শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মাদক পাচারের নয়া কৌশল

প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : টেকনাফ থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে ঢাকার পথে দুই মহিলা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ওই দুই মহিলাকে আটক করে। তবে প্রাথমিকভাবে তাদের শরীর তল্লাশি করে কোনো প্রকার মাদকের হদিস মেলেনি। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সন্দেহ হলে দুই মহিলাকে ভর্তি করানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এক্সরে করার পর তাদের পেটের মধ্যে ৪০টি পোটলার চিহ্ন পাওয়া যায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা জানান, একেকটি পোটলার মধ্যে ২৫টি করে ইয়াবা ছিল। এরকম ৪০টি করে পোটলা দুই মহিলাকে খাইয়ে দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা ওই দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি না করলে তারা হয়তো মারাই যেতো। কারণ ইয়াবা দিয়ে লাড্ডু বানিয়ে যে পোটলাগুলো তাদেরকে খাইয়ে দেয়া হয়েছিল সেগুলো ছিল প্লাস্টিকের। এগুলো হজম হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। ডাক্তারদের মাধ্যমে দুই মহিলার পেট থেকে ১৮শ’ পিস ইয়াবা উদ্ধারের এই ঘটনা গত মাসের। এভাবেই নিত্য নতুন কৌশলে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকাসহ সারাদেশে। পাচারকারীদের কৌশলের কাছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীও আসহায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইদানীং বাকপ্রতিবন্ধী (বোবাদের) মাধ্যমে পাচার করা হচ্ছে ইয়াবা। এতে ইয়াবাসহ বোবারা ধরা পড়লেও তারা মূল মাদক ব্যবসায়ীর নাম-পরিচয় কিছুই জানাতে পারে না। দিতে পারে না স্বীকারোক্তিমূলক কোনো জবানবন্দি। সীমান্ত পয়েন্টগুলো থেকে মৌসুমী ফল তরমুজ, কাঁঠাল, লাউ, কুমড়ার ভেতর ঢুকিয়ে ভারত থেকে আনা হচ্ছে ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদক। মিষ্টি ও শাড়ির প্যাকেট, গিফট বক্স, দুধের কলসি, পানির বদনায় করেও পাচার হয়ে আসছে বিভিন্ন ধরনের মাদক। সিএনজি অটোরিকশা, বেবিটেক্সি, ছোট যানবাহনের ইঞ্জিনের নিচে, মোটর সাইকেলের সিটের নিচে ও যানবাহনের টুল বক্স, ট্রাকের পাটাতন, ট্রাক ও বাসচালকের সিটের নিচে বাক্স করে পাচার হয়ে আসছে বিভিন্ন ধরণের মাদক। বিভিন্ন পথে তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এ ছাড়া লম্বা বাঁশকে মাঝখানে চিড়ে দুই ফালি করে এর ভেতর ফেনসিডিল, রিকোডেক্স সিরাপ, মদ, হুইস্কি, বিয়ার বোতল ঢুকিয়ে আনা হচ্ছে। অন্যদিকে, একশ্রেণীর হিজড়ারা আনা নেয়া করছে ফেন্সিডিল।
সূত্র জানায়, মাদকদ্রব্যগুলোর মধ্যে ইয়াবা ট্যাবলেট আসে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুট হয়ে। অন্যদিকে, সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, রাজশাহী, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও ফেনীর সীমান্ত পয়েন্টগুলো দিয়ে আসে বড় বড় ফেন্সিডিলের চালান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনেই মাদক ব্যবসায়ীরা যশোর, সাতক্ষীরা, বি-বাড়িয়া, সিলেট, ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, মুন্সীরহাট, বিলোনিয়া, কালীরহাট, পাঠাননগর, রানীরহাট, কুমিলা, সুয়াগাজী, চৌদ্দগ্রামসহ আরও কয়েকটি এলাকার সীমান্ত এলাকা দিয়ে অহরহ ফেনসিডিল, হেরোইন, আফিমসহ নানা রকমের মাদকের চালান নিয়ে আসছে। তবে সবই যে আসছে কৌশলে তা নয়। অভিযোগ রয়েছে, এসব এলাকার কোনো কোনো স্থানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেও মাদক পাচার হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের মংডু থেকে বিভিন্ন ফিশিং বোটের মাধ্যমে টেকনাফের স্থলবন্দর, শাহপরীর দ্বীপ, মাঝিরপাড়া, জালিয়াপাড়া, ট্রানজিট ঘাট, নাইট্যংপাড়া, সাবরাংয়ের লেজিপাড়া ও বার্মাপাড়া পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই দেশে লাখ লাখ পিস ইয়াবা আসছে। মাঝে মধ্যে বিজিরি অভিযানে দু’একদিনের জন্য ইয়াবা আসা বন্ধ থাকে। কিন্তু পরের দিন যখনই আসা শুরু হয় তখন এক সাথে বড় বড় চালান ঢুকে পড়ে দেশে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, মাদক পাচারকারীরা নিজেদের আড়াল করতে সব সময়ই নিত্য নতুন কৌশল ব্যবহার করে থাকে। শুধু কৌশলই নয়, নতুন নতুন মানুষও যুক্ত হচ্ছে পাচারকারীদের দলে। আমরা সেগুলো মনিটরিং করি। কখনও সফলতা আসে, কখনওবা আসে না। তিনি বলেন, এখন আমরা মাদকের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। বাণিজ্যমেলায় আমরা একটা মিনি প্যাভেলিয়ন করেছি। মেলায় আসা ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই এ ব্যবস্থ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এর বাইরে আমাদের মাদক ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়িদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে অহরহ। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই তারা আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে জামিনে বেরিয়ে আবারও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন