বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দুর্ভোগের শেষ কোথায়?

বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কে বিআরটি প্রকল্প

মো. দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বিআরটি প্রকল্পে ধীরগতি, অব্যবস্থাপনা ও একাধিকবার সময় এবং প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়েও বলা যাচ্ছে না কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে। জনমনে এখন একটাই প্রশ্ন এ দুর্ভোগের শেষ কোথায়?
এ কাজের ধীর গতির কারণে জনদুর্ভোগ এখন চরমে পৌঁছেছে। সময় ও প্রকল্প ব্যয় বাড়লেও বাড়েনি কাজের গতি। গণপরিবহনে সোয়া ১ ঘণ্টার রাস্তা যেতে সময় লাগছে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। কেন এমনটি হচ্ছে তা বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এই কাজের জন্য আনা ইট বালি এবং অন্য সরঞ্জাম রাস্তার ওপরে রেখেই চলছে ধীর গতির কাজ। যে কারণে যানজট তো প্রতিদিন লেগেই আছে তার সাথে যোগ হয়েছে ধুলাবালি। এতে করে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ড্রেনেজের যে কাজ চলছে তাতে প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে মশা মাছি।

প্রতিদিন চাকরি, লেখাপড়া, ব্যবসায়িক কিংবা অন্য প্রয়োজনে হাজার হাজার মানুষ গাজীপুর থেকে ঢাকা কিংবা ঢাকা থেকে গাজীপুর যাতায়াত করেন। গাজীপুর জেলা শহর থেকে রাজধানীর মতিঝিলের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটারের মতো। সাধারণ পরিবহন বিভিন্ন জায়গায় যাত্রা বিরতি করেও এই পথ পাড়ি দিতে ১ ঘণ্টা কিংবা সোয়া ঘণ্টা সময় লাগার কথা কিন্তু সেখানে সড়ক পথে গণপরিবহনে এখন সময় লাগে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। দীর্ঘ যানজটে পড়লে এ সময় আরো বেশি লাগে।

গাজীপুর পরিবহনের চালক তাহাজ উদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বিআরটি প্রকল্পের কাজে ধীরগতির কারণে ভোর ৫টায় মতিঝিল থেকে গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা আসতেই সময় লাগে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। ভোগড়া বাইপাস মোড়ে মহাসড়কের পাশে ও চৌরাস্তায় ড্রেনের কাজের কারণে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। এই যানজটের সাথে এখন যুক্ত হয়েছে ধুলাবালি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণে ইতোমধ্যে কয়েক দফায় বেড়েছে প্রকল্প ব্যয়ও। শুরুতে এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ২ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে আরও ২ হাজার ২২৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ৪ হাজার ২৬৫ কোটি করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর প্রকল্পের ব্যয় আরো ২ বছর বাড়ানো হয়। সে অনুযায়ী ২০২০ সালে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কাজের ধীরগতি দেখে অনেকেই মন্তব্য করেছেন এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিআরটি সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৩৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এতেই বুঝা যায় ২০২০ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ আবারো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০১২ সালের ২০ নভেম্বর বিআরটি প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয়। এরপর বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কে বাসের জন্য বিশেষায়িত লেনের নকশা ও দরপত্র আহবানেই পেরিয়ে যায় ৫ বছর। ২০১৭ সালের ১৩ই এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বিআরটি লেন নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজ। সচেতন মহল মনে করছে উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে যেভাবে জনদুর্ভোগ বেড়েছে তা অসহনীয় হয়ে পড়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেভাবে একাধিকবার সময় ও প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়েছে এতে করে প্রকল্পটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশে সম্ভাব্য দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে এ বছরের ২৪ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতি ও বিআরটি কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে যৌথ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওই সভায় সিটি মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিআরটি প্রকল্পের যে কাজ ২০১৭ সালে শুরু হয়েছে গত দুই বছরেও বিআরটি কর্তৃপক্ষ এক কিলোমিটার সড়কও দৃশ্যমান করতে পারেনি। জনগণের মধ্যে এ প্রকল্পের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি প্রকল্পের ২০ কিলোমিটার সড়কের অন্তত এক কিলোমিটার সড়ক তৈরি করে জনগণের কাছে তা দৃশ্যমান করার জন্য বিআরটি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান।

এ সময় বিআরটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সানাউল হক জানান, এক বছরে বিআরটি এর কাজ ২০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্পের দুটি প্যাকেজের কাজ বিদেশি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান করছে। তারা এ দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে কাজ করে অভ্যস্ত নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন