বিশেষ সংবাদদাতা : গ্রাহক পর্যায়ের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ও সমিতিগুলো (পবিস) দিয়েছে তা নাকচ করে দিয়েছেন বিদ্যুৎ. জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে বরং সিস্টেম লস আরও ২ শতাংশ কমানোর চেষ্টা করুন-লোকসান থাকবে না। তার মতে, বিদ্যুতের দাম বাড়ালে একটি বৃহৎ অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কাজেই বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে বরং গ্রামের এই দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ দিন। তিনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর লোকসান কমাতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়া, দূর্নীতি প্রতিরোধ, প্রিপেইড মিটার চালুর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। গ্যাসের ব্যাপারে তিনি বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে আবাসিক খাতের গ্যাস সমস্যা এলএনজি’র মাধ্যমে দূর করা সম্ভব হবে। গ্যাস ও এলএনজি’ দামের মধ্যেও সমন্বয় করা হবে। শিল্পখাতে গ্যাসের কোন সমস্যা থাকবে না যদি পরিকল্পিত শিল্পায়ন গড়ে তোলা যায়।
গতকাল রোববার সকালে তিন দিনব্যাপী জেনারেল ম্যানেজার সম্মেলনের শেষ দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী একথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআরইবি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন। এছাড়াও দু’জন জিএম, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো থেকে আসা দু’জন সভাপতি এবং বিআরইবি’র দু’জন কর্মকর্তা।
বিদ্যুৎ. জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে অনিয়ম ও দূর্নীতি রয়েছে। এসব দূর্নীতির সাথে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, অরাজনৈতিক লোকজন, ঠিকাদার ও বিআরইবি’র কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জড়িত রয়েছেন। তিনি এসব দূর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন।
বিদ্যুতের দাম না কমানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে নসরুল হামিদ বিপু বলেন, বর্তমানে আপনাদের ১২শতাংশ সিস্টেম লস রয়েছে। এ থেকে ২ শতাংশ কমাতে পারলে ৬শ’ কোটি টাকা লোকসান কমানো সম্ভব। তিনি বলেন, আপনারা আগামী ৬ মাসে কত পারসেন্ট সিস্টেম লস কমিয়ে আনবেন তা জানান। এই সিস্টেম লস কমাতে যে ধরণের সহযোগিতা চান তা দেয়া হবে। তিনি অনেক জিএম’র সমালোচনা করে বলেন, আপনাদের অনেকেই মিটার ও ট্রান্সফরমার ও তার থাকতেও বলেন নেই। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে সরকারের ওপর।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ধরণের স্যাবটাজ করা হয় অনিয়ম ও দূর্নীতি করার জন্যই। তিনি দূর্নীতি কমাতে প্রিপেইড মিটারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এটা করতে পারলে মিটার টেম্পারিং করা কমবে। দেরিতে বিল দেয়ার প্রবণতা কমে যাবে। তিনি ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, অনেকেই বাজে কাজ করছে। এসব কাজ ঠিকভাবে তদারকি করতে হবে। বাজে পরিকল্পনার জন্যও সিস্টেম লস হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী ২ বছরের মধ্যে পার্বত্য চট্রগ্রামকে বিদ্যুতায়ন করা হবে। তিনি বলেন, বিআরইবি, পিডিবি এবং আরও দু’একটি প্রতিষ্ঠান একে অপরের এলাকায় ঢুকে পড়ছে। এটা এড়াতে জিএস ম্যাপিং করা হবে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, বিআরইবি যে সুনাম অর্জন করেছে-অনিয়ম ও দূর্নীতি যেন এই সুনামকে ম্লান করে দিতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভাপতি মাহবুব আলম শাহীন বলেন, স্থানীয় দালাল, লাইন নির্মাণের নামে আরই, ইন্সপেক্টর ও ঠিকাকাররা দূর্নীতির সাথে জড়িত।
সাতক্ষীরার জিএম রবিন্দ্রনাথ বলেন, ১ থেকে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত লাইফ লাইন বাবদ নেয়া হচ্ছে মাত্র ৬৫ টাকা। এটা ১শ’ টাকায় উন্নিত করা হলে লোকসান ৪শ’ কোটি টাকা কাটিয়ে উঠা সম্ভব।
এ ব্যপারে আরইবি কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন বলেন, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পল্লী বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। কিন্ত আমরা যেভাবে প্রস্তাব করেছি সেভাবে না হওয়ায় আমাদেরকে লোকসানের কবলে পড়তে হয়েছে। তিনটি কারণে এই লোকসান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১ থেকে ৫০ ইউনিটের গ্রাহক সংখ্যা মোট গ্রাহকের ৪২ পার্সেন্ট। আরইবি প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৪ টাকা ৫১ পয়সা দরে ক্রয় করে এসব গ্রাহকের কাছে বিক্রি করছে ৩ টাকা ৫১ পয়সায়। আবার ১ থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারি গ্রাহকের কাছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৪ টাকা ৫১ পয়সা দরে ক্রয় করে বিক্রি করছে ৩ টাকা ৮৭ পয়সায়। সেচ গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৪ টাকা ৫১ পয়সা দরে ক্রয় করে আরইবি বিক্রি করছে ৩ টাকা ৮১ পয়সায়। এতে করে বিআরইবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো লোকসানের মুখে পড়েছে। এই লোকসান কমাতে তিনি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন