বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সন্তানের জন্য ৪১ বছর ধরে ১২ মাস রোজা রাখছেন সুখিরন

প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা : সন্তানের জন্য ৪১ বছর রোজা পালন করে এক মমতাময়ী মা ভাপলভবাসার এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন। তিনি ১৯৭৫ সাল থেকে ১২ মাস রোজা পালন করে যাচ্ছেন। এই মায়ের নাম সুখিরন নেছা।
সংসার আর ধনসম্পদ বলতে নিজের কিছুই নেই তার। অভাব- অনটনের জীবন। না খেয়ে থাকলেও কারো কাছে হাত পাতেন না সুখিরন। ‘সন্তানের জন্য রোজা রাখি, তার আবার কষ্ট কিসের? জিজ্ঞেস করতেই স্মিত প্রশান্তিভরা হাসিতে জবাব দিলেন ৬৯ বছরের বৃদ্ধা সুখিরন ওরফে ভেজিরন নেছা।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটী ইউনিয়নের বাজারগোপালপুর গ্রামের মৃত আবুল খায়েরের স্ত্রী সুখিরন বছরের বারো মাসই রোজা রাখেন। গ্রামের প্রতিবেশী যুবক মঞ্জুর আলম জানান, পরের ক্ষেতের কাঁচামরিচ, মুগ, কলাই তুলে ও চানাচুর ফ্যাক্টরিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন সত্তর ছুঁই ছুঁই এই বৃদ্ধা। সারাদিন  রোজা রাখার পরও খাবারের জন্য কারো দ্বারস্থ হন না আত্মসম্মানবোধে টইটম্বুর এই গর্বিত মা। নিজেই এখনো ভাত রান্না করে খান। প্রতিবেশী মসলেম উদ্দীন জানান, যে সন্তানের জন্য তিনি ১২ মাস রোজা রাখেন, সেই সন্তানের কাছেও তিনি খাবারের জন্য যান না। ১২ মাস রোজা রাখা নিয়ে সুখিরন নেছা স্মৃতিচারণ করে বলেন, তার বয়স যখন ২৬ বছর, তখন বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম হারিয়ে যান। দীর্ঘদিন খুঁজেও ১১ বছর বয়সী শহিদুলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ওদিকে সন্তানের চিন্তায় ব্যাকুল মা সুখিরন নেছা প্রায় পাগল হয়ে যান। তিনি মনস্থির করেন ছেলে ফিরে এলে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য বারো মাস রোজা রাখবেন। গ্রামের মসজিদ ছুঁয়ে সুখিরন এ প্রতিজ্ঞা করেন। এরপর দেড় মাস পর হঠাৎ তার হারিয়ে যাওয়া সন্তান নিজ বাড়িতে ফিরে এসে ‘মা’ বলে ডাক দেয়। সুখিরন নেছা নাড়িছেঁড়া হারানো ধনকে বুকে ফিরে পেয়ে চূড়ান্ত স্বস্তি-শান্তির স্পর্শ পান। এটা ১৯৭৫ সালের ঘটনা। তারপর থেকেই তিনি স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ তপু মিয়ার পরামর্শে বারো মাস রোজা রাখা শুরু করেন।
প্রতিবেশীরা জানান, ২১ বছর আগে সুখিরন নেছার স্বামী আবুল খায়ের ইন্তেকাল করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তার সংসারে অভাব- অনটন নেমে আসে। সচ্ছল সংসারে হানা দেয় অনটন আর দারিদ্র্য। তিন ছেলে ও তিন মেয়ে লালন-পালন করতে মাঠের জমি ও ভিটেমাটি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েন প্রতিজ্ঞা পালনে অটল সুখিরন। যে ছেলের জন্য সুখিরন নেছা ১২ মাস (৫ দিন ব্যতীত) রোজা রাখেন সেই বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম জানান, আমার জন্য মা কষ্ট করে রোজা রাখেন। আমি রোজা রাখতে নিষেধ করলেও তিনি শোনেন না। অসুখ-বিসুখ হলেও তিনি
রোজা ভাঙেন না। তিনি আরো বলেন, আমি যতটুকু পারি সহায়তা করি। তবে তিনি আমাদের মুখাপেক্ষী নন। এলাকার ইউপি সদস্য ও মধুহাটী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তহুরুল ইসলাম জানান, বৃদ্ধা সুখিরন ওরফে ভেজিরন নেছার ১২ মাস রোজা পালনের কথা চিন্তা করে তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। তবে তার বাড়িঘর নেই। ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন