স্টাফ রিপোর্টার : ঐতিহাসিক বদর দিবস উপলক্ষে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মাহ পরিষদসহ বিভিন্ন দরবার ও সংগঠনের উদ্যোগে গতকাল পৃথক পৃথক আলোচনা শেষে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন আলোচনায় আলোচকগণ বলেন, চলমান হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদী শিক্ষানীতির পাঠ্যসূচি বাতিলসহ ইসলাম রক্ষায় বদরের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে ওলামা মাশায়েখ ও পীর সাহেবগণকে।
ওলামা মাশায়েখ আইম্মাহ পরিষদ
বক্তাগণ বলেছেন, বাতিলের মোকাবেলায় তাকওয়াভিত্তিক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই। তারা বলেন, পবিত্র রমজান মাসে ঐতিহাসিক বদরযুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছিলো। বদর দিবস প্রকৃতপক্ষে মুসলিম জাতির বিজয়ের দিন। তাকওয়াভিত্তিক ও সুশৃঙ্খল জেহাদের মাধ্যমে তাগুদী শক্তির পরাজয় ঘটেছিল। তাই বাতিলের মোকাবেলায় তাকওয়াভিত্তিক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই। নাস্তিক মুরতাদ ও ইসলাম বিরোধী শয়তানী শক্তিকে সমূলে উৎপাটনের জন্য ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের নামে ওলামায়ে কেরাম ও ইমাম/খতীবদের হয়রানি বন্ধে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বর্তমান প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ২০১৬ ইং একটি নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা আইন। এ আইন বাস্তবায়ন হলে দেশ একটি নাস্তিক দেশে পরিণত হবে। ওলামায়ে কেরামকে এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
গতকাল বাদ আসর, ঢাকার পল্টনস্থ একটি হোটেল জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে “ঐতিহাসিক বদর দিবসের শিক্ষা” শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই উপরোক্ত কথা বলেন। সংগঠনের নগর আহ্বায়ক, প্রিন্সিপাল মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ [কুয়াকাটা] এর সভাপতিত্বে, সদস্যসচিব মুফতী মুহিব্বুল্লাহ’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক, মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজী, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব, অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমীর, ড. ঈসা শাহেদী, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ও মাসিক আদর্শ নারীর সম্পাদক মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী, মুফতী আব্দুর রহীম কাসেমী, মুফতী রফিকুন্নবী হক্কানী, মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা ইউনুস ঢালী, মাওলানা আশরাফ উদ্দীন আরিফ প্রমুখ।
খেলাফত মজলিস চকবাজার
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, শিরক ও কুফরী পাঠ্যসূচীর মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা যাবে না। প্রয়োজন প্রতিটি শিক্ষা ব্যবস্থায় আল্লাহ প্রদত্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। তাহলেই সন্ত্রাস, দুর্নীতি চাঁদাবাজিসহ সকল অপরাধ বন্ধ হবে। অবিলম্বে শিক্ষানীতি ২০১০, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন বাতিল ও পাঠ্যসূচী সংশোধন করতে হবে। সরকার যদি বাতিল করতে ব্যর্থতার পরিচয় দেয় তাহলে দেশের জনগণ বাতিল করতে যা করা দরকার তাই করবে।
গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরীর চকবাজার থানার শাখার উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
থানা সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হাফেজ দেলোয়ার হোসাইনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহানগর সহ-সভাপতি হাফেজ শহীদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, বিশিষ্ট আলেম মাওলানা জসিম উদ্দীন প্রমুখ।
ইসলামী ঐক্যজোট নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ঐক্যজোট নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সরকারের অন্দরমহলে ঘাপটি মেরে থাকা একটি ইসলামবিদ্বেষী মহল রাষ্ট্র ও ধর্মের মাঝখানে বিভেদ তৈরির অপচেষ্টা করছে। এরাই ইসলাম বিরোধী, নৈতিকর্তা বিবর্জিত শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইন প্রণয়ন করে আগামী প্রজন্মকে হিন্দুত্ববাদে দীক্ষিত করার পাঁয়তারা করছে। নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, অবিলম্বে এই অভিশপ্ত শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইন বাতিল করুন। অন্যথায় উলামায়ে কেরাম রাজপথে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে।
গতকাল শুক্রবার কুমিল্লা মেঘনা উপজেলায় সাতানী আশরাফুল উলুম মাদরাসায় ঈমান আক্বিদা সংরক্ষণ কমিটির আলোচনা ও ইফতার মাহফিলে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখছিলেন। সংগঠনের সভাপতি মাওলানা আলতাফ হোসাইনের সভাপতিত্বে এত আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ও মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ, মাওলানা রিয়াজতুল্লাহ, ঈমান আক্বিদা সংরক্ষণ কমিটির সেক্রেটারি মাওলানা আল আমিন, মাওলানা কামালুদ্দিন, মুফতী আবু সাঈদ, মাওলানা সোহাইল হোসাইন, মাওলানা আরিফুল হক,মাওলানা আজিজুল হক, মাওলানা সোহাইল, আব্দুল ওয়াহাব মাষ্টার, মাও:আতাউর রহমান, আব্দুর রহমান প্রমুখ।
মাহফিলের সভাপতি মাওলানা আলতাফ হোসাইন বলেন, পবিত্র মাহে রমজান শুধু ইবাদত নয়, মুসলমান আধ্যাত্মিক বলে বলীয়ান হয়ে বাতিল, কুসংস্কার ও বিদআতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার শিক্ষা দেয়।
মশুরীখোলা দরবার
ঐতিহ্যবাহী ঢাকা, নারিন্দা মশুরীখোলা দরবার শরীফের উদ্যোগে ঐতিহাসিক বদর দিবস উপলক্ষে মিলাদ শরীফ ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। উক্ত মাহফিলে বদর দিবসের গুরত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আলোচনায় দরবারের পীর সাহেব হযরত মাও. শাহ আহসানুজ্জামান বলেছেন, বদরের সাহাবীগণকে অনুসরণ করে হয় গাজী নয় শহীদ এ তামান্না অন্তরে ধারণ করে ইসলামের পক্ষে ওলামায়ে কেরাম ও পীর মাখায়েখগণকে অবস্থান নিযে ময়দানে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
উক্ত মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন মশুরীখোলা দরবার শরীফের ভক্তবৃন্দ ও হযরত শাহ আহসানুল্লাহ (রহ.) কমপ্লেক্স এর সদস্যবৃন্দ, দারুল উলুম আহসানিয়া কামিল মাদ্রাসা, লতিফিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা, আহসানিয়া এতিমখানার শিক্ষকম-লী ও ছাত্রবৃন্দ। মাহফিল শেষে মুসলিম বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মশুরীখোলা দরবার শরীফের গদ্দিনেশীন পীর সাহেব হুজুর মুহতারাম আলহাজ হযরত মাওলানা শাহ্ মুহাম্মদ আহ্ছানুজ্জামান (মা.জি.আ.)।
আল-নূর কালচারাল সেন্টার
আল নূর কালচারাল সেন্টারের উদ্যোগে কুরআন বিতরণ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ডেমরায় আল নূর এডুকেশন কমপ্লেক্সে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আল নূর কালচারাল আহ্বায়ক দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সহকারী সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীর সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক আনছারুল হক ইমরানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মুফতি সালমান আহমদ, মাওলানা ফরিদ আহমদ, মাওলানা মাহবুব এলাহী, নূরানীতা’লীমুল কুরআন বোর্ডের প্রশিক্ষক মাওলানা আল আমিন মামুন, বাংলাদেশ কাজী সমিতির মাওলানা তাকদীর হোসাইন প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেন, পবিত্র রমজান মাস বছরের সকল মাসের চেয়ে উৎকৃষ্ট। এই মাসেই নাযিল হয়েছে পবিত্র আল-কুরআন। মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার নেক আমলের সওয়াবকে ৭০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। দুনিয়াবী ও আসমানী সকল সমস্যার সমাধান একমাত্র কুরআনেই রয়েছে। কাজেই কুরআন ও সুন্নাহর বাইরে মুসলমানদের দৃষ্টি ফেরানোর কোন সুযোগ নেই। নির্বাহী পরিচালক মুফতি সালমান আহমদ বলেন, দীর্ঘ মাসের সিয়াম-সাধনার শিক্ষাকে সমাজে বাস্তবায়ন করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন