শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

‘খালেদা জিয়া ইফতার পার্টিতে বসে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন’

কর্মীদের সততার সঙ্গে চলার আহ্বান জানালেন শেখ হাসিনা

প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২৩ এএম, ২৪ জুন, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে নিজের সবকিছু আত্মত্যাগ কওে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সততার সঙ্গে চলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। যে সংগঠন বঙ্গবন্ধু দিয়ে গেছেন, যে সংগঠনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে। শেখ হাসিনা  আরো বলেন, সততা সবচেয়ে বড় শক্তি। সততা দিয়েই যে কোনো দুর্যোগ ও দুর্বিপাক মোকাবিলা করা যায়। যে সততা দিয়ে উঁচু গলা কথা বলার সাহস জোগায়, সততার এই শক্তি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই শিখেছি।
আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে স্মরণ করেন তিনি। এ ছাড়াও শেখ হাসিনা জাতীয় চার-নেতাসহ দলের পূর্বসূরি নেতা-কর্মীদের যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা ও ত্যাগের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ গণমানুষের এক বিশাল সংগঠনে পরিণত হয়েছেÑ তাদের স্মরণ করেন।
 বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইফতার পার্টিতে বসে অজস্র মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। তিনি আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন। খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের প্রহসনের নির্বাচনে খুনি রশীদ ও হুদাকে সংসদ সদস্য করেন। এর পরেও তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদের এখন ফাঁসি হয়েছে তাদের মন্ত্রী করেছিলেন। তার আগে জেনারেল এরশাদও কম যাননি। ঠিক তারও আগে খুনিদের, দেশবিরোধীদের বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দেশে আনেন, রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেন। যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল তাদেরই জিয়া-খালেদা ক্ষমতায় বসান।
খালেদা জিয়া সরকারে থাকার সময় বিভিন্ন অপকর্ম করেছেন, তার অপশাসন থেকে দেশকে মুক্ত করতে আওয়ামী লীগ সংগ্রাম করেছে। সংগ্রাম করে করেই আওয়ামী লীগকে যুগে যুগে টিকে থাকতে হয়েছে। বাঙালির প্রতিটি অর্জনেই আওয়ামী লীগের অবদান রয়েছে, সেই ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু। দেশের প্রতিটি শহীদের তালিকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর নাম রয়েছে।
 আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে নেতা দল গোছানোর জন্য মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছিলেন, সেই সংগঠনের শিকড় কত গভীরে, বারবার আঘাত করেও যারা কিছু করতে পারেনি, তারাই এটা উপলব্ধি করতে পেরেছে। তিনিই একমাত্র নেতা, যিনি দলকে সুসংগঠিত করতে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কোনোদিন সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল করেনি। তারা সব সময় ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় তারা পুঙ্খানুপুুঙ্খভাবে পালন করেছেন। কিন্তু নেতারাই দল ছেড়ে চলে গেছে। তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কিন্তু তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এসব করেনি। তারা দলের জন্য সবকিছু করতে বদ্ধপরিকর।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেতা-কর্মীদের দেশের জন্য ত্যাগ করতে শিখতে হবে। ভোগের কথা চিন্তা করলে দেশকে কিছুই দেয়া যাবে না। এ উদাহরণ হচ্ছে ৭৫’-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা ত্যাগের কথা চিন্তা না কওে ভোগের কথা চিন্তা করেছিল। এজন্য দেশের কোনো উন্নয়ন হয়নি। তিনি বলেন, ব্যক্তি স্বার্থ নিয়ে যারা রাজনীতি করেন তারা হয়তো নিজেদের জন্য অনেক কিছু করতে পারেন, কিন্তু দেশকে কখনও কিছু দিতে পারেন না। আমাদের একটাই লক্ষ্য জনগণের কল্যাণ, আওয়ামী লীগ সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। সেভাবেই আগামীতে কাজ করে যাবে।
এই দলটির বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, তবে আওয়ামী লীগের শেকড় এতো শক্ত, যার অবদান তৃণমূলের নেতাকর্মীদের,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যতবার দল ভাঙার ষড়যন্ত্র হয়েছে ততবার উজ্জ্বল হয়েছে দল। আঘাত আমাদের বিরুদ্ধে বারবার এসেছে, সব আঘাত সহ্য করে আমরা এগিয়ে গেছি। হয়তো উপরের নেতারা ভুল করেছেন, তৃণমূল কখনও ভুল করেনি। সব নির্দেশনা মেনে তারা কাজ করে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে অর্থনীতির মুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছি, আরও দেব। বাংলাদেশের মানুষ কেবল নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছেছে। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।
পুরো বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই কিছু দিয়েছে। এর বাইরে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা জনগণকে শোষণ করেছে। আওয়ামী লীগ প্রতিটি পদে পদে সংগ্রাম করেছে। সংগ্রাম করেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে গেছে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অনুপম সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
 প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার অঙ্গীকারই হচ্ছে বাংলার মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেয়া, উন্নত জীবন দেয়াÑ যেটা বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন যে, বাংলার মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবন পায়Ñ এটাই তাঁর কামনা। আর তাঁর এই কামনা পূরণ করাই আমাদের লক্ষ্য, অন্তত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এই মৌলিক অধিকারগুলোর সংস্থান করা।
তিনি বলেন, ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটির প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভূখ-ে যা কিছু বিশাল অর্জন তা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সঙ্গে এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৫২’র ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২’র আইয়ুবের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৪’র দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ১৯৬৬’র ৬-দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানÑ সবই পরিচালিত হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে।
প্রধানমন্ত্রী দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের খ-চিত্র তুলে ধরে বলেন, গত সাড়ে সাত বছরে আমাদের সরকার দেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ উন্নয়ন, পররাষ্ট্রনীতি ও কৌশলসহ প্রতিটি সেক্টরে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাপক উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছে। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৫ শতাংশে উন্নীত এবং দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার। রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ৫ কোটি মানুষ নিম্নআয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Habib ২৪ জুন, ২০১৬, ১২:৪৬ পিএম says : 0
জাতি জানে সব
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন