

নামাজ আদায় করতে হলে দেহ-মন পবিত্র রাখতে হয়। অন্তরের পবিত্রতার সাথে সাথে বাহ্যিক পবিত্রতা বজায় রাখতে হয়। নামাজ এমনই এক আমল যা পবিত্রতা ছাড়া আদায় করা যায় না। যারা যথাযথ নিয়মে খুশু-খুযুর সাথে নামাজ আদায় করবে আল্লাহতায়ালা তাদের নিকট থেকে জাহান্নামের আগুন দূরে রাখবেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই ঐ সকল ঈমানদারগণ সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাজে খুশু-খুযুর সাথে আদায় করে।’ (সূরা মুমিনূন:১-২)। হযরত হানজালা উসাঈদী (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথাযথ পাবন্দির সাথে আদায় করে, উত্তমরূপে অজু করে, সময়ের প্রতি খেয়াল রাখে, রুকু-সিজদা ঠিকমতো আদায় করে এবং এভাবে নামায আদায়কে নিজের উপর আল্লাহ তা‘আলার হক মনে করে তবে জাহান্নামের আগুন তার জন্য হারাম করে দেয়া হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ-৪: ২৬৭পৃ.)। হযরত নাওফেল ইবনে মুয়াবিয়া (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘যার এক ওয়াক্ত নামাজ ছুটে গেল তার যেন ঘরবাড়ি, পরিবার-পরিজন ও ধন দেীলত সবকিছু ছিনিয়ে নেয়া হলো।’ (ইবনে হিব্বান-৪:৩৩০ পৃ.)।

হাশরে মাঠে নামাজের হিসাবের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী আমলের হিসাব নেয়া হবে। যারা নামাজের হিসাব সঠিকভাবে দিতে পারবে। তাদের জন্য অন্যান্য আমলের হিসাব সহজ করে দেয়া হবে। নামাজী বান্দা হাশরের মাঠে আনন্দ উল্লাস করতে থাকবে। ঐ দিন তাদের কোনো ভয় থাকবে না। দুনিয়াতে যারা নামাজ সম্পর্কে গাফেল ছিলো, সেদিন তারা হা-হুতাশ করতে থাকবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে কুরত (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেয়া হবে। যদি নামাজ ঠিক থাকে তবে অন্যান্য আমলও সঠিক বলে প্রমাণিত হবে। আর যদি নামাজের হিসাবে গড়মিল হয়, অন্যান্য আমলও ক্রুটিযুক্ত হয়ে যাবে।’ (তিরমিযি-১:২৪৫পৃ.)। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘তোমরা সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দাও। আর তোমরা নিজেদের জন্য অগ্রে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে।’ (সূরা বাকারা:১১০)। ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না।’ (সূরা ফাতির:২৯)।

নামাজ আদায়কারী বান্দার অন্তর সব সময় প্রশান্ত থাকে। তাদের দেহ-মনে কোনো কালিমা থাকে না। তারা সর্বোচ্চ নেয়ামত জান্নাতের উত্তরাধীকারী হবেন। তাদেরকে পরোকালে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দেয়া হবে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের সালাতের হিফাজত করে, এরাই আল্লাহর জান্নাতে মর্যাদা সহকারে প্রবেশ করবে।’ (সূরা মা’আরিজ :৩৪-৩৫)। ‘যারা তাদের সালাত সমূহের হিফাজতকারী, মূলত: এরাই হবে জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী এবং সেখানে তারা স্থায়ী ভাবে থাকবে ।’ (সূরা মুমিনুন: ৯-১১)। আল্লাহতায়ালা নামাজে যতœবান হওয়ার জন্য তৌফিক দান করুক। আমীন।

উত্তর দিচ্ছেন: ফিরোজ আহমাদ, ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন