গোলাম মোস্তফা রুমী : ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। ঈদে নতুন জামাকাপড় পরা, এ বাড়ি ও বাড়ি গিয়ে আত্মীয়স্বজন, প্রিয় জনদের সঙ্গে সময় কাটানো কতই না মধুর। ঈদে হাসি-খুশির অন্যতম একটি উপকরণ নতুন টাকা। বৃদ্ধ, শিশু, মা-বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী, সন্তানদের ঈদ সালামির টাকা যদি দেয়া হয় নতুন তা ঈদে যোগ করে নতুন এক আকর্ষণ। তাই ঈদকে ঘিরে দেশে নতুন টাকার বিপুল লেনদেন হয়ে আসছে। চলছে একে ঘিরে বাণিজ্যও। রাজধানীতে এখন ঈদ ঘিরে চলছে নতুন টাকার রমরমা বাণিজ্য। সরকার বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে নতুন টাকা বিনিময় করছে। যারা সে সুযোগ নিতে পারছেন না তারা রাজধানীর নতুন টাকা বিক্রির হাট থেকে একটু চড়া দামেই নতুন টাকার নোট কিনে নিচ্ছেন। ঈদকে সামনে রেখে ফুটপাতে জমে উঠেছে নতুন টাকার বাজার। রাজধানী ঢাকার ব্যাংকপাড়া মতিঝিলসহ গুলিস্তান, চকবাজার, সদরঘাটের বেশ কয়েকটি জায়গায় চলছে নতুন টাকার ব্যবসা। নতুন ২ টাকার ১০০টি নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা বেশিতে। ৫ টাকার ১০০টি নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা বেশিতে। ১০ টাকার ১০০টি নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা বেশিতে। ২০ টাকার ১০০টি নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা বেশিতে। ৫০ টাকার ১০০টি নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা বেশিতে। ১০০ টাকার ১০০টি নতুন নোট বিক্রি হয় ৭০ টাকা বেশিতে। গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে এই টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। গুলিস্থানের নতুন টাকা বিক্রেতা রহমান বলেন, আমরা যে ৫০ বা ৮০ টাকা বাড়তি নিই, এতে আমাদের লাভ হয় ১০ থেকে ২০ টাকা। কারণ ব্যাংক আমাদের সরাসরি টাকা দেয় না। ব্যাংকে কিছু লোক থাকে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা উত্তোলন করে। তারপর তারা বিভিন্ন কমিশনে আমাদের কাছে বিক্রি করে। দুই টাকার ১০০টি নোট ২৩০ টাকা দিয়ে কিনে ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। এভাবে অন্যান্য টাকাও কমিশনে কিনতে হয় বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, প্রতি বছর রমজান এবং কোরাবানির ঈদকে সামনে রেখে নতুন টাকা বাজারে ছাড়া হয়। কারণ ঈদের সময় অনেকে সালামি বা উপহার হিসেবে নতুন নোট দেয়। আর এই সময় নতুন টাকা পেতেও মানুষ পছন্দ করে। এ বছরও ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়া হয়েছে। কয়েন থেকে শুরু করে দেশে প্রচলিত সবগুলো মুদ্রায় এ টাকা ছাড়া হচ্ছে। তবে ছোট নোটের কদর বেশি। ১৬ জুন থেকে শুরু হয়ে ৪ জুলাই পর্যন্ত বিতরণ চলবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নয়টি অফিসসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্ধারিত শাখায় এই নতুন টাকা পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একজন সাধারণ মানুষ ৮ হাজার ৭শ টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারছেন। এ বছর বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে টাকা সরবরাহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য আলাদা কাউন্টার রয়েছে। কারেন্সি অফিসারের অনুমতি নিয়ে এসব টাকা তুলতে হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ব্যাংক লেনদেন চলাকালে এই নোট সংগ্রহ করা যায়। বিনিময় চলবে ঈদের আগের শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব কাউন্টারসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২০টি শাখা থেকে নতুন নোট বদলে নেয়া যাচ্ছে। একজন গ্রাহক একবারে দুই টাকা, পাঁচ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা এবং ৫০ টাকার বান্ডেলের একটি প্যাকেটে মোট আট হাজার ৭০০ টাকা বদলে নিতে পারছেন। ঢাকার বাইরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শাখা অফিসে বিশেষ কাউন্টার খোলা হয়েছে। এসব শহরের নির্দিষ্ট কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকেও একই রকম ব্যবস্থা আছে। রাজধানীর ১৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২০টি শাখায় বিশেষ কাউন্টারে নতুন নোট পাওয়া যাচ্ছে। শাখাগুলো হলো- সোনালী ব্যাংকের রমনা কর্পোরেট শাখা, জনতা ব্যাংকের আবদুল গনি রোড কর্পোরেট শাখা ও নিউমার্কেট শাখা, অগ্রণী ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখা, রূপালী ব্যাংকের মহাখালী শাখা, সাউথইস্ট ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখা, উত্তরা ব্যাংকের চকবাজার শাখা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মোহাম্মদপুর শাখা, ব্যাংক এশিয়ার ধানমÐি শাখা, ঢাকা ব্যাংকের উত্তরা শাখা, দ্য সিটি ব্যাংকের মিরপুর শাখা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মালিবাগ শাখা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের দক্ষিণখানের এসএমই অ্যান্ড কৃষি শাখা, এসআইবিএলের বসুন্ধরা সিটি মার্কেট শাখা, পূবালী ব্যাংকের সদরঘাট শাখা, ন্যাশনাল ব্যাংকের যাত্রাবাড়ী শাখা, ওয়ান ব্যাংকের বাসাবো শাখা, আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশান শাখা, ইসলামী ব্যাংকের শ্যামলী শাখা এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বনানী শাখা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন