গণতন্ত্র খুলে দিন জঙ্গিবাদ পরাজিত হবেই
স্টাফ রিপোর্টার : সাঁড়াশি অভিযানের পর বিএনপিকে দমনে সরকার ফের ‘নতুন ষড়যন্ত্র’ করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
গতকাল শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আজকে বিরোধী দলকে দমন করার মধ্য দিয়ে যে পন্থা তারা (সরকার) নিয়েছেন- সাঁড়াশি অভিযান, এতে সাধারণ জনগণকে তারা আক্রমণ করছেন, তাদেরকে প্রতিপক্ষ হিসেবে নিয়েছেন। ১৩ হাজারের আটকের মধ্যে সন্দেভাজন জঙ্গি মাত্র ১৭৯ জন। আবারো নাকী শুরু করতে যাচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, কাদেরকে দমন করতে চাচ্ছেন? বিরোধী দল বিএনপিকে। এতো নির্যাতন ৮ বছর ধরে তারা চালিয়েছেন, এই নির্যাতন করে বিএনপিকে আপনারা দমন করতে পারেননি, বিএনপির আদর্শকে দমন করতে পারেননি। সেজন্য আজকে আবার নতুন করে দমন করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন।
সরকারের এই দমননীতির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দলের মহাসচিব দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, কোনো লাভ হবে না। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না, বিএনপিকে এভাবে দমন করা যাবে না। এই ভয়ংকর পথ থেকে সরে আসুন। এই আগুন নিয়ে খেলবেন না। বার বার বলছি, ফিরে আসুন। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে শুরু করুন। রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করতে দিন, গণতান্ত্রিক ক্ষেত্রকে প্রসারিত করুন, এমনিতেই সংকুচিত করে ফেলেছেন। গণতন্ত্রের জানালা-দরজা খুলে দেন, জঙ্গিবাদ এমনিতেই পরাজিত হবে, গণতন্ত্রের কাছে পরাজিত হবে।
নয়া পল্টনে দলের মহানগর কার্যালয়ে মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে জিয়া পরিষদের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি মরহুম অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞার স্মরণে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৩ জুন রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৩ বছর।
বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা হচ্ছে শুধুমাত্র একটা গণতন্ত্রের মুখোশ আছে, নামেমাত্র গণতন্ত্রের কথা বলা হয়, আসলে পুরোপুরি একদলীয় শাসন চলছে। চতুর্দিকে তাকিয়ে দেখুন, পত্র-পত্রিকায় সবখানে। এমনকি সরকারি কর্মকর্তার দিকে, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে নিরপেক্ষ থাকা, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। তারা সেটা বেমালুম ভুলে গিয়ে অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের যে আদর্শকে নিজেদের আদর্শ মনে সেটাকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ মনে করে কাজ করছেন। দেখা যাচ্ছে- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সব জায়গায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। যারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে না, তাদেরকে তারা (ক্ষমতাসীনরা) সরিয়ে দিচ্ছেন।
দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করে তিনি বলেন, এই জঙ্গিবাদের উত্থান বহু আগের থেকে। এই জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের চরম পন্থা- এগুলোর উৎপাদন এই সরকারি দলই করেছিলো। সেই ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত বিরোধী দলকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়ার জন্য তারা (আওয়ামী লীগ) সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছিলো। তারা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রক্ষীবাহিনী তৈরি করেছিলো, যে বাহিনী দিয়ে তারা দেশের হাজার হাজার বিরোধী মতাবলম্বী তরুণ-কিশোর-যুবকদের হত্যা করেছে। যারাই সেদিন বিরোধিতা করেছে, তাদের হত্যা করেছে, আজকের মতোই মামলা দিয়েছে অথবা পঙ্গু করে দিয়েছে। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে এবারও একই কাজ আওয়ামী লীগ শুরু করেছে। এবার সংবিধান পরিবর্তন করে নিয়ে, আইন-কানুনকে সামনে নিয়ে তারা আবার একদলীয় শাসনকে পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করছে।
ভিন্নমত পোষণকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের দমননীতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে শুধু বিএনপি নয়, ২০ দলীয় জোট নয়, ভিন্নমত পোষণকারী যেমন মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপি করেন না, তাকে আজ ১৩ মাস কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। ইটিভির আবদুস সালাম, মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আবদুল মান্নানসহ অনেকেই কারাগারে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকিয়ে রাখা হয়েছে।
ইতালীয় নাগরিক তাবেল্লা সীজার হত্যা মামলায় বিএনপির মহানগর নেতা এম এ কাইয়ুমকে অভিযোগপত্র দেয়ার উদ্যোগ চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, হত্যাকা-ের পরপরই বলা হলো এর সঙ্গে বিএনপি জড়িত। যার সঙ্গে বাস্তবতা ও সত্যের কোনো মিল নেই। কাইয়ুম সাহেব ও তার ভাইকে আসামী করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মূল বিষয়টাকে দূরে সরিয়ে দেয়া। যারা অপরাধী তাদেরকে যেন খুঁজে পাওয়া না যায়, সেজন্য এই অভিযোগ পত্র দেয়া হচ্ছে।
মরহুম অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তার জীবন-কর্মের ওপর স্মরণিকা প্রকাশ করতে জিয়া পরিষদকে পরামর্শ দেন বিএনপির মহাসচিব। সংগঠনের চেয়ারম্যান কবির মুরাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, জিয়া পরিষদের সহ সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, এডভোকেট মাহফুজুর রহমান ফরহাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন