শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

এসডিজি অর্জনেও সফল হবো -প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতিসংঘের ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) পূরণে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও কাজ করে যাচ্ছে। এসডিজি অর্জনে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। বাস্তবিক পদক্ষেপ জাতীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। লক্ষ্য অর্জনে সরকারি-বেসরকারি জাতীয় আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নিতে হবে। আশা করি এসডিজি অর্জনেও আমরা অভাবনীয় সফলতা আসবে।
রোববার হোটেল সোনারগাঁওয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন নিয়ে দক্ষিণ এশীয় স্পিকারদের শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সামিটে এসডিজি অর্জনের ওপর দক্ষিণ এশীয় স্পিকারদের শীর্ষ সম্মেলন শেষে ‘ঢাকা ঘোষণা’ গ্রহণ করায় ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অংশগ্রহণকারী স্পিকাররা যে ঘোষণা এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং আমার সরকারের পক্ষ থেকে সেগুলোর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা, অংশীদারিত্ব, সুশাসন, অন্তর্ভুক্তি, অংশগ্রহণ, অধিকার এবং নিরাপত্তা বিষয়ে আপনারা যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন আমি সেগুলোর প্রতি পূর্ণসমর্থন জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) পূরণে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। আমরা অতি-দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি। শহর এবং গ্রামীণ উভয় অঞ্চলেই আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ এবং পয়ঃসেবার মত মৌলিক বিষয়ে অধিকতর সুবিধা নিশ্চিত করেছি।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে এসডিজি বাস্তবায়নে পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় পর্যায়ে এসডিজি লক্ষ্যকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এবং এর কার্যক্রম মনিটর করার জন্য বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে। নারী-পুরুষ, নাগরিক সমাজ, সাম্প্রদায়িক এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, যুবসমাজসহ সবার সঙ্গে অংশীদারিত্ব, আলোচনা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য আমি দক্ষিণ এশিয়ার পার্লামেন্টগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি গড়ে তুলতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় এসডিজির পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য স্পিকার ও সংসদ সদস্যদের প্রয়োজনীয় বাজেট অনুমোদনের উদাত্ত আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, স্টেকহোল্ডারের, সুশীল সমাজ, সম্প্রদায় ও ধর্মীয় নেতা সকলের সাথে অংশীদারিত্বের সংলাপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে এসডিজি অর্জন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বমন্দা সত্বেও গত ৭ বছর ধরে আমাদের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপর ছিল। গত এক দশকে আমাদের রপ্তানি আয় ৩ গুণের বেশি বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৮ গুণেরও কাছাকাছি।
শেখ হাসিনা বলেন, তামাক এখন একটি মহামারী। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আনুমানিক ৩৮৪ মিলিয়ন মানুষ তামাকা ব্যবহার করে। যা বিশ্বের মোট তামাক ব্যবহারকারীদের একটি তৃতীয়াংশ। আমরা তামাকমুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে অনেক প্রদক্ষেপ নিয়েছি। দুটি আলাদা নীতি অনুমোদন করেছি। স্বাস্থ্য সারচার্জ বসিয়ে একটা ফান্ড করার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, উন্নয়ন এবং সুস্বাস্থ্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তামাকজনিত রোগ-বালাই এবং অসংক্রামক রোগের অব্যাহত প্রকোপ হ্রাসে এ অঞ্চলের এবং এর বাইরের সংসদকে এসডিজি-৩-তে বর্ণিত সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে তাদের আরও তৎপর হতে হবে। এসব রোগের ব্যাপকতা আমাদের দেশে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কনভেনশন এফসিটিসির বাস্তবায়ন, এসডিজির ১৭টি উদ্দেশ্য এবং ১৬৯টি লক্ষ্য পূরণই হবে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য পূর্বশর্ত। আমি মনে করি এফসিটিসির বাস্তবায়ন বিশেষভাবে দু’টি সুনির্দিষ্ট কারণে অপরিহার্য্য। প্রথমত এফসিটিসি ছাড়া এসডিজির তৃতীয় উদ্দেশ্য সুস্থ জীবনযাপন এবং সব বয়সের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত অন্যান্য এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তামাক একটি বড় বাধা।
তিনি বলেন, আমার সরকার জনস্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এফসিটিসি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আমরা ২০১৩ সালে ধুমপান এবং তামাক জাতীয় পণ্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন করেছি এবং ২০১৫ সালে সংশ্লিষ্ট বিধি পাশ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কীভাবে অধিকতর সুফল পাওয়া যায়, বর্তমানে আমরা তার প্রতি দৃষ্টি দিয়েছি। ২০১৩ সালের তামাক জাতীয় পণ্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন এবং ২০১৫ সালের বিধি অনুসরণ করে আগামী মার্চ থেকে আমরা তামাকজাত পণ্যের মোড়কে ছবিসম্বলিত সতর্কবার্তা সংযোজন করতে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিবেশি ভারত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কায় এটা ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে চাই। এই ঈপ্সিত লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমরা যে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করছি সেগুলো হচ্ছে-প্রথম পদক্ষেপে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবহার করে একটি তহবিল গঠন করা যা দিয়ে দেশব্যাপী জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে; দ্বিতীয় ধাপে তামাকের ওপর বর্তমান শুল্ক-কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক-নীতি গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, যার উদ্দেশ্য হবে দেশে তামাকজাত পণ্যের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস এবং একইসঙ্গে এ অঞ্চলের সর্বোত্তম ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের শুল্ক আয় বৃদ্ধি করা; সর্বোপরি, আমার সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের জন্য সব ধরণের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রাধিকারের সঙ্গে মিল রেখে আমরা আমাদের আইনগুলোকে এফসিটিসি’র সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবো।
সামিটে ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ভারতের লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, আফগানিস্তানের ওলেসি জিগরার স্পিকার আব্দুল রউফ ইব্রাহিম, ভুটানের সংগুর স্পিকার জিগমে জাংপো, মালদ্বীপের মজলিসের স্পিকার আব্দুল্লাহ মাসেহ মোহামেদ, শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার থিলাঙ্গা সুমাথিপলা প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন