শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয় -এইচ টি ইমাম

প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : লেখক, ব্লগার, প্রকাশদের হত্যাকা-কে উগ্রপন্থীরা একমাত্র সমাধান হিসেবে ধরে নিয়েছে। কিন্তু তাদের জেনে রাখা উচিত বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এই সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে। রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে শুরু হওয়া ‘মুক্ত বিশ্বে প্রকাশনা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এসব কথা বলেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে দুই দিনব্যাপী এই সেমিনারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি আয়োজিত প্রথম দিনের সেমিনারে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইপিএ)-এর সভাপতি রিচার্ড চার্কিন ও আইপিএর পরিচালক বেন স্টুয়ার্ড।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আখতারুজ্জামান এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি। সঞ্চালনা করেন সমিতির সহসভাপতি মাজহারুল ইসলাম।
এইচ টি ইমাম বলেন, আমাদের দেশে শত সমস্যার পরেও প্রকাশনা শিল্প এগিয়ে চলছে। শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও পাঠকসংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি সেখানেও প্রকাশনা শিল্প গড়ে উঠছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা না। কোনো কিছুর বৈধতা দেওয়া মানে কোনো কিছুর অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা দেওয়া না। আপনি কিছু বলতে পারেন না যা অন্যের স্বাধীনতায় আঘাত করে। আপনার কোনো অধিকার নেই অন্যের ধর্মবিশ্বাসকে গালাগাল করার। বাংলাদেশের প্রকাশকদের শুধু বাংলা ভাষাকে ধারণ করলেই হবে না, বাংলাদেশে বিদ্যমান অন্য ভাষাকেও ধারণ করাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তিনি জানান, বাংলাদেশে ১২টি ভাষা বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
ড. আনিসুজ্জামান বলেন, প্রকাশনা কালের শুরু থেকে নিয়ন্ত্রণ, সেন্সরশিপের সঙ্গে প্রকাশনার স্বাধীনতার দ্বন্দ্ব চলে আসছে। তিনি বলেন, কয়েক বছরে বগার, প্রকাশক ও লেখকদের হত্যা করা হয়েছে। উগ্রপন্থীরা ঠিক করেছে হত্যাই একমাত্র সমাধান। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এসব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে।
আক্তারী মমতাজ বলেন, নানা সমস্যা রয়েছে, কিন্তু সরকার এসব ব্যাপারে সচেতন রয়েছে। বেআইনি প্রকাশনাকে কোনোভাবেই অনুমোদন দেব না আমরা।
শামসুজ্জামান খান বলেন, প্রকাশনার বিষয়ে নানা সমস্যা বাংলাদেশে যেমন আছে তেমনি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও রয়েছে। আমাদের দেশে সব লেখকই সব কিছু নিয়ে লিখতে পারে, লেখকদের চিন্তার স্বাধীনতা রয়েছে। তবে আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) এবং ধর্মীয় বিষয়ে কোনো বাজে মন্তব্য বা লেখা হলে সেটা বরদাস্ত করা হয়নি এবং হবে না। ধর্মীয় উস্কানিকে আমরা স্বাগত জানাই না।
রিচার্ড চার্কিন বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আমি দেখেছি বাংলাদেশের মানুষ কতটা বইপ্রেমী। আমরা বিশ্বাস করি সেরা বই দিয়ে বাংলাদেশর বিজ্ঞানী, লেখক, সাহিত্যিকরা মানুষের চিন্তার খোরাক জোগাবে। অন্যদিকে পুস্তক শিল্পের দায়িত্ব হবে এই সকল কবি সাহিত্যিকদের জন্য সে রকম পরিবেশ তৈরি করা যাতে তারে নির্বিঘেœ লিখতে পারেন। পাইরেসি এই পথে অন্যতম বাধা।
বেন স্টুয়ার্ড বলেন, ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে প্রকাশনা নিয়ে কাজ করছে। প্রকাশনা, পৃষ্ঠাপোষকতা, কপি রাইট, চিন্তারার প্রকাশ, ভাবের আদান-প্রদান, সৃজনশীলতা বিষয়েও গুরুত্ব পায়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রকাশনার বিষয়ে কথা বলতে গেলে এখানে মুক্ত চিন্তার লেখকদের চিন্তার ওপর আঘাত, তাদের হত্যার বিষয়ে অবশ্যই কথা বলতে হয়। মৌলবাদীদের হাতে এরই মধ্যে মুক্তচিন্তার কয়েকজন লেখক হত্যার কথা আমরা জানি।’
স্টুয়ার্ড তার বক্তব্যে মৌলবাদীদের হাতে আহত প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলের একটি খুদে বার্তা পড়ে শোনান। যেখানে টুটুল লিখেছেন, আজকের সেমিনারে না থেকেও উপস্থিত রয়েছেন জাগৃতি প্রকাশনীর ফয়সাল আরেফিন দীপন। যে মুক্তচিন্তার বই প্রকাশ করে মৌলবাদীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। সেইসঙ্গে আরেকজন প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিক বই প্রকাশের জন্য কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে সেমিনারের প্রথম সেশন অনুষ্ঠিত হয়। ‘প্রকাশনার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা’ শিরোনামে এ সেশনের সভাপতিত্ব করেন প্রাবন্ধিক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। আলোচনায় অংশ নেন রিচার্ড চার্কিন, বেন স্টুয়ার্ড, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, কথাসাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজরুল ইসলাম এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কবি নূহ-উল-আলম লেনিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক কামরুল হাসান শায়ক।
আজ শনিবার সেমিনারের শেষ দিন। এদিন তিনটি সেশন অনুষ্ঠিত হবে। সেশনগুলো হলো ‘দেশীয় প্রকাশনার আন্তর্জাতিকীকরণ’, ‘প্রকাশনায় নারী’ ও ‘প্রকাশনার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা’। এতে বিদেশি প্রকাশকদের মধ্যে অংশ নেবেন ভারতের মন্দিরা সেন ও ইমানুল হক, শ্রীলঙ্কার দীনেশ কুলাতাঙ্গা এবং নেপালের লিখাত পান্ডে।
তিন সেশনের সভাপতিত্ব করবেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, অধ্যাপক নিয়াজ জামান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। এরপর সমাপনী আয়োজনে প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন